আজ দীপাবলি। আলোর উৎসবে মাতোয়ারা গোটা বাংলা। কিন্তু এখনও বিচার মেলেনি ৯ আগস্ট আরজি করে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ঘটনার। রাতের অন্ধকারে ট্রেনি চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। সেই কথাকেই মনে করিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করলেন আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ।
বৃহস্পতিবার, কালীপুজোর দিন ডক্টর কিঞ্জল নন্দ নিজের ফেসবুক পোস্টে তুলে ধরেন ‘অভয়ার ন্যায়বিচার’ এর নানান কথা। জনসাধারণের কাছে তাঁর আবেদন, আলোর উৎসবের আনন্দে কেউ যেন নিহত মহিলা চিকিৎসককে না ভোলেন।
পোস্টারটিতে লেখা হয়, ‘ন্যায় বিচারের জন্য আমাদের লড়াই চালিয়ে যাওয়া এবং এর সীমাহীন অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য আমরা কিছু কর্মসূচি নিয়েছি।’
কী কী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে?
৪ টি কর্মসূচির কথা ঘোষণা করা হয়েছে পোস্টারে। বিচারের দাবিকে সামনে রেখেই সেই কর্মসূচিগুলি নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে হল,
১। জাস্টিস থিমের রঙ্গোলি তৈরি, যেখানে সৃজনশীলতা ও বিপ্লবী মন মিলিত হবে
২। এই অন্ধকার সময়ে আমাদের একত্রিত করতে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে ৯টা থেকে ৯:১৫ লাইটস অফ লাইট আ ডিভা কর্মসূচি
৩। সমস্ত প্রতিবাদী হৃদয় ও মনকে একত্রিত করতে ২ মিনিটের জন্য নীরবতা পালন করুন
৪। আমাদের ন্যায়বিচারের জন্য চলমান লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে তার কাছে পৌঁছনোর জন্য ‘অভয়া ফানুস’।
উল্লেখ্য, ৯ আগস্ট আরজি করের ঘটনা সামনে আসার পরই উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা বিশ্ব। দিকে দিকে নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে চলে বিক্ষোভ, আন্দোলন। প্রথমে ঘটনার তদন্তভার থাকে কলকাতা পুলিশের হাতে। পরে তা হস্তান্তর করা হয় সিবিআইয়ের কাছে। ইতিমধ্যেই নির্যাতনের ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে। সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে চার্জশিট পেস করেও জানানো হয়েছে এই ঘটনায় দোষী একজনই, ধৃত সঞ্জয় রায়। তবে সেই দাবি মানতে নারাজ আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। যার জেরে ১৭ দিন নির্যাতিতার বিচারের দাবিতে এবং ১০ দফা দাবিকে সামনে রেখে পড়ুয়া চিকিৎসকরা ধর্মতলায় ‘আমরণ অনশন’ রত ছিলেন।
‘অনশনে’ বসার পরেও কেন মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন না, সেই দাবি তুলে সরকারকে ডেডলাইন বেঁধে দিয়ে ‘ গণ ইস্তফা ‘ র পথে হাঁটেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র চিকিৎসকরা। পাশাপাশি, বেসরকারি হাসপাতালেও চলে বিক্ষোভ।
ঘটনার জেরে ২১ অক্টোবর অবশেষে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ২ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে বৈঠক। বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে অপসারণ করা যাবে না, যা ১০ দফা দাবির মধ্যে জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রধান দাবি ছিল।
বৈঠক শেষে আন্দোলনরত চিকিৎসকেরা ধর্মতলার অনশন মঞ্চে ফিরে এসে অনশন প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন। তবে সরকারের চাপে পড়ে নয়, নির্যাতিতার মা – বাবার আর্জিতে তারা আমরণ অনশন প্রত্যাহার করেন বলে জানান। ২২ অক্টোবর ডাক দেওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য ধর্মঘটের। তাও তারা সেদিন প্রত্যাহার করেন।
তারপরও চলে একের পর এক বিক্ষোভ। গত শনিবার আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে ডাক দেওয়া হয় ‘ গণ কনভেনশন ‘ এর। সেখান থেকে আন্দোলনকারীরা সাফ জানিয়ে দেন যতদিন না নির্যাতিতার বিচার মিলছে ততদিন পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। আন্দোলনের তীব্রতা আরও বাড়বে বলে জানানো হয়েছে।
বুধবার, আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে করা হয় মশাল মিছিল। মশাল জ্বালিয়ে সিবিআই দপ্তর অভিযানে নামেন তারা। সিবিআই নির্যাতিতার বিচার অগ্রগতির সঙ্গে করুক এই দাবিতে ডাক দেওয়া হয় মশাল মিছিলের। আর আজ কালীপুজোর দিন আলোর উৎসবকে সামনে রেখে ফেসবুক পোস্ট করলেন কিঞ্জল।