• facebook
  • twitter
Tuesday, 14 January, 2025

সোরিয়াসিসে প্রদাহের কারণ কী?

সোরিয়াসিসের প্রদাহ পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার, অন্ত্রের রোগ এবং সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

ফাইল ছবি

অসুখটির নাম সোরিয়াসিস। যদিও সোরিয়াসিসের সঠিক কারণ অজানা, ডাক্তাররা এটিকে একটি ইমিউন-মিডিয়েটেড ইনফ্লামেটরি ডিজিজ হিসাবে গণ্য করেন। এর মানে হল, এই অবস্থার মূলে রয়েছে প্রদাহ।

সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের, ইমিউন সিস্টেমের অক্ষমতায় ত্বকের মাঝের স্তরে(যা ডার্মিস নামে পরিচিত) ইনফ্লামেটরি বা প্রদাহজনক কোষ তৈরি হয়। এই অবস্থা বাহ্যিক ত্বকের স্তর এপিডার্মিসেও, এই ধরনের কোষের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে। সাধারণত, ত্বকের এই ইনফ্লামেটরি কোষগুলি এক মাসের মধ্যে বৃদ্ধি পায় এবং ফেটে যায়। সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়াটি মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে অতি দ্রুততার সঙ্গে ঘটে। ত্বকের কোষগুলি ত্বকের পৃষ্ঠে স্তরের মতো জমা হতে থাকে, যার ফলে অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। আঁশ ওঠা, ফোলাভাব এবং লালচেভাব বা বিবর্ণতা দেখা দেয় ত্বকে।

সোরিয়াসিসের প্রদাহ পুরো শরীরকে প্রভাবিত করে। এটি হৃদরোগ, ক্যান্সার, অন্ত্রের রোগ এবং সোরিয়াটিক আর্থ্রাইটিসেরও ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। অনেকেই জানতে চান, প্রদাহ নিরাময়ের কোনও উপায় আছে কি? যদিও সোরিয়াসিসে প্রদাহের কারণ ইমিউন সিস্টেমের অনিয়ম- তাই জীবনশৈলী এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে এই প্রদাহ কিছুটা কমতে পারে।

কিছু পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে, সোরিয়াসিস আক্রান্ত বহু মানুষ কিছুটা উপশম লাভ করেছেন। যেমন সোরিয়াসিসের চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয় বিশেষ কিছু ওষুধ, যা প্রদাহ কমানোর কাজ করে। এর মধ্যে রয়েছে কর্টিকোস্টেরয়েড, যা ইঞ্জেকশন এবং মৌখিক ওষুধের দ্বারা রোগীকে দেওয়া হয়। সোরিয়াসিসে আক্রান্ত কিছু রোগীর অন্যদের তুলনায় আরও ব্যাপক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়।

কীভাবে প্রদাহ নিয়ন্ত্রণ করা যায়

যদিও বর্তমানে সোরিয়াসিসের সম্পূর্ণ নিরাময় নেই, কিন্তু সোরিয়াসিসের প্রদাহ কমাতে এবং উপশমে কিছুটা সাহায্য করতে পারে পুষ্টিকর ডায়েট। গবেষণায় দেখা গেছে যে, নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যাভ্যাস সোরিয়াসিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে এবং লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সোডা ও প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন সল্টেড স্ন্যাক্স, মিষ্টি এবং প্রক্রিয়াজাত মাংসের প্রোডাক্ট।
প্রদাহ কমাতে খেতে হবে ফল, শাকসবজি ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার, যেগুলি সোরিয়াসিসের লক্ষণকে হ্রাস করে।
পরিমিত ওজন বজায় রাখাও খুব জরুরি। দেখা গেছে স্থূলতা সোরিয়াসিসে একটি ঝুঁকির কারণ। এই রোগে আক্রান্তরা যাদের স্থূলতা রয়েছে, তারা তুলনায় বেশি গুরুতর উপসর্গ অনুভব করতে পারেন। ওজন হ্রাস করা, সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সহায়তা করতে পারে।

অন্যান্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস যা প্রদাহ কমাতে এবং সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি উন্নত করতে সাহায্য করতে পারে তা হল, ধূমপান এড়িয়ে চলা বা ছেড়ে দেওয়া। অতিরিক্ত মাত্রায় মদ্যপান প্রদাহের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সোরিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাঁদের তুলনায় যাঁদের হাঁটাচলায় অনীহা- তাঁরা এ রোগের প্রকোপ বেশি অনুভব করেন। এছাড়া পর্যাপ্ত ঘুম শরীরে প্রদাহ হ্রাস করে। ধ্যান এবং যোগের মতো মানসিক চাপ কমানোর কৌশলগুলিও সাহায্য করতে পারে।
কখন চিকিৎসকের সাহায্য নিতে হবে

সোরিয়াসিসের লক্ষণ এবং প্রদাহ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে যাওয়ার আগেই, চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। চিকিৎসক লক্ষণের তীব্রতার উপর ভিত্তি করে চিকিৎসা পদ্ধতি নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তনের জন্য পরামর্শ দেবেন রোগীকে, যা সোরিয়াসিসের লক্ষণগুলি কমাতে সাহায্য করতে পারে।