শিশুকে সঠিক সময়ে খাওয়ানো খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত পেডিয়াট্রিশিয়ানরা বলেন, নবজাতক শিশুকে প্রতি ২ থেকে ৩ ঘণ্টা অন্তর খাওয়ানো উচিত। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ থেকে ১২ বার শিশুকে দুধ খাওয়ানো যেতে পারে।
প্রথম ৬ মাসে শিশুকে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো উচিত। মায়ের দুধে রয়েছে শিশুর জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত পুষ্টি এবং অ্যান্টিবডি, যা শিশুর বাড়বৃদ্ধিতে এবং তার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে অত্যন্ত কার্যকর।
অনেক সময় বাচ্চারা বিভিন্ন কারণে মায়ের দুধ পায় না কিংবা খেতে পারে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শিশুকে বাজারজাত টিনড দুধ খাওয়াতে হবে। কেনার আগে প্যকেজড দুধের এক্সপায়ারি ডেট অবশ্যই চেক করে নেবেন। সঠিক কম্পোজিশন আছে কিনা এবং দুধের গুণগত মান উপযুক্ত কিনা, তা যাচাই করে নিন। যদি কেনা দুধ খাওয়ানোর ফলে শিশুর কোনও সমস্যা হয়, শিশুটিকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে হবে।
শিশুদের প্রতিবার খাওয়ানোর পর তাদের বিশেষ একটি পদ্ধতিতে ঢেঁকুর তোলানো হয়। যাকে ইংরেজিতে ‘বেবি বার্প’ বলে। বাচ্চারা খাওয়ার সময় বাতাস গিলে ফেলে। এর ফলে পেটে গ্যাস জমে যেতে পারে। পেট ফাঁপা বা পেটে ব্যথাও হতে পারে এর কারণে। তাই শিশুর পেটের এই অতিরিক্ত বাতাস বের করে দেওয়া যায় শিশুকে ঢেঁকুর তোলানোর মাধ্যমে। এর জন্য হাত দিয়ে খুব আস্তে আস্তে শিশুর পিঠে চাপড় দেওয়া হয়, যতক্ষণ না পর্যন্ত শিশু ঢেঁকুর তুলছে।
দুধ খাওয়ার কারণে শিশুদের জিভে সাদা একটি স্তর পড়তে দেখা যায়। এটিকে বলা হয় ওরাল থ্রাস। এই ওরাল থ্রাস নিয়মিত পরিষ্কার না করলে, শিশুদের জিভে ঘা হয়ে যেতে পারে। তাই একটি পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করুন। কাপড়টি গ্লিসারিনে ডুবিয়ে শিশুর জিভ পরিষ্কার করে দিন।
সবসময় আপনার শিশুকে পরিষ্কার পোশাক পরাবেন। মনে রাখবেন, নোংরা পোশাক থেকে ত্বকে র্যাশ, চুলকানি প্রভৃতি সমস্যা হতে পারে। শিশুদের নখ খুব দ্রুত বৃদ্ধি পায়। নখ নিয়মিত কাটবেন। নয়তো নখের আঁচড় লেগে শিশুর মুখে বা শরীরের যে-কোনও জায়গায় কেটে যেতে পারে। শিশু মুখে প্রায়শই হাত দেয়। নখে জমা নোংরা মুখে যাওয়া স্বাস্থ্যকর নয়।
আজকাল মায়েরা শিশুদের সবসময় ডায়পার পরিয়ে রাখেন। মনে রাখবেন, ডায়পার ব্যবহারের কারণে বাচ্চার ত্বকে র্যাশ বা ফুসকুড়ির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিজে থাকার কারণে বাচ্চার ত্বকে চুলকানিও হতে পারে। ত্বকে লাল-ভাব দেখা দিতে পারে। এই সমস্যা এড়াতে চেষ্টা করবেন বাচ্চাকে দিনের বেশিরভাগ সময়ে ডায়পারের পরিবর্তে, পাতলা কাপড়ের ন্যাপি পরাতে। বিকল্পে সুতির ডায়পার ব্যবহার করাই ভালো। যদি এরপরও শিশুর ত্বকে ফুসকুড়ি কিংবা লাল-ভাব দেখা যায়, তাহলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হতে পারে এটা অ্যালার্জির সমস্যা।
শিশুদের ত্বক খুবই নরম প্রকৃতির হয়। তাই সংস্কারবশত ওদের ত্বকে কাজল, সিঁদুর, হলুদ, চন্দন প্রভৃতি লাগাবেন না। মনে রাখবেন এসব পণ্যে রাসায়নিক পদার্থ থাকতে পারে। অনেকেরই ধারণা আছে শিশুকে রোদে রাখা ভালো। কিন্তু কখনওই ওকে সরাসরি প্রখর সূর্যের তাপে রাখবেন না। ওদের জন্য সকালের সূর্যের তাপই সবথেকে ভালো।