জরুরি অবস্থা গণতন্ত্রের এক অন্ধকারময় অধ্যায় : মোদি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Photo: IANS/LSTV)

লােকসভার অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ জ্ঞাপন বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালের জরুরি অবস্থাকে দেশের ইতিহাসে এক প্রবল বজ্রপাতের সঙ্গে তুলনা করেছেন। মোদি তাঁর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন, সংসদে উপস্থিত বেশকিছু সদস্যকে আমি মনে করিয়ে দিতে চাই ২৫ জুন কি ঘটেছিল, কারণ তাঁদের হয়ত সেকথা আজ স্মরণে নেই।

“২৫ জুন রাতেই দেশের অন্তরাত্মা নিষ্পেষিত হয়েছিল। সংবিধানের পৃষ্ঠা থেকে গণতন্ত্র উঠে আসেনি, ভারতের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা শত শত বর্ষজুড়ে আমাদের আত্মা হিসেবে বিরাজ করেছে, যা ওই দিন রাত্রে নিষ্পেষিত হয়েছিল।” জরুরি অবস্থার সময়ে দেশের সংবিধানের মৌলিকও ‘অবদমিত’ হয়েছে।

আমরা সেই অন্ধকারময় দিনগুলির কথা ভুলতে পারি না। দেশের সংবাদমাধ্যমগুলির কোনও স্বাধীনতা ছিল না। দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বকারী ব্যক্তিদের হাজতে পােরা হয়েছিল, সারা দেশকেই একটা জেলে পরিণত করা হয়, যাতে কোনও ব্যক্তিই আর বিরােধিতা করতে না পারে।


আমরা ভারতের গণতান্ত্রিক নীতির স্বপক্ষে রুখে দাঁড়ানাের আহ্বান জানাই। আমি সহকর্মীদের জানাতে চাই, ভারতের মানুষ কখনই সেই সময়ের অন্ধকারময় দিনগুলির কথা ভুলতে পারবেন না। প্রকৃতপক্ষে ওই অন্ধকারময় পথে আর না এগােনাের জন্য আমাদের সকলকেই সেই দিনটির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার ক্ষণ হিসেবে পালন করতে হবে।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৯৭৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সময়ে জরুরি অবস্থা ঘােষণার বিরুদ্ধে যে সকল ‘মহান রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ সােচ্চার হয়েছিলেন তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, একনায়কতন্ত্রকে পরাস্ত করে গণতন্ত্রই জয়লাভ করে।

সােশ্যাল মিডিয়ায় টুইট করে নির্ভীকভাবে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে সােচ্চার হয়েছিলেন সেই সব মহান ব্যক্তিদের তিনি শ্রদ্ধা জানান মোদি। ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্য সফলভাবেই একনায়কতান্ত্রিক মানসিকতার বিরুদ্ধে জয়লাভ করে।

মোদি একটি ভিডিও সহ টুইট করেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন এক তমসাচ্ছন্ন রাত্রি, যা গণতন্ত্রপ্রিয় কোনও মানুষই পছন্দ করেনি এবং তা একজন ভারতীয় হিসেবে ভুলতেও পারেন না।

তিনি বলেন, দেশের মানুষ কংগ্রেসের শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়েই ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ভারতীয় জনতা পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে এসেছে। সাম্প্রতিক লােকসভা নির্বাচনের পর লােকসভায় তার প্রথম ভাষণে। ১৯৭৫ সালে জরুরি অবস্থা জারি থেকে নেহরু গান্ধি পরিবারের স্বজনপােষণ নিয়ে কঠোর সমালােচনার অবতারণা করেন।

সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেস দল মাত্র ৫২ আসনে জয়লাভ করার কথা উল্লেখ করে নরেন্দ্র মোদি বলেন, কংগ্রেসের নেতারা এতটাই দাম্ভিক হয়ে পড়েছিলেন যে তাঁরা আর মাটি দেখতে পেতেন না। আমি আপনাদের আরও উঁচুতে উঠতে দেখতে চাই। আপনারা এতটাই উঁচুতে উঠেছেন যে মাটি থেকে আপনাদের শিকড় উপড়ে দিয়েছে মানুষ। আমাদের লক্ষ্য হল মাটির কাছাকাছি মানুষের সঙ্গে থাকা এবং তাদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।

