• facebook
  • twitter
Friday, 18 October, 2024

এবার ভোটের কার্নিভাল তৃণমূলের, প্রার্থী বাছাইয়ে স্বচ্ছ ভাবমূর্তিতে জোর

সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের পর ৩টি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৎকালীন শাসকদল সিপিএমকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। তবে এবার সেই সম্ভাবনা নেই বলে একপ্রকার আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল।

আরজি কর কাণ্ডের আবহে সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। পথে নেমেছেন চিকিৎসকেরা। দিকে দিকে চলছে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ। এই আবহেই বাংলার ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচনের ডঙ্কা বেজে গিয়েছে। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই উপনির্বাচনই এখনও তৃণমূলের কাছে বড় পরীক্ষা। যদিও তৃণমূল তা মনে করছে না। ‘দ্রোহকালে’ প্রশ্ন উঠেছে, লোকসভা নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয় পাওয়া তৃণমূলের কি ‘চাপ’ বেড়েছে? জনসমর্থনেও কি ভাটা পড়েছে? এরই মাঝে তৃণমূলের সামনে রয়েছে একাধিক চ্যালেঞ্জ। জনসংযোগ, প্রার্থী বাছাই, সর্বোপরি স্বচ্ছ ভাবমূর্তি ধরে রাখাই এখন রাজ্যের শাসকদলের কাছে অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। অবশ্য এই নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় ঘাসফুল শিবির।

আগামী ১৩ নভেম্বর বাংলার ৬টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন হবে বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তালডাংরা, সিতাই, নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর ও মাদারিহাট বিধানসভা আসনে পুনর্নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ফল ঘোষণা ২৩ নভেম্বর। আরজি কর আবহে উপনির্বাচনের ঘোষণা হতেই কোমর বেঁধে নেমেছে বিরোধীরাও। তাঁদের মতে, বিধানসভা উপনির্বাচনে আরজি করের প্রভাব পড়তে বাধ্য। ৬টি কেন্দ্রের মধ্যে অন্ততপক্ষে ৪-৫টি কেন্দ্রে এর ছাপ পড়বেই। তবে তৃণমূলের পাল্টা দাবি, ৬ কেন্দ্রে উপনির্বাচনে ভোটবাক্সে কোনওভাবেই প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না আরজি কর। হাসতে হাসতেই ৬ কেন্দ্রে ফুটবে ঘাসফুল।

ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ৬টি কেন্দ্রে বিধানসভা উপনির্বাচনও রাজ্যের শাসকদলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আরজি কর কাণ্ডের আবহে বিরোধীদের চাপে পড়ে কিছুটা হলেও ব্যাকফুটে তৃণমূল। বিশেষ করে শাসকদলের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত কলকাতাবাসী। সেই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়েই আসরে নেমেছে বিরোধীরা। কিন্তু একটু গ্রামাঞ্চল বা মফঃস্বলের দিকে নজর রাখলে দেখা যাবে, আরজি কর কাণ্ড সাধারণ মানুষের মনে দাগ কাটতে পারলেও তৃণমূলের চাহিদা এবং মুখ্যমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা এক বিন্দুও কমেনি। তাই আসন্ন উপনির্বাচনে জিততে তৃণমূলকে বিশেষ কসরত করতে হবে না বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

নৈহাটি ছাড়া বাকি সব আসনই মূলত গ্রামকেন্দ্রিক। সেখানে যে তৃণমূলের ভোট অটুট রয়েছে সেই নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ গ্রামাঞ্চলের মহিলাদের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের গুরুত্ব অপরিসীম। আসন্ন বিধানসভা উপনির্বাচনে তৃণমূলের স্ট্র্যাটেজি এখনও ঠিক না হলেও মহিলা ভোট ব্যাঙ্ক তাঁদের গুরুত্বের তালিকায় শীর্ষে থাকবে বলেই মনে করছে বিশেষজ্ঞমহল। শুধু তাই নয়, কয়েকটি আসনে মহিলা মুখকেও গুরুত্ব দেওয়া হতে পারে।

প্রার্থী বাছাই নিয়ে যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করেই এগোতে হচ্ছে ঘাসফুল শিবিরকে। বিশেষ করে যে ব্যক্তির নীচু তলায় পরিচিতি বেশি, যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রায় শূন্য এমন ব্যক্তিই হতে পারে তৃণমূলের প্রার্থী। তারা এবার এমনই কাউকে প্রার্থী করবে যার বিরুদ্ধে থাকবে না কোনও দলবাজির অভিযোগ। অর্থাৎ স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আরও একটা হাতিয়ার হতে পারে তৃণমূলের কাছে। সেক্ষেত্রে তৃণমূলের কিস্তিমাত আরও অনেকটাই সহজ হবে।

সাধারণত উপনির্বাচনে শাসকদলই জিতে থাকে। কারণ এই ভোটের পর সরকার বদলের কোনও সুযোগ থাকে না। তবে ব্যতিক্রম যে একেবারেই হয় না এমনটাও নয়। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম পর্বের পর ৩টি বিধানসভা উপনির্বাচনে তৎকালীন শাসকদল সিপিএমকে হারিয়ে জয় ছিনিয়ে নিয়েছিল তৃণমূল। তবে এবার সেই সম্ভাবনা নেই বলে একপ্রকার আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল।