ছোটদের মধ্যে বাড়ছে টাইপ-২ ডায়াবিটিস

ছোটদের স্বাস্থ্যহানির আশঙ্কা ক্রমাগত বাড়াচ্ছে টাইপ ২ ডায়াবিটিস। একসময় শুধু বয়স্কদের শরীরে এই অসুখের প্রবণতা বেশি দেখা যেত। বর্তমানে এই রোগের কবল থেকে বাদ যাচ্ছে না শিশুরাও। মাত্র ১০ বছর বয়সেই এই রোগ বাসা বাঁধতে পারে শিশুর শরীরে।

আগে টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস সাধারণভাবে বাচ্চা এবং কিশোরদের মধ্যে বেশি দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু গবেষণা বলছে, বর্তমানে বাচ্চারা বেশি সংখ্যায় টাইপ টু ডায়াবিটিস-এর শিকার হচ্ছে। শৈশবেই যদি সন্তান ডায়াবিটিস রোগের শিকার হয়ে পড়ে, তাহলে অভিভাবকদেরই খুঁজতে হবে সমস্যা সমাধানের সঠিক পথ।

এই রোগের কারণ হিসাবে সনাক্ত করা হচ্ছে আধুনিক জীবনশৈলীকে। চিকিৎসকরা বলছেন, দশ বছর আগে যেখানে মাসে একটি বা দুটি রোগী পাওয়া যেত, বর্তমানে সংখ্যাটা মাসে ৫-১০–এ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক বছরে রোগীর সংখ্যা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। সেটা ভয়ের হলেও অস্বাভাবিক নয়। কারণ আধুনিক জীবনে স্বাস্থ্যকর খাবারের জায়গা দখল করছে জাংকফুড। ছোটরা আজকাল অতিরিক্ত ফাস্টফুড আর সুইটনার-যুক্ত ড্রিংকসে আসক্ত। সেইসঙ্গে কোনও শারীরিক কসরতে তারা বিমুখ। মাঠে গিয়ে খেলাধুলো করার অভ্যাস লাটে উঠেছে। এর ফল হচ্ছে মারাত্মক। ওবিসিটি আর টাইপ টু ডায়াবিটিস, দুইয়েরই প্রবণতা বাড়ছে। এই অসুখ শরীরে প্রকাশ পাওয়ার ফলে অস্বাভাবিক মাত্রায় গ্লুকোজ বৃদ্ধি হয়। এটাও ওবিসিটির একটি কারণ।


টাইপ টু ডায়াবিটিস-এর শিকার, হলে সহজে এর থেকে পরিত্রাণ মেলে না। যখন মা-বাবা জানতে পারেন যে, তাদের সন্তানকে সারাজীবন এই রোগটি বয়ে বেড়াতে হবে- তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। মা-বাবার মতো শিশুর মনের উপরেও এই রোগের প্রভাব পড়ে। তারা নিজেদের অন্য বাচ্চাদের থেকে আলাদা ভাবতে শুরু করে। এক মূল কারণ, রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, তাদের জীবনে অনেক বিধিনিষেধ কায়েম করা হয়। এর ফলে শিশুর মধ্যে আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিতে পারে।

ডায়াবিটিস টাইপ-২ একটি ক্রনিক রোগ। এই রোগের শিকার যারা হয়, তাদের প্যানক্রিয়াস-এ ইনসুলিন তৈরি হয় না অথবা তৈরি হওয়ার মাত্রা খুবই কম। তার ফলে বাইরের উৎস থেকে শরীরকে ইনসুলিন দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।
এই রোগে আক্রান্ত বাচ্চারা অবসাদে ভোগে এবং একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যায়।

সবচেয়ে বেশি হতাশাজনক পর্যায় হল ডায়াবিটিস বার্নআউট। এটা সেই পরিস্থিতি যখন রোগী ডায়াবিটিস নিয়ন্ত্রণ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

পরিস্থিতি এমনও দাঁড়ায়, যেখানে বাচ্চা নিজের ব্লাড গ্লুকোজ লেভেল মনিটার করতে বা রেকর্ড করতে এবং ইনসুলিন নিতে বিরক্ত বোধ করে। এই ক্ষেত্রে সন্তানের ডায়াবিটিস ম্যানেজমেন্ট-এর দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিজেদের কাঁধে তুলে নিতে হবে। বাচ্চাকে তার শারীরিক সমস্যাগুলি, নিজেই নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দিন। তবে প্রতিকার নয় প্রতিরোধের বিষয়ে আগে সচেতন হওয়া দরকার। ছোটদের ফাস্ট ফুড খাওয়া থেকে বিরত করুন।