সংসদে সােনিয়া গান্ধি ও রাহুল গান্ধির উপস্থিতিতে মোদি তাঁর ভাষণে প্রশ্ন তােলেন, ২০০৪ থেকে ২০১৪ সময়ে ক্ষমতাসীন সরকার কখনও কি অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারের কাজের কোনও প্রশংসা করেছে? তারা কি কখনও নরসিংহজি পরিচালিত সরকারের ভাল কাজের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। এমনকী তারা মনমােহন সিংয়ের কোনও অবদান নিয়েই লােকসভা বিতর্কের সময়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি। তাদের পরিবারের বাইরে কাউকেই তারা স্বীকৃতি দিতে চায় না।

কয়েকজন মনে করেন দেশের উন্নয়নে মাত্র কয়েকজনেরই অবদান রয়েছে। অন্যদের অবজ্ঞা করে কেবল কিছু পছন্দের মানুষের নামই তারা শুনতে চায়। আমরা ভাবি অন্যভাবে। আমরা মনে করি দেশের উন্নয়নে দেশের সকল মানুষের সমান অংশীদারিত্ব রয়েছে। বিজেপি সরকারের জনকল্যাণমূলক কর্মসুচির সমালােচনা করার প্রতিবাদে তিনি বলেন, মানুষ কংগ্রেস শাসনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ২০১৪ সালে বিজেপিকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করে।

২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের সময়ে আমরা মানুষের কাছে তেমনভাবে পরিচিত ছিলাম না। কিন্তু মানুষ কংগ্রেসের প্রতি এতটাই বিরূপ হয়ে উঠেছিল যে তাদের যেকোনও বিকল্পের দরকার ছিল এবং মানুষ আমাদের ক্ষমতায় নিয়ে আসে। পাঁচ বছর বিজেপি শাসনের পর মানুষ আবারও বিজেপিকে ক্ষমতায় এনেছে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায়। ২০১৯ এর সাধারণ নির্বাচনে বিগত পাঁচ বছরের অগ্নিপরীক্ষার পরই মানুষ বিজেপির ওপর আস্থা জ্ঞাপন করেছে।

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ইন্দিরা জমানার কালাে দিন। এর থেকে বেশি কিছু আর বােঝাতে চায় না বিজেপি। সকাল থেকেই বিজেপির বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতারা এই নিয়ে সােশ্যাল মিডিয়া সরব হয়েছেন। রাজনাথ সিং তাে টুইটে লিখেই ফেলেছেন ইতিহাসের কালাে অধ্যায়।

জরুরি অবস্থার ৪৪ বছর পূর্তিতে প্রতিবাদীদের স্যালুট জানিয়ে ভিডিও বার্তা মোদির। আর মোদি লিখলেন সেদিন গণতন্ত্রের কণ্ঠ রােধ করা হয়েছিল। সেদিন যারা প্রতিবাদী হয়ে লড়েছিলেন তাদের স্যালুট জানাই।

মঙ্গলবার সকালে নিজের একটি ভিডিও বার্তা টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ১ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের সেই ভিডিও বার্তায় প্রথমে শােনা গিয়েছে, মোদি বলছেন, ভারত তাদের স্যালুট জানায় সেদিন যারা নির্ভীক হয়ে জরুরি অবস্থার প্রতিবাদে লড়াইয়ে নেমেছিল, সেদিন দেশের গণতন্ত্র জয়ী হয়েছিল। শাসকের স্বৈরাচারী মনােভাব ভেঙে চুরমার করে দিয়েছিল তাঁরা।

জরুরি অবস্থার স্মৃতি মনে করিয়ে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টুইটে লিখেছেন, সেদিন কীভাবে সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে নাগরিকদের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল। এই পরিস্থিতি থেকে দেশকে বের করে আনতে যাঁরা লড়াই চালিয়েছিলেন, সেই দেশভক্ত সৈনিকদের স্যালুট জানাই।

রাজনাথ সিংও এই নিয়ে টুইট করে লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন ছিল দেশের ইতিহাসের কালাে অধ্যায়। ইন্দিরা গান্ধির সেই ঔদ্ধত্যের সিদ্ধান্তই সেবার কংগ্রেস সরকারের পতনের কারণ ছিল। সেই সন্ধিক্ষণেই আত্মপ্রকাশ বিজেপির। যার মূল উদ্দেশ্য দেশবাসীর অধিকার রক্ষা করা। গণতন্ত্র রক্ষা করা।

বিজেপির কার্যকরী সভাপতি জে পি নাড্ডাও টুইটে লিখেছেন, আমি ধন্যবাদ জানাই সেই বিজেপি এবং আরএসএস কর্মীদের যাঁরা সেসময় দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে লড়াই চালিয়েছিল।