বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়ে বহুবার রোষের মুখে পড়েছেন পুরকর্মীরা। কখনও তাঁদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠে এসেছে, কখনও আবার বন্দুক উঁচিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। এই নিয়েই চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন পুরকর্মীরা। বেআইনি বাড়ি ভাঙতে যাওয়ার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের নিয়ে কলকাতা পুরসভাও তাই যথেষ্ঠ চিন্তিত ছিল। এবার এই চিন্তা থেকে কিছুটা রেহাই পেল পুরসভা। সোমবার কলকাতার নগরপাল মনোজ বর্মা কলকাতা পুরভবনে এসে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে এক বিশেষ বৈঠক করেন। সেই বৈঠকেই বেআইনি নির্মাণ ভাঙার সময়ে কলকাতা পুলিশের সাহায্য চেয়ে নগরপালকে পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
তাঁদের হেনস্থা করা হয়েছে বলে এর আগেও একাধিকবার অভিযোগ করেছেন পুরকর্মীরা। চলতি বছরের জুলাই মাসের এক দুপুরে চারু মার্কেটের রাহিমুদ্দিন লেনে বেআইনি নির্মাণ ভাঙতে গিয়েছিল পুরসভার চার ইঞ্জিনিয়ার। সেখানে তাঁদের পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ইঞ্জিনিয়াররা। এরপর থেকেই কাজ বয়কট করার ডাক দিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ারদের একাংশ। এছাড়াও, বেহালায় একটি বেআইনি বাড়ি ভাঙতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়েছিলেন পুরকর্মীরা। অভিযোগ, তাঁদের একটি ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে তালা মেরে দেওয়া হয়। শেষে পুলিশ গিয়ে কোনও মতে তাঁদের উদ্ধার করে। মাস পাঁচেক আগে এন্টালিতে পাঁচতলা আবাসনের বেআইনি উপরের তল ভাঙতে গিয়ে মহিলাদের প্রবল বিক্ষোভ ও হেনস্থার মুখে পড়েন পুরকর্মীরা।
কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানান, বেআইনি নির্মাণগুলি ভাঙতে গিয়ে অনেক সময়েই মহিলাদের রোষের মুখে পড়েন পুরকর্মীরা। সঙ্গে মহিলা পুলিশ না থাকায় কোনও পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়না। উল্টে পুরসভার কর্মীদের উপরে চড়াও হতে দেখা যায় সকলকে। অভিযোগ, পরবর্তীকালে পুরসভার তরফে যদি কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তখন পুরকর্মীদের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়। কাজ করতে গিয়ে এই ধরনের হেনস্থার স্বীকার হতে হতে বিরক্ত কর্মী-ইঞ্জিনিয়ারেরা। তাই এই বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।
সূত্রের খবর, সোমবারের বৈঠকে এই সকল হেনস্থার কথা কলকাতার নগরপালকে বিস্তারিত জানানো হয়। কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম নগরপালের কাছে আবেদন করেন, বেআইনি বাড়ি ভাঙার কাজে সাহায্য করতে কলকাতা পুলিশের একটি বিশেষ বাহিনী গঠন করা হোক। বাহিনীতে পর্যাপ্ত মহিলা পুলিশকর্মী রাখার আবেদনও জানান মেয়র।
পুজোর ছুটিতে আপাতত বেআইনি নির্মাণ ভাঙার কাজ বন্ধ রয়েছে। কলকাতার প্রায় ৫০টি বেআইনি বাড়ি ভাঙার কাজ রয়েছে পুরসভার হাতে। ছুটির পরেই কাজ শুরু হবে। তাই কলকাতার নগরপালের কাছে মহানাগরিকের অনুরোধ, বেআইনি বাড়ি ভাঙার কাজে কলকাতা পুলিশের ওই বিশেষ দল দ্রুত গঠন করা হোক।