কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে ‘আদর্শ আচরণবিধি’ লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হলো বাংলার শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। প্রসঙ্গত, রাজ্যের ৬ কেন্দ্রে আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচন। নিয়মানুযায়ী, নির্বাচনী নির্ঘন্ট প্রকাশিত হতেই (১৫ অক্টোবর) সংশ্লিষ্ট জেলায় জারি হয়েছে আদৰ্শ আচরণবিধি। আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলার ছয় কেন্দ্রের উপনির্বাচনের মধ্যে রয়েছে উত্তর ২৪ পরগনার দুই কেন্দ্র হাড়োয়া এবং নৈহাটি। এর মাঝেই রবিবার অমিত শাহ উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রোপোল সীমান্তে যাত্রী টার্মিনাল, চেক পোস্ট এবং মৈত্রী দ্বারের উদ্বোধন করেছেন।
এই প্রসঙ্গ ধরেই তৃণমূলের অভিযোগ, রবিবার উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোলে সরকারি কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করেছেন শাহ। যে জেলার দুই কেন্দ্রে উপনির্বাচন, সেই জেলায় দাঁড়িয়ে অমিত শাহ কী ভাবে সরকারি কর্মসূচি করলেন এবং বিভিন্ন সরকারি পরিকাঠামোর উদ্বোধন করলেন, তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের শাসকদল। নির্বাচনী বিধিভঙ্গের দায়ে কমিশনের কাছে অমিত শাহকে শোকজ করার আর্জি জানিয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী।
পাশাপাশি কোনও বিজেপি নেতৃত্ব যাতে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটান, সেই বিষয়েও কমিশনকে সজাগ থাকার আর্জি জানানো হয়েছে। নির্দিষ্ট অভিযোগপত্রে এই বিষয়ে কমিশনের নিয়ম স্মরণ করিয়ে দিয়ে তৃণমূল জানিয়েছে, মন্ত্রীরা এই সময় সরকারি সফর করতে পারেন না, নির্বাচনী কাজে প্রশাসনকে ব্যবহার করতে পারেন না। এমনকি সরকারি গাড়ি কিংবা বিমানও ব্যবহার করতে পারেন। এই সংক্রান্ত নিয়মগুলি ভঙ্গ করার পাশাপাশি সরকারি কর্মসূচি থেকে অমিত শাহ রাজনৈতিক মন্তব্যও করেছেন বলে দাবি তৃণমূলের।
নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া চিঠির ফটো সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে তৃণমূল কটাক্ষের সুরে লিখেছে, ‘নির্বাচন কমিশনের এখনই উচিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। বাংলার মানুষ সব চালাকি বোঝেন, এই নির্বাচনেও খালি হাতেই ফিরতে হবে বিজেপিকে!’ তৃণমূলের বক্তব্য, পেট্রাপোলের অনুষ্ঠানে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিজের ভাষণে ২০২৬-এ রাজনৈতিক পরিবর্তনের ডাক দিয়েছেন যা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সম্পর্কহীন।
এমনকি, অমিত শাহ নিজের রাজনৈতিক বাচনভঙ্গির মধ্য দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে অবমাননা করেছেন বলেও অভিযোগ তৃণমূলের। এ প্রসঙ্গে সরকারি কার্যকলাপ ও নির্বাচনী কার্যকলাপের মধ্যে সীমারেখা বজায় রাখার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার পেট্রাপোলের সরকারি মঞ্চ থেকে রাজ্যের তৃণমূল সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশ জুড়ে অনেক কাজ করেছেন। বাংলার মানুষের কিছু খেদ আছে। কিন্তু চিন্তা নেই, ২০২৬ সালের নির্বাচনের পর সেই খেদ মিটিয়ে দেবে বিজেপি সরকার। আমাকে শান্তনু ঠাকুর জানালেন, বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে পাঁচ-ছ’হাজার মানুষ প্রতি দিন কল্যাণী এমসে চিকিৎসার জন্য আসেন। ২০২৬ সালে আপনারা পরিবর্তন এনে দিন রাজ্যে। বেআইনি অনুপ্রবেশ বন্ধ করে দেব। উন্নয়নই মোদী সরকারের একমাত্র লক্ষ্য।’