বাঙালিদের রান্নায় বরাবরই সরষের তেল অপরিহার্য। কিন্তু কখনও এই তেলের বিবিধ গুণ নিয়ে ভেবে দেখেছেন কি? অধিকাংশ পুষ্টিবিদ মনে করেন যে বাঙালিরা যে-ধরনের নন-রিফাইন্ড সরষের তেল ব্যবহার করেন রোজের রান্নায়, তার গুণ অসীম এবং শরীরে ভিটামিন ই-এর জোগান অব্যাহত রাখার জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়ও বটে।
কেন প্রয়োজনীয় তা নিয়ে বিশদে বলা যাক। ভিটামিন ই আমাদের ইমিউনিটি অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধী ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি হলে যে-কোনও শারীরিক অসুস্থতার সঙ্গে লড়াই করার শক্তিও জন্মায়। এছাড়া সৌন্দর্য সচেতনদের ক্ষেত্রে ত্বক আর চুলের স্বাস্থ্যের জন্যেও খুবই কার্যকর এই খাঁটি সরষের তেল। ঘানি থেকে আনা দূষণ ও ভেজালমুক্ত সরষের তেল, বাচ্চাদের ত্বকে মালিশ করার রেওয়াজ এখনও আছে গ্রামাঞ্চলে। এর অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল গুণ বাচ্চার শরীর ভালো রাখে ও পেশির শক্তি বাড়ায়- এমনটাই মনে করা হয়।
পুষ্টিবিদদের মতে যে-কোনও নন-রিফাইন্ড তেল তৈরি করা হয়, কোল্ড প্রেসড পদ্ধতিতে। অর্থাৎ, বীজ থেকে তেল বের করার সময়ে তাপ প্রয়োগ করা হয় না। ফলে তেলের সব গুণ বজায় থাকে। এতে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা কম। ভিটামিন ই তো থাকেই নন-রিফাইন্ড সরষের তেলে, সেই সঙ্গে থাকে ওমেগা থ্রি ও সিক্স। এই দু’টি উপাদানই আসলে অতি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড।
মা-ঠাকুমারা বাঙালি রান্নার যে-পরম্পরা বহন করেছেন, তার সঙ্গে সরষের তেলের ঝাঁঝ খুব মানানসই। তার চেয়েও বড়ো কথা হচ্ছে, সরষের তেলের স্মোকিং পয়েন্ট বেশি। তাই ডিপ ফ্রাই যেমন করা যায়, তেমনি যে-কোনও রান্নার উপরে কাঁচা তেল ছড়িয়ে দিলে– খাবারের স্বাদ বেড়ে যায়। সরষের তেলের প্রভাবে লিভার আর প্লীহা ভালো থাকে, তা বাড়ায় হজমশক্তি। এর লিনোলেয়িক আর ওলেয়িক অ্যাসিড কমায় প্রদাহ বা ইনফ্ল্যামেশন। তাই যাঁরা পেটের অসুখ বা হজমের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের রোজের রান্নায় সরষের তেল ব্যবহার করা উচিত। হার্টের রোগী বা ডায়াবেটিক পেশেন্টকেও তা স্বচ্ছন্দে দিতে পারেন। সরষের তেল ভারী, এবার এই ধারণা ভাঙার সময় এসেছে।