• facebook
  • twitter
Thursday, 5 December, 2024

জমি-সমস্যার দ্রুত সমাধান, পোস্তার পুজো উদ্বোধনে ব্যবসায়ীদের একাধিক উপদেশ মমতার

উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে অভিভাবকের সুরে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, 'কেউ যেন জুলুম না করে, জুলুম করলে এফআইআর করবেন। ব্যবসা আপনার অধিকার।'

চিত্র: এএনআই।

বুধবার পোস্তায় জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধন মঞ্চ থেকে ব্যবসায়ীদের মঙ্গলবার্তা শোনালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। বিগত কয়েক বছর ধরেই কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বড়বাজার এবং পোস্তাবাজারে জমি সংক্রান্ত সমস্যা চলছিল। এবার সেই সমস্যায় পড়বে ইতি। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে যে জমি সংক্রান্ত সমস্যা ছিল তা মলয় ঘটক দেখছেন। আদালতে এই মামলা উঠেছিল, একটি নির্দিষ্ট সিস্টেম বেরিয়ে এসেছে। এর পেছনে নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং ম্যাপিং-এর প্রয়োজন, যা কলকাতা কর্পোরেশন করছে।’ এরপরই মন্ত্রী মলয়কে নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করে নিন। আমি কোনো কাজ ফেলে রাখা পছন্দ করি না।’ পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ‘নরমে-গরমে’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কেউ ব্যবসায়ীদের উপর জুলুম করলে থানায় এফআইআর দায়ের করার পরামর্শ মুখ্যমন্ত্রীর। উল্লেখ্য, বুধবার বিকেলে পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের জগদ্ধাত্রী পুজোর পাশাপাশি হুগলির চন্দননগর ও ভদ্রেশ্বরের ১০টি জগদ্ধাত্রী পুজার উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে অভিভাবকের সুরে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘কেউ যেন জুলুম না করে, জুলুম করলে এফআইআর করবেন। ব্যবসা আপনার অধিকার।’ এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা এও মনে করিয়ে দেন যে তিনি কেবল নির্বাচনের সময় আসেন না বরং সারা বছরই মানুষের পাশে থাকেন। তাঁর ভাষায়, ‘এটা তো মানবেন, আমি শুধু ভোটের জন্য এখানে আসি না। এখানকার তিনটি আসনে বিজেপিই জেতে। ওটা কথা নয়। কিন্তু আমরা ৩৬৫ দিন মানুষের পাশে থাকি।’ এরপরই নাম না করে বিজেপিকে ‘কোকিল’-র সঙ্গে তুলনা করে কটাক্ষের সুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোকিল কুহু কুহু করে চলে যায়। কাক কিন্ত রোজই আসে। কাকের ডাক পছন্দ না হলেও মনে রাখবেন প্রতিদিনই কাকের দেখা পাওয়া যায়।’

পোস্তা এবং বড়বাজারের বাঙালির চেয়ে অবাঙালির বসবাস বেশি। কারও বাড়ি বিহারে, তো কারও উত্তরপ্রদেশে। বাংলাকে নিজের বাড়ি ভাবার আহ্বান জানিয়ে অবাঙালিদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই এলাকা তো মিনি ইন্ডিয়া। ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এখানে এসে বসবাস করেন। আপনাদের কখনও কোনো সমস্যা হয়েছে? আপনারা কী খান, কী পরেন, আপনার জাত কী, ধর্ম কী- এসব নিয়ে তো আমরা কখনও প্রশ্ন করি না। আমরা মানুষে ভেদাভেদ চাই না। বাংলা এমন জায়গা যেখানে সকলে মিলেমিশে থাকতে পারে। বাংলাই আপনাদের প্রত্যেকের ঘর।’ এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থেকে বিজেপির পাশাপাশি পরোক্ষ ভাবে পূর্বের বাম সরকারের খামখেয়ালিপনার দিকেও আঙ্গুল তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর ভাষায়, ‘আগে বড় বাজার এবং পোস্তা বাজারের চেহারা কেমন ছিল? আপনারা যা বলেছিলেন, আমি চেষ্টা করেছি পূরণ করার। আগে তো একটা থানাও ছিল না বড় বাজারে, আগুন লাগলে ফায়ার ব্রিগেডও আসতো না!’ এর সঙ্গে রেল-প্রসঙ্গও প্রতিধ্বনিত হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী-কণ্ঠে। যাত্রী নিরাপত্তা নিয়েও ক্ষোভপ্রকাশ করেন তিনি।

সর্বোপরি পোস্তা এবং বড়বাজারের ব্যবসায়ীদের একাধিক পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বড়বাজারে আগুন লাগলে দমকলকে দোষারোপ করবেন না।’ রোজ রোজ আগুন লাগবে কেন? এই প্রশ্ন ছুঁড়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘বহু মানুষ দাহ্য পদার্থ মজুত রাখছেন। এবার এই বিষয়ে সতর্ক হতে হবে। বড়বাজার কমিটি, পুলিশ, ফায়ার ব্রিগেড এবং কলকাতা কর্পোরেশন একত্রে একটি বৈঠক করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। প্রত্যেক দোকানে আগুন নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করুন।’ এর পাশাপাশি বড়বাজারের ঘিঞ্জি পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যে সকল পুরনো বাড়িতে কর্পোরেশন নোটিশ দেবে, তাঁরা বিবেচনা করবেন। আপনাদের জমি ছিনিয়ে নেওয়া হবে না বরং আপনারা সুরক্ষিত বাসস্থান পাবেন।’ কোভিডের সময় বন্ধ পোস্তা এবং বড়বাজারকে যে মুখ্যমন্ত্রীই ধীরে ধীরে খুলিয়েছিলেন, এদিন তাও স্মরণ করিয়ে দেন মমতা বন্দোপাধ্যায় খোদ। পোস্তা বাজার মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের তরফেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে বলা হয়, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হয়েও তিনি কিন্তু প্রতিটি দিকে নজর রাখেন। ব্যবসায়ীদের একাংশ সরকারি জুলুম নিয়ে অনুযোগ প্রকাশও করেন। এরপরই বক্তৃতা দিতে উঠে পরামর্শের সুরে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন না।’ ছট পুজোতেও জনসাধারণকে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘ধীরে ধীরে সকলে গঙ্গায় যান এবং পুজো করুন, কোনো তাড়াহুড়ো নয়। ছট পুজো উপলক্ষ্যে আমি গান রচনা করেছি। ঘাটে-ঘাটে আমার সেই গান আপনারা শুনতে পারবেন। পুলিশ সেই বন্দোবস্ত করবে। রাজ্য সরকার এই পুজো উপলক্ষ্যে দু’দিন ছুটি দিয়েছে।’ এদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী বেচারাম মান্না, মন্ত্রী সুজিত বোস, মন্ত্রী শশী পাঁজা, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম, বিধায়ক বিবেক গুপ্ত, বিধায়িকা নয়না বন্দোপাধ্যায়, কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা সহ প্রমুখ।