৪ দিন পর কাদার নিচ থেকে জিবন্ত উদ্ধার ৪

মাইসুর, ২ আগস্ট– ওয়েনাডে ভূমিধসে মৃ্তের সংখ্যা ৩০০ পার করেছে। এখনও জারি তল্লাশিকাজ। যদিও কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন দাবি করেছিলেন যে ধ্বংসস্তূপের নীচে হয়তো আর কেউ বেঁচে নেই। তবে আজ, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর দাবি কার্যত ভুল প্রমাণিত করে কাদার নীচ থেকে জীবন্ত অবস্থায় ৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। ওয়েনাডের পদভেট্টি কুন্নু থেকে দুই মহিলা ও দুই পুরুষকে উদ্ধার করে ভারতীয় সেনাবাহিনী। বিধ্বস্ত একটি বাড়ি থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা একই পরিবারের ওই চার জনকে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওয়েনাডে এখনও খোঁজ মিলছে না ২০০-রও বেশি বাসিন্দার। মনে করা হচ্ছে, ভেঙে পড়া বাড়ি-ঘর ও কাদামাটির নীচেই চাপা পড়ে রয়েছেন তারা। রাজ্য প্রশাসন সূত্রে খবর, যে চার জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে তাদের সেনার হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেপ্পাড়ির পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, যে চার জনকে উদ্ধার করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে এক জনকে তিনি চেনেন। তাঁর নাম জনি। ওই এলাকায় তাঁর জমিজমাও রয়েছে। বাকি তিন জন জনির পরিবারের সদস্য বলেই মনে করা হচ্ছে। ধসের পর উদ্ধার হওয়া বাসিন্দাদের পারাভেট্টিকুন্নু থেকে ত্রাণশিবিরে পাঠানো হয়েছিল আগেই। শুক্রবার থেকে পারাভেট্টিকুন্নুর ভগ্নপ্রায় বাড়িগুলিতে তল্লাশি চালানোর সময়েই এই চার জনকে দেখতে পান উদ্ধারকারীরা। চূড়ালমালার এক প্রশাসনিক আধিকারিক জানিয়েছেন, মনে করা হচ্ছে, ধসের সময় উঁচু কোনও জায়গায় সরে গিয়েছিলেন জনি ও তাঁর পরিবার। ফলে বেঁচে গিয়েছেন তাঁরা।

নৌসেনার সঙ্গে মিলিতভাবে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে উপকূলরক্ষা বাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। উদ্ধারকাজে নেমেছে সেনা এবং বায়ুসেনাও। কিন্তু লাগাতার বৃষ্টি এবং ধসের কারণে ওয়ানড়েরএকাধিক সেতু এবং রাস্তা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ফলে বিপদগ্রস্ত এলাকাগুলোতে পৌঁছতেই পারছেন না উদ্ধারকারীরা।এরই মধ্যে একটু স্বস্তির খবর মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বেইলি ব্রিজ তৈরি করেছে ভারতীয় সেনা। তবে পর্যাপ্ত সামগ্রী ও ভারী যন্ত্রপাতির অভাবে উদ্ধারকাজে বাধা তৈরি হচ্ছে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ও সেনাবাহিনী। যে সেনাবাহিনী এখানে সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে উদ্ধারকার্য চালাচ্ছে তাদের মধ্যেই রয়েছেন একমাত্র মহিলা মেজর সীতা সোলকে। ধসপীড়িত চুরালমালা ও মুন্ডাক্কাইয়ের মধ্যে বেইলি ব্রিজ গড়ে তোলা ইঞ্জিনিয়ারিং দলের একমাত্র মহিলা সদস্য সীতা।


উদ্ধারকাজে সীতার অবদান একবাক্যে স্বীকার করে এখানে থাকা সেনা থেকে শুরু করে এনডিআরেফও। মহারাষ্ট্রের এই মহিলা মেজর সীতার এর আগেও দ্রুত বেইলি ব্রিজের মতো উদ্ধারকারী সেতু তৈরির বহু অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেনাবাহিনীর উদ্ধারকারী দলের কেরল ও কর্ণাটক সাব এলাকার জিওসি মেজর জেনারেল ভিটি ম্যাথু বেঙ্গালুরু থেকে চুরালমালা গিয়ে এই ইঞ্জিনিয়ারিং টিমের নেতৃত্ব দেন। তাঁকে সহায়তা করেন স্থানীয় ভূমিপুত্র আলাপ্পুঝার বাসিন্দা মেজর আশিস মোহন। বেইলি ব্রিজটি তৈরি করেছে মাদ্রাজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ। কিন্তু মহিলা বলতে একাই ছিলেন সীতা শেলকে।

ওয়েনাডের মত বিধ্বস্ত এলাকায় প্রতিকূল আবহাওয়াও আরেক শত্রু উদ্ধারকার্যে। সেখানে একটানা লড়াই করে সীতা ১৯০ ফুট দীর্ঘ বেইলি ব্রিজ নির্মাণে অসামান্য কাজ করেছেন। সীতার সঙ্গে কাজ করা জওয়ান ও ইঞ্জিনিয়ারদের সাফল্যেই চুরালমালা ও মুন্ডেক্কাইয়ের মধ্যে ত্রাণ ও খাবার নিয়ে যাওয়া ট্রাক চলাচল করতে পারছে। কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমে সীতা সহ সেনাবাহিনীর কর্মীরা যে কাজ করেছেন তাকে কুর্নিশ করছেন সকলেই।

সীতার জন্ম মহারাষ্ট্রের আহমেদনগর জেলার পারনের তালুকের গড়িলগাও নামে এক অজ পাড়াগাঁয়ে। ছোট্ট সেই গ্রামে মাত্র ৬০০ মানুষের বাস। চার ভাইবোনের একজন সীতা। সীতার বাবা একজন আইনজীবী। আহমেদনগরের একটি গ্রামীণ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন সীতা। তাঁর প্রাথমিক ইচ্ছা ছিল আইপিএস অফিসার হওয়া। কিন্তু, যোগ্য প্রশিক্ষণের অভাবে তিনি সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার লক্ষ্য তৈরি করেন। কিন্তু, এসএসবি-র পরীক্ষায় পরপর দুবার পাশ করতে না পরেও তৃতীয়বার সফলভাবে উত্তীর্ণ হন এবং ২০১২ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন।

জানিয়ে রাখি, গতকালই ওয়েনাডে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি ও প্রিয়ঙ্কা গান্ধি । আজ ওয়েনাড যাচ্ছে তৃণমূলের প্রতিনিধি দল।