২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে যোশীমঠে ফাটল দেখা দিতে শুরু করে। যোশীমঠের সমস্যা এবং তার সমাধানের নানা চেষ্টা শুরু করে রাজ্য প্রশাসন। কেন্দ্রীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফেও রিপোর্ট দেওয়া হয় । যে সব অঞ্চল বসতিশূন্য করে দিলে জায়গাটিকে বাঁচানো যেতে পারে সে সব এলাকা খালি করে দেওয়ার ভাবনাচিন্তা শুরু হয়। রিপোর্ট মোতাবেক, যোশীমঠের ৩৫ শতাংশ এলাকাই ‘হাই রিস্ক জোন’ অর্থাৎ অতিঝুঁকিপূর্ণ । এগুলি মধ্যে আবার চারটি পুরসভা এলাকা দ্রুত খালি করা প্রয়োজন। উত্তরাখণ্ড সরকার জানিয়েছে, মনোহর বাগ, সুনীল, মারওয়াড়ি এবং সিংহদ্বার— এই চারটি পুরসভা এলাকা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ওই পুরসভা এলাকায় অসংখ্য ঘরবাড়ি রয়েছে। বসতবাড়ির পাশাপাশি রয়েছে বাণিজ্যিক ভবনও। এ ছাড়াও রয়েছে দোকানপাট, হোটেল, হোমস্টে। সব মিলিয়ে ১০০০টি নির্মাণ অবিলম্বে ভেঙে তার ধ্বংসস্তূপ অন্য কোথাও সরিয়ে ফেলার কথা বলা হয় রিপোর্টে।
গত বছর মার্চ মাসে এই রিপোর্ট দিয়েছিল এনডিআরএফ। পরে ওই রিপোর্ট পুনর্বিবেচনা করে চূড়ান্ত করা হয় মে মাসের শেষে। তারপরও গড়িয়ে গেছে বেশ কয়েকটা মাস, কিন্তু নির্মাণ ভাঙার কাজ শুরু করা যায়নি।
চার পুর এলাকার বাসিন্দাদের ৯০ কিলোমিটার দূরে গৌচরে একটি অস্থায়ী আস্তানায় পাঠানোর চেষ্টা করে রাজ্য। কিন্তু বাসিন্দারা নিজেদের বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি নন। এ ব্যাপারে ওই এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয় প্রশাসনের। এলাকার বাসিন্দারা জানান, তাঁদের বাড়ি থেকে অনেকটা দূরে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাঁদের জীবনধারণ এবং জীবিকার সমস্যা হবে।
যোশীমঠ উত্তরাখন্ড পর্যটনের কেন্দ্র বিন্দু বলা যেতে পারে। বদ্রিনাথ, হেমকুণ্ড-সহ দেব ভূমির বহু পর্যটন ক্ষেত্র বা ট্রেকিং-এর মূল প্রবেশ পথ । অনেকেরই জীবিকা এই পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। যোশীমঠের বাসিন্দাদের বক্তব্য, মন্দির শহরের মূল এলাকা থেকে ১০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে পুনর্বাসন দেওয়া হলে তাদের ব্যবসা এবং জীবিকা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কিন্তু আসন্ন বিপদকে ঠেকাতে এবং সারা দেশ তথা বিশ্বের এই অন্যতম আকর্ষণ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর তীর্থক্ষেত্রকে রক্ষা করতে গেলে সাময়িক কষ্ট স্বীকার করা ছাড়া আর কোন গত্যন্তর নেই তা বলাই বাহুল্য।