কান শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শোনার ক্ষমতা চলে গেলে সেই ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে। কানে কম শোনার সমস্যা মূলত মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে। কিন্তু অনেকসময় ছোটদেরও এই সমস্যা হয়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পরে অর্থাৎ বারো, চোদ্দো কিংবা ষোলো পেরোলে ধীরে ধীরে শ্রবণশক্তি কমে যাওয়ার উপসর্গ দেখা দিতে পারে। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কোনও বিশেষ ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও কানে শোনার ক্ষমতা চলে যেতে পারে। একে বলে সাডেন সেন্সরি নিউরাল হিয়ারিং লস। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ এক কানে কম শোনা, কান ভোঁ ভোঁ করা বা মাথা ঘোরার উপসর্গ দেখা দেয়।
কোনও কোনও শিশুর কথা বলা শুরু করার পরেও, আচমকা শ্রবণশক্তি চলে যেতে পারে। তবে এক্ষেত্রে তাদের চিকিৎসা করা একটু সহজ হয়ে যায়। শিশুটি যেহেতু কথা বলতে জানে, তাই শুধুমাত্র শ্রবণশক্তি যদি তাকে ফিরিয়ে দেওয়া যায়, সে আর-পাঁচজন শিশুর মতোই স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
শুধু বার্ধক্যজনিত কারণেই নয়, অনেক সময়ে ভাইরাল ইনফেকশন, মাইক্রো স্ট্রোক বা কোনও বিরল ব্রেনের অসুখ অথবা টিউমার,মাথায় চোট লাগা বা ট্রমার কারণেও মানুষের শোনার ক্ষমতা চলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে স্টেরয়েডের মাধ্যমে চিকিৎসা করা সম্ভব। উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবিটিস থাকলে অনেক সময়ে স্টেরয়েড না দিয়ে ইনজেকশনও দেওয়া হয় কানে।
মূলত দুটি কারণে কানে কম শোনার সমস্যা হয়। এর মধ্যে একটি হল কনজেনিটাল এবং দ্বিতীয়টি অ্যাকয়ার্ড। কনজেনিটাল সমস্যা হয়
জন্মগতভাবে কানে শোনার নার্ভটি ডেভেলপ না হলে, গর্ভাবস্থায় মায়ের কোনও জটিল অসুখ হলে বা জন্মের পর শিশুর জটিল কোনও ভাইরাল ইনফেকশন হলে।
অ্যাকয়ার্ড সমস্যা ৬০-৭০ বছর বয়সের পর শরীর কমজোরি হয়ে গেলে হয়। এছাড়া কানে কোনও বড় চোট পেলেও হতে পারে।
কানে ময়লা জমে শক্ত হয়ে গেলেও কম শুনতে পারেন। অনেক সময় মিডিল ইয়ার-এ সর্দি জমে গেলে তখন কানে শব্দ কম প্রবেশ করে। কানের পর্দা ফুটো হয়ে গিয়ে পুঁজ জমলেও হতে পারে শোনার সমস্যা।
বয়সজনিত কারণে শরীর কমজোরি হয়ে যদি কানে শোনার সমস্যা হয়, তাহলে হিয়ারিং এইড দিয়ে সমস্যা দূর করা যেতে পারে। এটি এমনই একটি ছোট্ট যন্ত্র, যা মূলত শব্দকে অ্যামপ্লিফাই করে দ্বিগুন জোরে কানে পৌঁছে দেয়। কানের ভিতরের নার্ভ দুর্বল হয়ে গেলে হিয়ারিং এইড ব্যবহারের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। অ্যানালগ হিয়ারিং এইড এবং ডিজিটাল হিয়ারিং এইড পাওয়া যায় বাজারে। তবে অ্যানালগ হিয়ারিং এইড-এ শব্দ জোরে শোনা গেলেও, তা দূষণমুক্ত থাকে না। ফলে শব্দের উৎস সঠিক নির্ণয় করতে পারেন না রোগী। তাই এই হিয়ারিং এইড-এর জনপ্রিয়তা কম।
তুলনায় ডিজিটাল হিয়ারিং এইড-এর জনপ্রিয়তা বেশি। কারণ, এই ডিজিটাল হিয়ারিং এইড পরিবেশগত শব্দকে অ্যামপ্লিফায়েড করে না, ফলে রোগী নয়েজ ফ্রি শব্দ শুনতে পান। অবশ্য বাজারে এখন আরও নানারকম মডার্ন হিয়ারিং এইড চলে এসেছে। এগুলি অনেক উন্নত এবং কসমেটিক্যালি গ্রহণযোগ্যও। সাধারণত বেশি ব্যবহার হয় বডি ওর্ন হিয়ারিং এইড, বিহাইন্ড দ্য ইয়ার হিয়ারিং এইড, ইন দ্য ক্যানেল হিয়ারিং এইড প্রভৃতি।