লিগুড়ির এক গৃহিণী, সুজাতা কর্মকার, নতুন জীবন লাভ করার এক অভিজ্ঞতার সামিল হলেন। তার ডান স্তনে কার্সিনোমা ধরা পড়ার খবরে জীবনটা যেন স্তব্ধ হতে বসেছিল। বহু বছর আগে, তাঁর লিপোমার জন্য অস্ত্রোপচার হয়। কিন্তু এবার, তাঁর লক্ষণগুলির, একটি ছোট গর্ত হিসাবে সূত্রপাত।
ব্যাঙ্গালোরের ওল্ড এয়ারপোর্ট রোডের মণিপাল হাসপাতালে একটি বায়োপসি করা হয়েছিল। এটি রোগ নির্ণয়ের বিষয়টিকে নিশ্চিত করে। শুরুতে ভয়ে, হতাশায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে বলে মনে হয়েছিল তাঁর। অসহায়ত্ব তাঁকে ভিতর থেকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়।
অপ্রতিরোধ্য অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও, সুজাতা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেন। ডা. হেমন্ত জি এন, কনসাল্ট্যান্ট-সার্জিক্যাল অনকোলজি এবং রোবোটিক সার্জারি, এই অস্ত্রোপচার করেছিলেন। অ্যাক্সিলারি লিম্ফ নোড বিচ্ছিন্নকরণ, পুনর্গঠন, লিম্ফোভেনস অন্তর্ভুক্ত অ্যানাস্টোমোসিস, এবং কেমো পোর্ট ছিল এই সার্জারির অঙ্গ।
ডা. অমিত রাউথান, এইচওডি এবং কনসাল্ট্যান্ট-মেডিকেল অনকোলজি, হেমাটোলজি এবং হেমাটো-অনকোলজি, সুজাতার পরবর্তী চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত হন। এর মধ্যে 8টি চিকিৎসা অন্তর্ভুক্ত ছিল- কেমোথেরাপি, যা নেওয়ার সময় তিনি নিউরোপ্যাথি এবং নিউমোনিয়ার মতো চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিলেন। কেমোথেরাপি শেষ করার পর তিনি ডা. সিন্ধু পলের অধীনে রেডিয়েশন থেরাপি নেন।
যাত্রাটি মোটেও সহজ ছিল না-এটি তাঁর সাহস, ধৈর্য এবং বিশ্বাসের পরীক্ষা ছিল। কিন্তু তাঁর পরিবার এবং বন্ধুদের সমর্থন- বিশেষ করে তাঁর মেয়ের, যিনি নিজেও একজন ডাক্তার, গোড়া থেকেই তাঁর যত্ন নিয়েছিলেন।
সুজাতা তাঁদের সহানুভূতির জন্য মেডিকেল টিমকেও কৃতিত্ব দেন। তাঁর যাত্রার প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁকে গাইড করার জন্য ছিল সাইকো-অনকোলজি টিম। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে তাঁকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সার্জিক্যাল অনকোলজি অ্যান্ড রোবোটিক সার্জারির পরামর্শদাতা ডা. হেমন্ত জি এন বলেন, ‘স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা গত কয়েক দশকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হয়েছে। মাস্টেকটমি একসময় ছিল সেরা বিকল্প, যেখানে স্তন অপসারণই একমাত্র পথ বলে বিবেচনা করা হয়েছিল। অঙ্গচ্ছেদ রোগীদের শরীরের বিকৃতি সম্পর্কে চিন্তিত করে তোলে। কিন্তু অস্ত্রোপচারের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে, স্তন পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব হচ্ছে। সুজাতাদেবীর ক্ষেত্রে, আমরা স্বাস্থ্যকর স্তন টিস্যু সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম। শুধুমাত্র স্তনের আক্রান্ত অংশটি অপসারণ করা হয়েছে। এই পদ্ধতিটি কেবল তাঁর অঙ্গটি অক্ষত রাখতেই সহায়তা করেনি, চিকিৎসার সময় এবং পরে তাঁর মানসিক সুস্থতাও নিশ্চিত করেছিল।’
সুজাতা বহু নারীর কাছেই একটি জীবন্ত উদাহরণ। তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ আমার সাহস ও বিশ্বাসের পরীক্ষা নিয়েছিল। কিন্তু আমি কখনও একা ছিলাম না। পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব ছাড়াও, একটা গোটা মেডিকেল টিম আমাকে সবসময় সাহায্য করেছিল। আমি চাই যাঁরা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তাঁদের সবাইকে একটি কথাই বলতে, নিজের উপর বিশ্বাস রাখুন এবং কখনওই আশা হারাবেন না। এই যাত্রা কঠিন হতে পারে কিন্তু জয় নিশ্চিত।’ তিনি ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী ব্যক্তিদের, বর্তমানে আক্রান্তদের আশা দেওয়ার অনুরোধও করেন। বলেন, ‘যাঁরা এখনও এই জার্নির মধ্যে রয়েছেন, তাঁদের জন্য আশার দৃষ্টান্ত হয়ে উঠুন। তাঁদের মনে করিয়ে দিন যে, আলোর দিনগুলো আসবেই, অবশ্যই আসবে।’