জেল থেকে বেরিয়ে কেজরিওয়ালের ১০ টি গ্যারান্টি

দিল্লি, ১২ মে – দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ২১ দিনের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন শীর্ষ আদালতের নির্দেশে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, এখন ভোট চলছে। তাই একটি রাজনৈতিক দলের সর্বাধ্যক্ষ হিসেবে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দলের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।  জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ভোটের প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন আপ প্রধান। যদিও লোকসভার ফলপ্রকাশের আগেই, আগামী ২ জুন তাঁকে আবার তিহারে আত্মসমর্পণ করতে হবে। তার আগে দল এবং ইন্ডিয়া জোটের জন্য রণকৌশল সাজিয়েছেন কেজরিওয়াল। সেই রণকৌশলের তালিকায় রয়েছে তাঁর ঘোষিত ১০ টি গ্যারান্টি। পাশাপাশি, বিজেপি বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ ক্ষমতায় এলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। 

রবিবার আপ বিধায়কদের সঙ্গে একটি সাংবাদিক বৈঠক করে নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করেন কেজরিওয়াল। সেই ইস্তাহারে ১০টি ‘কেজরিওয়ালের গ্যারান্টি’ বা প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা জানিয়েছেন তিনি। সেই সময়ই তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে মুখ খোলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করা নিয়ে জোট সঙ্গীদের কাছে ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। 

সাংবাদিক বৈঠকে কেজরিয়ালকে প্রশ্ন করা হয়, বিরোধী জোট সরকার গড়লে তিনি প্রধানমন্ত্রী হবেন কি না। জবাবে তিনি বলেন, ‘‘না। আমি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেই।’’ তবে জোট ক্ষমতায় এলে তিনি ‘কেজরিওয়ালের গ্যারান্টি’ অবশ্যই পূরণ করবেন বলে জানান। আপ প্রধান জানিয়েছেন, তাঁরা ক্ষমতায় এলে সারা দেশে ২৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। তার মধ্যে প্রথম ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ বিনামূল্যে দেওয়া হবে। সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করা এবং বেসরকারি স্কুলের চেয়ে সরকারি স্কুলে উন্নত পরিষেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ইস্তাহারে। ১০ লাখ স্কুলে ১৮ কোটি পড়ুয়া রয়েছে, যাদের ভবিষ্যৎঅনিশ্চিত।এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলিকে আরও উন্নত করা কথাও বলা হয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালের সমতুল্য সরকারি হাসপাতাল তৈরি করা হবে। চিন ভারতের জমি দখল করে রেখেছে বলে দাবি করে বিজেপি বিরোধীরা। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর ‘গ্যারান্টি’, ক্ষমতায় এলে চিনের হাত থেকে ভারতীয় ভূখণ্ড পুনরুদ্ধার করা হবে। বাতিল করা হবে মোদি সরকারের অগ্নিবীর প্রকল্প। কর্মসংস্থান নিয়ে কেজরিওয়াল জানিয়েছেন, ক্ষমতায় আসার পর প্রতি বছর ২ কোটি চাকরির ব্যবস্থা করা হবে। কৃষকরা তাঁদের ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য পাবেন। 


দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়তে সবরকম চেষ্টা করার গ্যারান্টি দিচ্ছেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। জিএসটিকে আরও সরল করার ভাবনা নিয়েছে তাঁরা। নির্বাচনে জিতলে দিল্লি পূর্ণরাজ্য হবে বলেও ‘গ্যারান্টি’ দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। ইস্তাহার প্রকাশ করে কেজরি বলেন, ‘‘এই ১০টি গ্যারান্টি নতুন ভারতের কথা ভেবে করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি কাজ গত ৭৫ বছরে হয়ে যাওয়া উচিত ছিল, কিন্তু করা যায়নি। কিছু কাজ আছে, যা না করলে কোনও দেশই শক্তিশালী হতে পারে না।’’

ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতি নিয়ে তিনি জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন কি না জিজ্ঞাসা করা হলে কেজরিওয়াল বলেন, ‘‘আমি জোট ‘ইন্ডিয়া’র শরিকদের সঙ্গে এগুলি নিয়ে আলোচনা করিনি। তবে আমার বিশ্বাস, ‘ইন্ডিয়া’র সদস্যদের এই নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না। আমি নিশ্চিত করছি যে, প্রতিশ্রুতি পূরণ হবেই।’’ তবে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে এই নিয়ে আলোচনা না করার জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেন তিনি। তিনি বলেন, ‘‘আমি এর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। সময় কম, অর্ধেক ভোট হয়ে গিয়েছে। তবে আমি জানি যে স্কুল এবং হাসপাতাল খোলা নিয়ে ওদের কোনও আপত্তি থাকবে না।’’

দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনসভা করে পরপর গ্যারান্টি’র কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও কার্যত সেই পথেই হাঁটলেন।