নিজস্ব সংবাদদাতা, কল্লাকুরিচি, ২০ জুন: বেশ কয়েক বছর আগে অভিশপ্ত বিষমদ কাণ্ডে তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল বাংলা। অবশেষে রাজ্য প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপে সেই মৃত্যু মিছিল রোধ করা সম্ভব হয়েছিল। এবার সেই বিষমদ ছায়া পড়তে চলেছে সুদূর দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ুতে। সেখানে বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যু মিছিল অব্যাহত। সর্বশেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, তামিলনাড়ুতে কমপক্ষে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।
তবে এখানেই এই মৃত্যু মিছিল থেমে থাকার সম্ভাবনা নেই। কারণ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও বহু মাদকাসক্ত। অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অসুস্থদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে পুদুচেরি ও সালেমের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। মৃত ও অসুস্থদের মধ্যে বেশিরভাগই করুণাপুরম এলাকার বাসিন্দা।
গতকাল বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে এ রাজ্যের কল্লাকুরিচি জেলাতে। বিষমদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বহু মানুষ। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর চিকিৎসকরা ২৫ জনকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও নয়জনের মৃত্যু হয়। বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৬০ জন মাদকাসক্ত। আজ বৃহস্পতিবার তামিলনাড়ু প্রশাসনের তরফে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই শ্রমিক বলে জানা গিয়েছে, যাঁরা গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৮ জুন রাতে বিষ মদ খেয়েছিলেন এবং বুধবার (১৯ জুন) সকালে দৃষ্টিশক্তি হারানো, বমি ও মাথাব্যথার মতো লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।
এই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে তামিল প্রশাসন। ঘটনায় বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়েছে তামিলনাড়ুর স্টালিন প্রশাসন। মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এই ঘটনায় গভীর শোকপ্রকাশ করেছেন। এছাড়াও শোকপ্রকাশ করেছেন তামিলনাড়ুর রাজ্যপাল আর এন রবি। বিষমদের কারণে প্রাণহানি রুখতে সরকারকে কড়া নজরদারি চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। স্টালিন বলেন, ‘গোটা ঘটনায় হতবাক। বিষ মদ কাণ্ডে যারা জড়িত, প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে অভিযুক্ত আধিকারিকদের বিরুদ্ধেও নেওয়া হবে ব্যবস্থা।’ তিনি জনসাধারণকে সতর্ক বার্তা দিয়ে বলেন, ‘জনসাধারণকে এই বিষয়ে সজাগ হতে হবে। এই ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হবে। সমাজকে বিপথে চালিত করে এমন মানুষকে কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।’
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিন এই ঘটনায় মৃতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন। এছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অসুস্থদের জন্য ৫০ হাজার টাকা করে সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
স্টালিন তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। স্টালিন লেখেন, ‘এই ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। কল্লাকুরিচিতে বিষমদ খেয়ে যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রয়েছে। যারা এই ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের প্রত্যেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি যে আধিকারিকরা এই কাণ্ড রুখতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। এই ঘটনা খুবই দুঃখজনক।’
রাজ্যপাল আর এন রবি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন,’কল্লাকুড়িছিতে বিষমদ খেয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আমি উদ্বিগ্ন। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার গভীর সমবেদনা রয়েছে। যাঁদের চিকিৎসা চলছে আমি তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। প্রায়শই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ধরনের ঘটনার খবর মেলে। যা খুবই উদ্বেগের বিষয়।’
এদিকে বিরোধী দল এআইএডিএমকে-র সাধারণ সম্পাদক তথা তামিলনাড়ু বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এডাপ্পাদি কে পালানিস্বামী এই বিষমদ কাণ্ডের জেরে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্টালিনের পদত্যাগ দাবি করেছেন। এআইএডিএমকে ইতিমধ্যে মাদ্রাজ হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেছে। তারা এই কাল্লাকুরুচি বিষমদ কাণ্ডের মর্মান্তিক ঘটনায় দ্রুত মামলাটি আদালতের তালিকাভুক্ত করার আবেদন জানিয়েছে। সেই মতো মাদ্রাজ হাইকোর্ট মামলাটি তালিকাভুক্ত করেছে। ২১ জুন, শুক্রবার এই মামলার শুনানি। অন্যদিকে, এই ঘটনায় আন্দোলনে নেমেছে তামিলনাড়ুর রাজ্য বিজেপিও। এখানকার বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি কে আন্নামালাই বিষয়টি নিয়ে ২২ জুন রাজ্যব্যাপী আন্দোলনের ঘোষণা করেছেন।