পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের ১৫টি রাজ্যের ৪৮টি বিধানসভা আসন এবং ২টি লোকসভা আসনে উপনির্বাচন হবে আগামী ১৩ নভেম্বর। এই তালিকায় রয়েছে মেঘালয়ের ৫৬-গামবেগ্রে বিধানসভা কেন্দ্র। সম্প্রতি উত্তর-পূর্বের এই পাহাড়ি রাজ্য মেঘালয়ের সংসদীয় রাজনীতিতে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে মেঘালয় বিধানসভায় বর্তমানে প্রধান বিরোধী দল তৃণমূলই, বিরোধী দলনেতা ডঃ মুকুল সাংমা। এই পরিস্থিতিতে গামবেগ্রের মাটিতে তৃণমূলের পতাকা ওড়াতে তৎপর দল। তাই বৃহস্পতিবার মেঘালয়ের গামবেগ্রের জন্য ৩৬ জন তারকা প্রচারকের নামের তালিকা জাতীয় এবং মেঘালয়ের রাজ্যে নির্বাচন কমিশনে জমা দিল তৃণমূল।
উল্লেখ্য, এই তারকা প্রচারকের তালিকার শীর্ষে রয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তারপরেই রয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এবং অভিষেকের শিডিউল এখনও তৈরি হয়নি। এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সাধিয়ারানি এম সাংমার সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারের উদ্দেশ্যে মেঘালয়ে পাড়ি দেবেন মমতা বন্দোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়। উল্লেখ্য, অনেক আগেই মেঘালয়ের রাজনীতিতে পা রেখেছিল ঘাসফুল শিবির। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল সেনাপতি অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের তৎপরতায় মেঘালয়ে ২০২৩ সালের নির্বাচনে ভালো ফলও করেছিল তৃণমূল। বর্তমানে ৬০ সদস্যের মেঘালয় বিধানসভায় তৃণমূলের ৫ জন বিধায়ক রয়েছেন। অন্যদিকে, ২০২৩ সালের বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল। সুতরাং, মেঘালয়ের বুকে তৃণমূলের ঘরে সুদিন আসার পশ্চাতে যে মুকুলের ভূমিকা অনস্বীকার্য, তা পৃথক ভাবে বলার অপেক্ষা রাখে না। মেঘালয়ের মাত্র একটি কেন্দ্র গামবেগ্রে দখলে মরিয়া ঘাসফুল শিবির। তাই ৩৬ জন তারকা প্রচারক একে একে সাধিয়ারানি এম সাংমার সমর্থনে ঝড় তুলবেন গামবেগ্রের ভূমিতে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরে ২৯ অগস্ট মুকুল সাংমা মেঘালয় বিধানসভার বিরোধী দলনেতার মর্যাদা পেয়েছিলেন। ঠিক তার পরের দিন অর্থাৎ ৩০ অগস্ট নির্বাচন কমিশন কর্তৃক সংশ্লিষ্ট উপনির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণার পূর্বেই গামবেগ্রের প্রার্থী ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। জানা গিয়েছে, তৃণমূল প্রার্থী সাধিয়ারানি এম সাংমা সম্পর্কে মুকুলের ভ্রাতৃবধূ। ২০২৩ সালের মেঘালয় বিধানসভা ভোটে গামবেগ্রে কেন্দ্রে কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন সালেং এ সাংমা। ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে সেই সালেংকেই তুরা লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করেন সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীরা। তুরা থেকে জিতে লোকসভার সাংসদ হয়েছেন সালেং। তাঁর জন্য গামবেগ্রে আপাতত বিধায়ক-শূন্য। সেই কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনিবার্য জেনেই আগেভাগে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল তৃণমূল। উল্লেখ্য, মেঘালয়ের মাত্র একটি কেন্দ্রে ভোট হলেও লড়াইটা চতুর্মুখী।
শাসকদল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির তরফে প্রার্থী হিসাবে ঘোষিত হয়েছেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমার স্ত্রী মেহতাব চান্দি সাংমা। এই কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী করেছে জিংজাং এম মারাককে এবং বিজেপি প্রার্থী করেছেন বার্নার্ড এন মারাককে। ভোটযুদ্ধ কঠিন হলেও প্রস্তুত তৃণমূল কারণ অগস্ট মাস থেকেই এই কেন্দ্র জয়ের অভিপ্রায়ে রাজনৈতিক গুটি সাজিয়েছেন মমতা বন্দোপাধ্যায় খোদ। চলতি বছরের লোকসভা নির্বাচনে বাংলা জুড়ে মুখ্যমন্ত্রীর লাগাতার প্রচারকার্য এবং অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের জনগর্জন সভা তৃণমূলের অন্দরে তুরুপের তাস হিসাবেই কাজ করেছিল। পূর্ব অভিজ্ঞতাকে সঙ্গী করে মেঘালয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও সেই ‘ফর্মুলা’তেই চলতে চাইছে তৃণমূল। প্রসঙ্গত, চোখের অস্ত্রোপচারের কারণে বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন অভিষেক। সোমবার রাতে নিজের এক্স হ্যান্ডলে অভিষেক জানিয়েছেন, অস্ত্রোপচার-পরবর্তী কিছু নির্দেশিকা ও সতর্কতা অনুসরণ করতে হবে তাঁকে। তবে আমেরিকা থেকে দেশে কবে ফিরছেন সাংসদ অভিষেক, তার নির্দিষ্ট কিছু দিনক্ষণ জানাননি। আর এক মাসও বাকি নেই উপনির্বাচনের। তৃণমূল সূত্রে খবর, অভিষেক সম্পূর্ণ ভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেই প্রচার কার্যে রাজনৈতিক ময়দানে নামবেন তারকা প্রচারকরা।