মণিপুরে গুলির লড়াইয়ে নিহত ১ যুবক, এনআইএ তদন্তের নির্দেশ
SNS
ফের হিংসা ও অশান্তির বাতাবরণ মণিপুরে। কার্ফু জারি হওয়ার পর লাগাম পরানো যায়নি হিংসাত্মক কার্যকলাপে। গত কয়েকদিন ধরে অশান্ত জিরিবাম জেলা ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের গুলির লড়াইয়ে। রবিবার জিরিবাম জেলার বাবুপাড়ায় গুলির লড়াই চলাকালীন প্রাণ হারান এক যুবক। জানা গিয়েছে, উত্তেজিত বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায় পুলিশ। তখনই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ওই যুবকের। পুলিশ সূত্রে খবর, নিহত যুবকের নাম কে অথৌবা। এদিকে রাজ্যের অন্যান্য জায়গায় ঘটে চলা হিংসার ঘটনাগুলির মধ্যে তিনটি ঘটনার তদন্ত করবে এনআইএ। এদিকে, সোমবারই মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বৈঠকে ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, স্বরাষ্ট্রসচিব গোবিন্দ মোহন এবং আইবি ডিরেক্টর তপন ডেকাসহ শীর্ষ আধিকারিকরা। সেখানে স্থির হয় মণিপুরের অশান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে আরও ৫০ কোম্পানি কেন্দ্রীয় সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী পাঠাচ্ছে কেন্দ্র। প্রতি কোম্পানির সদস্য সংখ্যা ১০০। ফলে আরও পাঁচ হাজার জওয়ান মণিপুরে পাঠানো হচ্ছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় জিরিবাম থানার কাছেই বিজেপি এবং কংগ্রেসের দু’টি দলীয় কার্যালয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় উত্তেজিত জনতা। স্থানীয় এক নির্দল বিধায়কের বাড়িতেও হামলা চালানো হয়। উত্তেজিত জনতা দুই দলের দপ্তরে ঢুকে চেয়ার, টেবিল এবং অন্যান্য আসবাবপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, রবিবার জিরিবাম এলাকা থেকে আরও এক অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগেও ইম্ফলে বিজেপির দপ্তরে ভাঙচুর চালানো হয়েছিল।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জিরিবামে হিংসা ছড়িয়ে পড়ছে খবর পেয়ে এলাকায় পৌঁছয় নিরাপত্তাবাহিনী। তখন বিক্ষোভকারীরা এলাকায় ভাঙচুর চালাচ্ছিলেন। মেইতেই সম্প্রদায় অধ্যুষিত জিরিবাম জেলায় ঢুকে মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যা করছে কুকি জঙ্গিরা। যা নিয়ে মেইতেইরা বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। সেই সময় নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের গুলির লড়াই শুরু হয়। গুলিতে এক যুবকের মৃত্যু হয়। তবে কারা আগে গুলি চালিয়েছে, কার গুলিতে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে তা স্পষ্ট নয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, নিরাপত্তারক্ষীদের তরফেই প্রথমে গুলি চালানো হয়।
কয়েকদিন ধরেই আবার নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে বিজেপি শাসিত রাজ্য মণিপুর। রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় হিংসার ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েক জনের। রাজ্যের এই পরিস্থিতির জন্য বার বার কেন্দ্রের দিকেই আঙ্গুল তুলেছে বিরোধীরা। এই পরিস্থিতিতে হিংসার ৩টি ঘটনার তদন্তভার এনআইএ-এর উপর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। এই তালিকায় জিরিবাম জেলায় কুকি সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সিআরপিএফ জওয়ানদের গুলির লড়াইয়ের ঘটনাও রয়েছে।
শনিবার বরাক নদী থেকে উদ্ধার হয় উদ্বাস্তু ক্যাম্প থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৩ জনের দেহ। তারপরই আছড়ে পড়ে জনরোষ। হামলা শুরু হয় রাজ্যের একাধিক মন্ত্রী ও বিধায়কের বাড়িতে।মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের বাড়িতেও হামলা চালান বিক্ষোভকারীরা।এরপরই রাজ্যজুড়ে লাগু করা হয় কার্ফু। বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট পরিষেবা। বন্ধ হয়ে যায় বাজার, দোকান। গত সোমবারও জিরিবামে অসম সীমানা লাগোয়া অঞ্চল থেকে অপহরণ করা হয়েছিল ৬ জনকে। অভিযোগের তির ছিল কুকি গোষ্ঠীর দিকে। নদীতে দেহ মেলার পর থেকেই দিকে দিকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে মেইতেই গোষ্ঠী।
রবিবারও জিরিবাম জেলার জিরি নদীতে দেহ ভাসতে দেখা যায়। তার মধ্যে ছিল এক ষাটোর্ধ্ব মহিলার এবং বছর দুয়েকের এক শিশুর দেহ। শিশুটির দেহ ছিল মুণ্ডহীন। রবিবারই মেইতেই গোষ্ঠী মণিপুর সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যদি অভিযুক্তদের ধরা না হয়, বিক্ষোভ আরও জোরালো হবে।
হিংসার ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে এখনও পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করেছে মণিপুর পুলিশ। তাঁরা সকলেই ইম্ফল পূর্ব, ইম্ফল পশ্চিম এবং বিষ্ণুপুর এলাকার বাসিন্দা। রাজধানী ইম্ফল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় জারি করা হয়েছে কার্ফু। বন্ধ রয়েছে ইন্টারনেট পরিষেবা। কার্ফুর মধ্যেই রবিবার রাতে জিরিবামের ৫টি গির্জা, স্কুল, পেট্রল পাম্প এবং বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয়। কোথাও কোথাও অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগও ওঠে। কে বা কারা এই হামলা চালায় তা স্পষ্ট নয়।
এই পরিস্থিতিতে ইম্ফলের বিভিন্ন এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। বিশেষ করে রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর ও রাজ্ ভবন এলাকায় কড়া টহলদারি চলছে। উত্তপ্ত মণিপুরে এখনও পর্যন্ত শান্তি ফিরিয়ে আনতে না পারায় বিজেপির জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে নিয়েছে কনরাড সাংমার ন্যাশনাল পিপলস পার্টি।