‘হাজি নুরুল যেদিন জিতবে, আমার প্রথম ভিজিট হবে সন্দেশখালি’, বসিরহাট থেকে মমতা

নিজস্ব প্রতিনিধি— মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের টার্গেটে এবার সপ্তম দফার নির্বাচন৷ সেই উদ্দেশ্যেই তিনি পাড়ি দেন বসিরহাট৷ বসিরহাটের তৃণমূল প্রার্থী হাজি নুরুল ইসলামের সমর্থনে বসিরহাট দক্ষিণে মুখ্যমন্ত্রী করেন একটি জনসভা৷ উল্লেখ্য, এদিনের বসিরহাটের সভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই উপস্থিত ছিলেন দমকল মন্ত্রী সুজিত বোস এবং বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ এদিনের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি বধের হাতিয়ার হিসেবে বেছে নেন সন্দেশখালিকেই৷ বক্তব্যের শুরুতেই বিজেপিকে প্রচ্ছন্ন হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, “সন্দেশখালির মা বোনেদের সঙ্গে যা ঘটেছে, তার জন্য হূদয়ের অন্তঃস্থল থেকে দুঃখিত৷ মা-বোনেদের নিয়ে যেন অসম্মানের খেলা কেউ না খেলে৷ ভোটের আগে বিজেপির প্ল্যান-এ ছিল সন্দেশখালি৷ বাতিল হয়ে গিয়েছে৷ মা বোনেরাই বাতিল করে দিয়েছেন৷ এখনও প্ল্যান বি জারি রয়েছে৷ ধর্মস্থানে অশান্তি তৈরির চেষ্টা করা৷ আমি বলি, দাঙ্গা লাগাতে আমরা দেবো না৷” এরপরই সরাসরি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে আক্রমণ করে মমতা বলেন, “প্রধানমন্ত্রী, আপনি একজনকে ফোন করছেন আর সেটা সবাইকে শোনাচ্ছেন! কতজনের খোঁজ নেন? আপনার আমলে আপনার রাজ্য উত্তরপ্রদেশে সবথেকে বেশি মহিলারা অত্যাচারিত হয়েছেন৷ দলিতদের উপর অত্যাচার হয়েছে৷ আমাদের এখানে হয় না৷ আমাদের এখানে যে দু’-একটা ঘটনা হয়, আমরা সঙ্গে সঙ্গে তার ব্যবস্থা নিই৷ রাম হোক বা রহিম কেষ্ট হোক বা বিষ্টু৷ সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়৷” পাশাপাশি, তৃণমূল প্রার্থী এই কেন্দ্রে জিতলে সন্দেশখালি যাবেন মুখ্যমন্ত্রী৷ “হাজি নুরুল যেদিন জিতবে, আমার প্রথম ভিজিট হবে সন্দেশখালি তার কারণ আমি তাঁদের দেখতে যাবো”, প্রতিশ্রুতি মমতার৷

মঙ্গলবার মমতার বক্তৃতায় এর পাশাপাশিই উঠে এসেছে সন্দেশখালির আরও কথা৷ সরাসরি উল্লেখ না করেও সন্দেশখালি স্টিং ভিডিয়োর ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করেছেন মমতা৷ তিনি বলেন, “বিজেপি চক্রান্ত করতে কোটি কোটি টাকা খরচ করে, ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয় না৷” এই প্রসঙ্গেই পরোক্ষভাবে আক্রমণ শানিয়েছেন বিজেপি নেতা সমিত মন্ডলকে, যাঁর কাছ থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ৷ নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মমতা বলেন, “ভোটের আগে কাউকে ২০০০, চক্রান্ত করার জন্য ৫০০০ টাকা৷ এই তো পার্টি অফিস থেকে কোটি কোটি টাকা বের হচ্ছে৷

