রাজ্যগুলির নগদ নারায়ণে উপকৃত দেশের ১১ কোটি গৃহলক্ষ্মী

১৬ শতাংশ  মহিলা পাচ্ছেন হাতে নগদ টাকা
দিল্লি, ১২ জুলাই– যেকোনও ভোট আসার আগেই দেশের দলগুলিতে একটা জিনিস ভীষণ কমন থাকে কিভাবে দেশের নারীবাহিনীকে নিজেদের দলের প্রতি আকৃষ্ট করা যায়৷ আর সেই পথেই শুরু হয়ে যায় নানান ‘উপহার’ মানে সুবিধার ছড়াছড়ি৷ কোথাও লক্ষ্মীর ভাণ্ডার তো কোথাও পেয়ারি বহেনা প্রকল্প৷ দেশের ১০টি রাজ্য মহিলাদের জন্য আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্প শুরু করেছে৷ শিবসেনা-বিজেপি-এনসিপি জোট শাসিত মহারাষ্ট্র হল এই তালিকার নবতম সংযোজন৷ দেশজুডে় রাজ্য সরকারগুলির মহিলাদের দেয় সর্বমোট অর্থের পরিমাণ ১.৮ লক্ষ কোটি টাকা৷ যা মিলিতভাবে রাজ্যভিত্তিক গড় উৎপাদনের ০.৮ শতাংশ এবং দেশের গড় জাতীয় উৎপাদনের ০.৬ শতাংশ৷ অবশ্য একথা অস্বীকার করা যায় না এই প্রকল্পগুলির  জন্য রাজনীতিক দলগুলি দেশের লক্ষ্মীদের কৃপাও পেয়েছেন৷ এই যেমন বাংলার তৃণমূল সরকার লোকসভা ভোটের আগে তাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের টাকা বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেয়৷ ভোটের পর নিরঙ্কুশ জেতে তারা৷ তাতের বিরোধীরা বলা শুরু করে এটা সেই নারী শক্তির  হাতে নগদের ফল৷ তাতে সত্যতা কতটা তা অবশ্য বিতর্কের বিষয়৷

আগামী ২৩ জুলাই তৃতীয় নরেন্দ্র মোদি সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রস্তাব পেশ হতে চলেছে৷ মহিলা অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন এবারের বাজেটেও দেশের নারীকল্যাণের জন্য বেশকিছু ব্যয়বরাদ্দ ও প্রকল্পের কথা ঘোষণা করবেন৷ অর্থাৎ মধ্যমণি সেই মহিলারাই৷ কোভিডের অতিমারির পরবর্তীকাল থেকে রাজ্য সরকারের উন্নয়নমূলক পদক্ষেপের মূল লক্ষ্যই হয়ে উঠেছেন গৃহবধূরা৷ শুধু কেন্দ্র নয়, দেশের ছোট-বড় রাজ্যগুলিও ইদানীংকালে নারীকল্যাণ ও মহিলাদের আর্থিক সহায়তায় হাত বাডি়য়েছে৷  এই কাজে একে অপরকে টেক্কা দেওয়ার অলিখিত প্রতিযোগিতায় নেমে পডে়ছে রাজ্যগুলি, বিশেষত রাজনৈতিক দলগুলি৷
সম্প্রতি দু-একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গৃহলক্ষ্মীদের হাতখরচা জোগানের প্রবণতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ দেশের ১৬ শতাংশ মহিলা রাজ্যগুলির কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন৷ মাথা গুনলে পরিমাণটা ১১ কোটি৷

রাজকোষের একটি বড় অংশ এই ধরনের প্রকল্পে ব্যয় করা হলেও এতে রাজ্যগুলির আর্থিক অবস্থায় কোনও প্রভাব পড়বে না, বলা হয়েছে রিপোর্টে৷


কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মহিলামুখী প্রকল্পগুলির খাতে খরচ বৃদ্ধির জন্য তারা অন্য খাতের খরচ থেকে ভরতুকি জোগান দিচ্ছে৷ তবে এক্ষেত্রে রাজ্যগুলিকে মূলধনী ব্যয় কমাতে হবে৷ তাহলেই এই প্রকল্পগুলি আরও সাফল্যের মুখ দেখতে পাবে৷

