মৃতা চিকিৎসকের মোবাইলের তথ্যের উপর জোর দিতে চাইছে সিবিআই

আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রী তরুণী চিকিৎসকের খুন ও ধর্ষণের ঘটনায়, নিহতের মোবাইল ফোনের তথ্যের উপরে বেশি জোর দিতে চাইছেন সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা। নিহত ছাত্রী চিকিৎসকের মোবাইল ঘেঁটে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

সূত্রের খবর, মৃতা ওই চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটনার রাতে কে কে কথা বলেছিলেন। একইসঙ্গে কে কে এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন, মোবাইলের কল লিস্ট ঘেঁটে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা করবেন তদন্তকারীরা। যদিও বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ তাঁর প্রেমিকের সঙ্গে শেষবার কথা হয় ওই তরুণী চিকিৎসকের। সেক্ষেত্রে তাঁকেও জেরা করা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার রাতে নিহত চিকিৎসক কার কার সঙ্গে কী কী কথা বলেছিলেন, মূলত সেটাই জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। সেক্ষেত্রে মনে করা হচ্ছে, সেই কল লিস্টের সূত্র ধরে একাধিক ব্যক্তিকে জেরা করা হতে পারে।


ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে আরজি কর কাণ্ডের তদন্তে নেমেছে সিবিআই। মঙ্গলবার মামলার শুনানিতেও এই ঘটনায় আরও কারও যুক্ত থাকার সম্ভাবনাকে মান্যতা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম রায় ঘোষণার সময় জানিয়েছে, ৫ দিনে মাত্র ১ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছে পুলিশ। এবার দেখার, নির্যাতিতার ফোনের কল লিস্ট থেকে কোন কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে আসে।

বুধবার অভিযুক্ত সিভিক ভলেন্টিয়ার সঞ্জয় রায়কে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এদিন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে তাকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পথেই রুট বদলে আলিপুরের কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়।

জানা গিয়েছে, মাঝপথে জোকা ইএসআই হাসপাতালে চিকিৎসকদের বিক্ষোভের খবর পান সিবিআইয়ের আধিকারিকরা। এরপরেই সিদ্ধান্ত বদলে ধৃতকে কমান্ড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তারপর সেখানেই ধৃতের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়। এরপর তাকে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাত ১১টা নাগাদ তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে শেষবার কথা হয় তাঁর প্রেমিকের। এর পর সেমিনার রুমে অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে নৈশাহার করেন তিনি। তার পর সেখানেই চাদর গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন তিনি। শুক্রবার সকালে ওই সেমিনার রুম থেকেই ছাত্রী চিকিৎসকের অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

কারা ধর্ষণ ও খুন করল ওই পড়ুয়া চিকিৎসককে? ওই ছাত্রী চিকিৎসক যে একা সেমিনার রুমে রয়েছেন, তা কি আগে থেকেই কেউ বা কারা চিহ্নিত করে রেখেছিল? গভীর রাতে কী করে অভিযুক্ত সঞ্জয় রায় সেমিনার রুমে ঘুমন্ত ওই ছাত্রী চিকিৎসকের সন্ধান পেলেন? তা নিয়েও একাধিক প্রশ্ন উঠেছে।

ওদিকে পুলিশ দাবি করেছে যে, জেরায় সঞ্জয় তাঁদের জানিয়েছে, অপারেশন থিয়েটার খুঁজতে গিয়ে সেমিনার হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি। কিন্তু এই বয়ান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে যে, সাধারণত অত্যন্ত জরুরি অস্ত্রোপচার ছাড়া রাতে অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকে। সেক্ষেত্রে এত রাতে অপারেশন থিয়েটার খোঁজার দরকার পড়ল কেন সঞ্জয়ের?

যদিও সঞ্জয়ের এই দাবির স্বপক্ষে পুলিশের হাতে এখনও কোনও পোক্ত প্রমাণ নেই। স্রেফ অভিযুক্তের বয়ানের ভিত্তিতেই তদন্ত এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ। সেক্ষেত্রে নিহত ছাত্রী চিকিৎসকের কল লিস্ট থেকে এই সব প্রশ্নের জবাব মিলতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।