• facebook
  • twitter
Friday, 22 November, 2024

কর্ণাটকে বেসরকারি চাকরি শুধুমাত্র কন্নড়দের জন্য

কোণঠাসা বাঙালি সহ গোবলয়ের লক্ষ-লক্ষ হিন্দিভাষীরা বেঙ্গালুরু, ১৭ জুলাই– বাঙালিকে একেবারে কোণঠাসা করে দিল কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার৷ তবে শুধু বাঙালি বলা ভুল হবে কারণ কর্ণাটকে বাঙালি ছাড়াও বাস-চাকরি করেন বহু বিহার তথা অন্যান্য গোবলয় থেকে আসা লক্ষ লক্ষ হিন্দিভাষীরা৷ সিদ্দারামাইয়া-শিবকুমার মন্ত্রিসভা বেসরকারি চাকরিতে কন্নড় সংরক্ষণ নিয়ে এমন একটি বিল অনুমোদন করেছে যার ফলে এবার বাঙালি

কোণঠাসা বাঙালি সহ গোবলয়ের লক্ষ-লক্ষ হিন্দিভাষীরা
বেঙ্গালুরু, ১৭ জুলাই– বাঙালিকে একেবারে কোণঠাসা করে দিল কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার৷ তবে শুধু বাঙালি বলা ভুল হবে কারণ কর্ণাটকে বাঙালি ছাড়াও বাস-চাকরি করেন বহু বিহার তথা অন্যান্য গোবলয় থেকে আসা লক্ষ লক্ষ হিন্দিভাষীরা৷ সিদ্দারামাইয়া-শিবকুমার মন্ত্রিসভা বেসরকারি চাকরিতে কন্নড় সংরক্ষণ নিয়ে এমন একটি বিল অনুমোদন করেছে যার ফলে এবার বাঙালি সহ অন্যান্য ভাষাভাষীদের তল্পি গুটিয়ে চলে আসতে হবে কর্ণাটক ছেড়ে৷ না হলে না খেয়ে মরতে হবে৷ জুটবে না চাকরি৷ কর্ণাটক সরকার সংরক্ষণ ইসু্যতে কর্ণাটকের কংগ্রেস সরকার আঞ্চলিক ভাষার রাজনীতিকেই গুরুত্ব দিল৷ বেসরকারি ক্ষেত্রে গ্রুপ সি এবং ডি পোস্টে ১০০ শতাংশ কন্নড়ভাষীকে নেওয়ার বিল আনল৷ ম্যানেজমেন্ট পোস্টে ৫০ শতাংশ এবং নন-ম্যানেজমেন্ট পোস্টে ৭৫ শতাংশ স্থানীয়দের নিয়োগের প্রস্তাবেও অনুমোদন দিয়েছে ক্যাবিনেট৷ আশার কথা হল, বিলের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পর্যাপ্ত সংখ্যক যোগ্য স্থানীয় প্রার্থী না পাওয়া গেলে সংস্থাগুলি সংরক্ষণ শিথিলের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করতে পারে৷

‘কর্ণাটক স্টেট এমপ্লয়মেন্ট অফ লোকাল ক্যান্ডিডেটস ইন দ্য ইন্ডাস্ট্রি, ফ্যাক্টরি অর আদার এসটাবলিশমেন্টস বিল’-এ আরও বলা হয়েছে, বেসরকারি সংস্থায় কর্মপ্রার্থীকে কমপক্ষে দশম শ্রেণি পর্যন্ত কন্নড় ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে৷ অন্যথায় তাঁকে ভাষার পরীক্ষা দিতে হবে৷ বিদেশে যাওয়ার ক্ষেত্রে যেমন ভাষার দক্ষতার পরীক্ষায় বসতে হয়, কর্ণাটকেও সেরকম ব্যবস্থা চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে বিলে৷

ইতিমধ্যে নতুন বিলে ছাড়পত্র দিয়েছে কর্ণাটকের মন্ত্রিসভা৷ বৃহস্পতিবার বিধানসভায় পেশ করা হল ওই বিল৷ বুধবার এক্স হ্যান্ডেলে এই সংক্রান্ত পোস্ট করেছিলেন কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া৷ যদিও পরে ওই পোস্ট ডিলিট করা হয়৷ তবে সিদ্দারামাইয়ার পোস্ট সরানোর পর সংবাদসংস্থা এএনআইকে কর্ণাটক সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন শ্রমমন্ত্রী সন্তোষ এস লাড়৷ তিনি বলেন, ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে ৫০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব হয়েছে৷ অন্যান্য পদে ৭০ শতাংশ সরক্ষণ৷

