হাসপাতালের নিরাপত্তা জোরদার করতে স্বাস্থ্যসচিবকে চিঠি দিলেন মুখ্যসচিব 

নবান্ন। ফাইল চিত্র

রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলির চিকিৎসাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। রাজ্যে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্ষেত্রে নিরাপত্তাজনিত নানা ব্যবস্থা এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নত পরিষেবা দিতে  রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমকে চিঠি দিয়েছেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ। রাজ্যের আপামর নাগরিকদের সুরক্ষা, চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশাবলী জারি করে রাজ্য সরকার।  প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরকে এই বিষয়গুলি নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বলা হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে সিকিউরিটি অডিটও করা হবে। এর দায়িত্বে অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস তথা প্রাক্তন ডিজি সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ।

 
স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের  নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কেন্দ্রীয় হেল্পলাইন নম্বর কার্যকর করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের হেল্পলাইনগুলি যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চালু করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অ্যাক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম সহ একটি ‘প্যানিক কল বাটন অ্যালার্ম সিস্টেম’ চালু করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে মুখ্যসচিব লিখেছেন, হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী তথা সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত পুলিশকর্মী মোতায়েন রাখতে হবে। বিশেষ করে মহিলা পুলিশকর্মীর সংখ্যা যাতে পর্যাপ্ত থাকে, সেদিকে নজর দিতে বলা হয়েছে। রাত্রে প্রতিটি হাসপাতালে স্থানীয় থানার পুলিশের টহলদারি টিম রাখার  নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্য দফতরকে এই বিষয়গুলি নিয়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে আলোচনায় বসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
 
স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে  অন ডিউটি ​​রুম, ওয়াশরুম, সিসিটিভি, পানীয় জলের সুবিধা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।  এই সমস্ত কাজ যাতে দ্রুত সম্পন্ন হয় তার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলিকে সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে পরামর্শ করে এই ব্যবস্থাগুলির বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের বিশ্রামের জন্য সমস্ত রকম সরকারী সুযোগ-সুবিধাগুলি লাগু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।  ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিরীক্ষণে থাকবে। বিভিন্ন স্থানে প্রতিটি স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে জনসাধারণের সুবিধার জন্য শয্যার প্রাপ্যতার তথ্যও ডিজিটাল পদ্ধতিতে দেখার ব্যবস্থা করতে হবে। সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য প্রতিটি হাসপাতালে এই সংক্রান্ত একটি ডিসপ্লে বোর্ড রাখতে হবে। কোনও রোগীকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় ভাবে একটি ‘রেফারেল সিস্টেম’ দ্রুত চালু করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে ডাক্তার, নার্স ও অন্য স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদ দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। রোগী ও তাঁদের পরিজনদের অভিযোগ জানানোর জন্য একটি নির্দিষ্ট ব্যবস্থা করতেও বলা হয়েছে ওই চিঠিতে।
 
আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের মৃত্যুর পর হাসপাতালে নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, শুধু নির্দেশ দেওয়াই নয়, হাসপাতালের সুরক্ষা পরিকাঠামোর উন্নয়নে নজিরবিহীন পদক্ষেপ করা হচ্ছে।  এই সমস্ত নির্দেশগুলি অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছে  এবং  নির্দেশগুলি বাস্তবায়নে কতটা অগ্রগতি হচ্ছে তা  রাজ্য স্তরের টাস্ক ফোর্সকে জানাতে হবে৷
 
রাজ্য সরকার সুরজিত কর পুরকায়স্থ, চেয়ারম্যান সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর সিভিল সার্ভিসেস স্টাডি সেন্টার এবং প্রাক্তন ডিজিপি, পশ্চিমবঙ্গকে সমস্ত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে নিযুক্ত করেছে৷ এককথায় রাজ্যের সমস্ত নাগরিকের কাছে ভাল মানের স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য একযোগে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।