• facebook
  • twitter
Monday, 7 April, 2025

তিস্তা-গঙ্গার জলবন্টন চুক্তি পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়ে নয়

সংসদে সরব ঋতব্রত

তিস্তা নদী।

তিস্তা নদী বা ফরাক্কা বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সরকার যদি কোনও চুক্তির নবীকরণ করতে চায়, তবে তা করতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে জানিয়ে, এবং তাদের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে। রাজ্য সরকারের অগোচরে এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ করা যাবে না বলে মঙ্গলবার সংসদে দাবি জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তিস্তা জলবন্টন চুক্তি এবং গঙ্গা জল চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার মমতার সেই দাবিই সংসদে উত্থাপন করেছেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়।
 
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় ঋতব্রত দাবি করেছেন, ফরাক্কা চুক্তির ফলে পশ্চিমবঙ্গের বহু মানুষ নিঃস্ব হয়েছেন। অন্যদিকে তিস্তার জলের উপর উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলার জীবনযাত্রা নির্ভরশীল। তাই বাংলার মানুষের স্বার্থের সঙ্গে জড়িত এই দুই নদী নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বাংলার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত কেন্দ্রের।
 
প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গা জল চুক্তি স্বাক্ষর করে ভারত। কিন্তু পরবর্তীকালে দেখা যায়, এই চুক্তির কারণে এপার বাংলার মানুষকে অনেক কিছু খেসারত দিতে হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশের দাবি, বেশ কিছু ভুলত্রুটির জন্য গত প্রায় তিন দশকে গঙ্গা ও পদ্মায় ভাঙনের শিকার হয়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। প্রতি বছর বন্যায় প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন জেলা।রাজ্যের অভিযোগ, বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি হলেও, সেই সময় যেভাবে নিয়মিত গঙ্গায় ড্রেজিং করার কথা ছিল তা করা হয় না। চুক্তির টাকাও দেওয়া হয়নি রাজ্যকে।

 
মঙ্গলবার রাজ্যসভায় ঋতব্রত বলেন, ‘ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে কোনও জল চুক্তি হলে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বাংলার উপর। গত কয়েক বছরে পূর্ব ভারতে নদীর গতিপ্রকৃতিতে বদল ঘটেছে। তার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে বাংলার উপর।’ তৃণমূল সাংসদের দাবি, ফরাক্কা চুক্তির কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছেন। এই চুক্তির প্রভাব পড়ছে সুন্দরবনের জনজীবনে। এমনকী কলকাতা বন্দরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ফরাক্কার জন্য। 
 
ফরাক্কা চুক্তির নবীকরণ হওয়ার কথা ২০২৬ সালে। বাংলাদেশ চাইছে দ্রুত এই চুক্তির নবীকরণ করতে। কিন্তু রাজ্য সরকারের এতে আপত্তি রয়েছে। এর আগেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিকবার এই বিষয়ে তাঁর আপত্তির কথা জানিয়েছেন। সরাসরি চুক্তির বিরোধিতা না করলেও কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছেন।
 
তিস্তা নদী নিয়ে ঋতব্রত বলেন, এই নদীর জলের উপরই উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলার মানুষের পানীয় জলের জোগান নির্ভরশীল। এছাড়া উত্তরবঙ্গে সেচের জলও আসে তিস্তা থেকে। তাই তিস্তার জল বাংলাদেশের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া উচিত নয়। ঋতব্রত স্পষ্ট জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে কোনওরকম জল চুক্তিই বাংলার সম্মতি ছাড়া করা উচিত নয়। তিস্তার স্থায়ী জল চুক্তি নিয়েও আপত্তি রয়েছে রাজ্যের। ঋতব্রতর দাবি, যে কোনও সিদ্ধান্তই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানিয়ে নেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি ইন্দো-ভুটান জলবন্টন কমিটি গড়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়েও সরব হন তিনি।
 
উল্লেখ্য, অতীতে বহুবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর মুখে তিস্তা ও ফরাক্কা চুক্তি নিয়ে আপত্তির কথা শোনা গিয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে হাসিনা সরকারের পতনের পর তিস্তা জলবন্টন নিয়ে আন্দোলনে নেমেছে বিএনপি। আবার বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিদল ভারত সফরে এসে ফরাক্কা বাঁধ পরিদর্শন করে গিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটেই এদিন এই দুই চুক্তি নিয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তৃণমূল সাংসদ।