ওই পোস্ট ডিলিটের পেছনে তথ্যপ্রযুক্তি মহলের চাপ কাজ করছে বলেই মত বিশষজ্ঞদের৷ কারণ ক্যাবিনেটের এই একপেশে সিদ্ধান্তকে বৈষম্যমূলক বলে ব্যাখ্যা করে বিল প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে তথ্যপ্রযুক্তি মহল৷ দেশের বড় বড় শিল্পোদ্যোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলি কংগ্রেস সরকারের এই সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করে বুধবার৷ বায়োকনের কিরণ মজুমদার শ’র মতে, টেক হাব হিসেবে আমরা দক্ষ, মেধাবী লোক চাই৷ সেখানে স্থানীয়দের যদি সব চাকরি দিতে হয়, তাহলে কী হবে? যে চাকরিতে উচ্চ মেধা ও দক্ষতার প্রয়োজন হয়, সেগুলিকে ছাড় দেওয়া উচিত৷

ইনফোসিসের প্রাক্তন সিএফও মোহনদাস পাই কিরণ মজুমদার শায়ের সুরে সুর মিলিয়ে বলেছেন, এই বিল প্রত্যাহার করা উচিত৷ এটা অত্যন্ত বৈষম্যমূলক, পশ্চাৎমুখী এবং সংবিধান বিরোধী বিল৷ কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশকে উদ্দেশ করে পাই জর্জ অরওয়েলের লেখা অ্যানিমাল ফার্ম উপন্যাসের মতোই এই বিলকে ফ্যাসিস্ত বলে ব্যাখ্যা করেন তিনি৷

পাই আরও একধাপ সুর চডি়য়ে বলেন, ভাবাই যায় না, বেসরকারি ক্ষেত্রের নিয়োগ কমিটির চেয়ারে একজন সরকারি অফিসার বসে থাকবেন! পরীক্ষা নেওয়া হবে মেধা-দক্ষতার বিচারে নয়, শুধুমাত্র ভাষার বিচারে৷ কংগ্রেস কীভাবে এরকম একটি বিল নিয়ে এল বিশ্বাসই করতে পারছি না৷ সরকার কী করে বেসরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগের সার্টিফিকেট দিতে পারে, রমেশের কাছে প্রশ্ন রেখেছেন পাই৷

কর্ণাটক অ্যাসোচেম-এর কো-চেয়ারম্যান আরকে মিশ্র বলেন, এই বিল অত্যন্ত অদূরদর্শী পদক্ষেপ৷ একজন সরকারি অফিসার যদি প্রত্যেক বেসরকারি কোম্পানির নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে বসে থাকেন, তাহলে ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আতঙ্ক ছডি়য়ে পড়বে৷

এখন মূল প্রশ্ন হচ্ছে, এই বিল কার্যকর হলে বেঙ্গালুরুসহ কর্নাটকে চাকরি অভিলাষী বাঙালি ইঞ্জিনিয়ারদের ভবিষ্যৎ কী হবে? তথ্য অনুসারে ২০১৯ সালের হিসাবে কেবলমাত্র বেঙ্গালুরুতেই আনুমানিক ১৩ লক্ষ বাঙালি বাস করেন৷ এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও অসম ও ত্রিপুরার বাঙালিও আছেন৷ তবে অধিকাংশই বাংলার বাসিন্দা৷ আরও একটি তথ্য বলছে, বেঙ্গালুরুর বাসিন্দাদের ৫০ শতাংশই পরিযায়ী কর্মী৷
দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর দলে দলে ছাত্রছাত্রী কর্ণাটকের বিভিন্ন কলেজে পড়তে যান৷ এখান থেকে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতক-ডিপ্লোমা করার পর বহু তরুণ-তরুণী কর্ণাটকে চাকরির খোঁজে যান৷ এরপর অধিকাংশ বেসরকারি চাকরিতে স্থানীয়দের সংরক্ষণ আইন হয়ে গেলে তাঁদের সামনে সেই দরজা বন্ধ হয়ে যাবে৷

বাঙালি ছাড়াও বিপদে পড়বেন বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তীসগড়, উত্তর ও মধ্যপ্রদেশের হিন্দিভাষীরা৷ এই আইনের ফলে সি এবং ডি গ্রুপে তাঁদের জন্য চাকরির দরজা চিরতরে বন্ধ হতে চলেছে৷ মালদহ-মুর্শিদাবাদ সহ বাংলার বহু যুবক কর্নাটকে নির্মাণকাজ এবং অন্যান্য কাজের চাকরি করেন৷ ফলে তাঁদেরও ভবিষ্যতে কর্নাটকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হতে চলেছে সিদ্দারামাইয়া সরকারের এই বিল বিধানসভায় পাশ হলে৷
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা বা সংরক্ষণ সংস্কারের দাবিতে অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশ৷ ছাত্রদের আন্দোলনে এখনও পর্যন্ত মৃতু্য হয়েছে ৬ জনের৷ এর মধ্যেই দক্ষিণের ওই রাজ্যে বেসরকারি চাকরিতে বিশেষ পদে কন্নড়ভাষীদের জন্য ১০০ শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিদ্দারামাইয়া সরকার৷ এখন দেখার এই সিদ্ধান্তে কী প্রভাব পড়ে ভবিষ্যতে৷