করোনার পর এবার এইচএমপিভি। একযোগে ভারতের তিন রাজ্যে হদিশ মিলল এইচএমপিভি আক্রান্ত শিশুদের। কলকাতায় পাঁচ মাসের এক শিশুর দেহে এই ভাইরাসের হদিশ মিলেছে। এছাড়া গুজরাতের আহমেদাবাদের এক শিশু এবং কর্নাটকের বেঙ্গালুরু দুই শিশুর শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি মিলেছে। প্রত্যেকের শরীরের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকরা পরীক্ষার নির্দেশ দেন। সেই রিপোর্টই পজিটিভ এসেছে।
বেঙ্গালুরুর ব্যাপটিস্ট হাসপাতালে ভর্তি থাকা দুই শিশুর মধ্যে একজন ইতিমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠছে। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে তিন মাসের ওই শিশুকন্যাকে। তবে আট মাস বয়সী শিশুপুত্রটি এখনও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে রয়েছে। আহমেদাবাদে দু’মাসের একটি শিশুর শরীরে এই ভাইরাস মিলেছে। সে একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এবং তার অবস্থা স্থিতিশীল। রাজস্থানের দুঙ্গারপুরের বাসিন্দা শিশুটির পরিবার চিকিৎসার জন্য আহমেদাবাদে পৌঁছেছে।
কলকাতার বাইপাসের ধারে একট বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল এক শিশু। সম্প্রতি মুম্বই থেকে বিমানে কলকাতায় এসেছিল ওই শিশু ও তার পরিবার। তারপরেই শরীর খারাপ হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল বাচ্চাটিকে। সেখানেই নমুনা পরীক্ষা হদিশ পাওয়া যায় এইচএমপিভির। ১০-১২ দিনের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা হয় শিশুটিকে। পরবর্তীতে বাচ্চাটিকে আবার মুম্বইতে নিয়ে যাওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক অবশ্য সাফ জানিয়ে দিয়েছে, এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শিশুদের দেহে এইচএমপিভি মিললেও সেটি চিনা ভ্যারিয়েন্টের নয়। আক্রান্ত শিশুরাও সম্প্রতি বিদেশে যায়নি। ভারত-সহ বিশ্বের নানা দেশেই রয়েছে এইচএমপিভি। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগতে থাকা অনেকের শরীরেই এই ভাইরাস মিলেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এইচএমপিভির উপসর্গর মধ্যেই রয়েছে – নাক দিয়ে জল পড়া, বুকে কফ জমা, শ্বাসকষ্ট, গলা ব্যথা জ্বর, গায়ে র্যাশ বেরনো। মূলত শিশু ও প্রবীণ ব্যক্তিদেরই এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এই ভাইরাসে প্রাণহানির আশঙ্কা কম। তবে করোনার মতোই খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এই ভাইরাস। এইচএমপিভি নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
দেশবাসীকে আতঙ্কিত না হয়ে সতর্ক থাকার এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার আবেদন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। শনিবার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের যৌথ পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীর এক বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয়। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য পরিষেবার ডিরেক্টরেট জেনারেল, হু-র প্রতিনিধি, দিল্লি এইমস, বিপর্যয় মোকাবিলা সেল এবং ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ-এর বিশেষজ্ঞরা।
চিনের নানা প্রান্তে দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে এইচএমপিভি ভাইরাস। বেশ কিছু মানুষের মৃত্যুও ঘটেছে। প্রতিটি হাসপাতালে লম্বা লাইন পড়েছে অসুস্থদের। চিনের সংক্রমণ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, চিনের পরিস্থিতি নিয়ে নজর রাখছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-র থেকে পাওয়া তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরিস্থিতি মূল্যায়ন করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে ‘হু’-কে আরও তথ্য সরবরাহের অনুরোধ করা হয়েছে।