আর যে সেটা ধরল, তাকেই নির্বাচন কমিশন সাসপেন্ড করে দিল৷ কীভাবে চলছে আমাদের দেশটা!” আবারও বিজেপি নেতারা ব্যক্তিগত আক্রমণ করলে মানহানির মামলা করবেন মুখ্যমন্ত্রী, জানিয়ে দিলেন বসিরহাটের সভা থেকে৷ তিনি বলেন, “মোদীবাবু বড় বড় বিজ্ঞাপন দিয়েছিলেন মোদীর গ্যারান্টি বলে৷ আমাদের আক্রমণ করছিল৷ এটা বেআইনি৷ আমরা বারবার বিচার চেয়েও পাচ্ছিলাম না৷ অবশেষে হাইকোর্ট বলে দিয়েছে, হ্যাঁ এটা বেআইনি৷ এরপরও আমাকে এবং আমার দলকে অপমান করেছে৷ আমি মানহানির মামলা করব৷” ২৬ হাজার চাকরি বাতিল নিয়েও বসিরহাটে সরব মমতা৷ তিনি বলেন, “একজন বোমা ফাটিয়ে নাচছিলেন ধিন তাক ধিন তাক তা৷ কী না ২৬ হাজার চাকরি খেয়েছে!” নাম না করে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ মমতার৷


“এনআরসি আমি বাংলায় করতে দেবো না”, গর্জে উঠে বলেন মমতা৷ ৪ তারিখের পর সরকার বদলাবে, দাবি মমতার৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “শুনুন যেটা আমি বুঝি না, আপনি বোঝেন না, সেটা দেশ বোঝে৷ দেশ বোঝে বলেই আমাদের কাছে খবর আসছে৷ আর খবরটা জেনুইন৷ যে বিজেপি হারছে৷ ওরা দেশ থেকে যাচ্ছে৷ এদের কাজ হচ্ছে মিথ্যে প্রচার করা৷ চারিদিকে বলে গেল তৃণমূল চোর হ্যায়৷ সবচেয়ে বড় চোরেদের ডাকাতের সবচেয়ে বড় ডাকাত কে? বিজেপি দল৷ যেদিন ফাইল খুলবে, সেদিন বুঝবেন দেশের টাকা লুঠ হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে৷” যেকোনো সমস্যায় সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীকে লেখা যাবে চিঠি, জানিয়ে দিলেন মমতা৷ বসিরহাট থেকে তিনি বলেন, “যদি আপনাদের মনে হয়, কারও উপরে রাগ আছে৷ আপনাদের বলার অধিকার আছে৷ আপনারা একটা চিঠি আমার বাডি়তে পৌঁছে দেবেন৷ আমি একদিন হোক দু’দিন হোক, আমি ঠিক দেখে নেব৷ চিঠিটা আর্জেন্ট হলে আগে করে দেব৷ সব করতে পারি তা তো নয়৷ কিন্ত্ত ৯৯.৯ শতাংশ ক্ষেত্রে যতটা করতে পারি, করে দিই৷” সভাস্থল থেকে রাজ্য সরকারের কার্যের খতিয়ান তুলে ধরে মমতা বলেন, “আমরা যা বলেছিলাম তা করেছি, বরং আরও বেশিই করেছি৷ কিন্ত্ত মানুষের রেশন, জল, একশো দিনের কাজের, আবাসের এই সব টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্র সরকার৷ বিজেপির কাজ মিথ্যে কথা বলা৷” বসিরহাটে দাঁড়িয়েই নতুন ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর৷ আলাদা জেলার তকমা পেতে পারে বসিরহাট, জানিয়ে দিলেন তিনি৷ এ প্রসঙ্গে মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেন, “সুন্দরবন নিয়ে নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি, আপনাদের জেলা (উত্তর ২৪ পরগনা) নতুন জেলা হবে৷ বারাসাতে গিয়ে সব কাজ করতে আপনাদের অসুবিধা হয়৷ বসিরহাটের বেশির ভাগ অঞ্চলগুলি নিয়ে একটা জেলা হবে৷ ওই দিকে বকখালি সাগরদ্বীপ নিয়ে আরও একটা জেলা হবে৷ নতুন জেলা হলে সাব ডিভিশন হবে, ব্লক হবে৷ সুতরাং কাছাকাছি মানুষ নিজের কাজ করতে পারবেন৷”