সমীক্ষায় ধরা পডে়ছে, দেশের ১৬ শতাংশ মহিলা এই প্রকল্পগুলির অধীনে মাসে মাসে আর্থিক সহায়তা পাচ্ছেন৷ অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের একটি আর্থিক সমীক্ষা রাজ্য বাজেট ও তাদের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি নিয়ে খুঁটিয়ে বিচার করে এই তথ্য দিয়েছে৷

স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পৃথক একটি রিপোর্ট বলছে, মহিলাদের জন্য এই প্রকল্পগুলি বৃহত্তর এক দৃষ্টিভঙ্গি হয়ে উঠছে৷ যেখানে দেখা যাচ্ছে, বৃহৎ রাজ্যগুলিও তাদের রাজস্ব সংগ্রহের একটা বড় অংশ এই প্রকল্পগুলিতে দিচ্ছে৷ সম্প্রতি মহারাষ্ট্র সরকার মুখ্যমন্ত্রীর লেড়কি বহিন প্রকল্পে মহারাষ্ট্রের ২.৬ কোটি মহিলাকে মাসে দেড় হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে রাজ্য বাজেটে৷ অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের রিপোর্ট বলছে, এই প্রকল্পে রাজ্য সরকার ৪৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে৷ যা রাজ্যের গড় উৎপাদনের ০.৮ শতাংশ৷

অন্ধ্রপ্রদেশে এই প্রকল্পের নাম জগন্না আম্মাভোডি স্কিম৷ ২০২০ সালের জানুয়ারিতে চালু হওয়া এই প্রকল্পে রাজ্যের মহিলাদের প্রতি মাসে দেড় হাজার টাকা দেওয়া হয়৷ অসমে এর নাম অরুণোদয় প্রকল্প৷ ২০২০ সালের অক্টোবরে চালু এই প্রকল্পে ১২৫০ টাকা করে প্রতি মাসে মহিলাদের অ্যাকাউন্টে চলে যায়৷ পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পের নাম লক্ষ্মীভাণ্ডার৷ ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হয়েছিল৷ এতে মহিলাদের ১০০০/১২০০ টাকা দেওয়া হয়৷

মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী লাডলি বহেনা যোজনা৷ শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে৷ মাসে ১০০০ টাকা অনুদান৷ কর্ণাটকে এর নাম গৃহলক্ষ্মী৷ ২০২৩ সালের আগস্টে সূচনা৷ মাসে ২ হাজার টাকা পান মহিলারা৷ তামিলনাড়ু৷ কালাইগনার মাগালির উরিমাই তিট্টম৷ গতবছরের সেপ্টেম্বরে চালু৷ মাসে হাজার টাকা৷ তেলঙ্গানায় প্রকল্পের নাম মহালক্ষ্মী৷ গতবছর ডিসেম্বর থেকে মাসে আড়াই হাজার টাকা পাচ্ছেন মহিলারা৷

হিমাচল প্রদেশের এর নাম ইন্দিরা গান্ধি পেয়ারি বহেনা সুখ সম্মাননিধি যোজনা৷ এবছর ফেব্রুয়ারিতে চালু হওয়া এই প্রকল্পে মহিলারা মাসে দেড় হাজার টাকা পেয়ে থাকেন৷ দিল্লিতে এর নাম মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা৷ এবছর মার্চে চালু৷ বরাদ্দ হাজার টাকা করে৷ এছাড়া মহারাষ্ট্রের কথা তো উল্লেখ করাই আছে৷

এই হিসাবে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২২ সালের তুলনায় মহিলাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কল্যাণমূলক প্রকল্পের পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে৷ যত দিন যাচ্ছে, পরিমাণ বৃদ্ধি ঘটছে৷ কারণ সেই টেক্কা দেওয়ার পালা৷ এসবিআই রিপোর্ট বলছে, ভারত ক্রমশ কল্যাণমুখী রাজ্যে পরিণত হচ্ছে৷ কারণ অধিকাংশ রাজ্যই এখন রাজ্যবাসীর জন্য কল্যাণকর প্রকল্পের দিকে ঝুঁকছে৷ মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র, কর্নাটক, কেরলের মতো বড় রাজ্যগুলিও রাজকোষের একটি উল্লেখযোগ্য ভাগ এই খাতে খরচ করছে৷

মহারাষ্ট্র ১১ শতাংশ, কর্ণাটক ১৫ শতাংশ, কেরল, ওডি়শা ও পশ্চিমবঙ্গ ৮-১০ শতাংশ কল্যাণকর প্রকল্পের জন্য খরচের প্রস্তাব রেখেছে বাজেটে৷