দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আলোর উৎসব দীপাবলি । সঙ্গে মা কালির উপাসনা। ঝলমলে আলোয় ভরে উঠবে অন্ধকারময় প্রতিটি কোণ। কিন্তু সরকারি তথ্য বলছে, দীপাবলিতে বাজি বা ঘরে সাজানো প্রদীপের আগুনের শিকার সব থেকে বেশি হয় বৃদ্ধ এবং শিশুরা। ডাক্তারি ভাষায় যে-কোনও ধরনের পুড়ে যাওয়াকে ডিগ্রির মাপকাঠিতে ভাগ করা হয়। ফার্স্ট ডিগ্রি অর্থাৎ হালকা পুড়ে যাওয়া। সাধারণত ত্বকের উপরের অংশ এতে লাল হয়ে প্রদাহ হলেও, ফোস্কা পড়ে না। সেকেন্ড ডিগ্রি, অর্থাৎ ত্বকের নিচে ডর্মিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফুলে যাওয়া এবং ফোস্কা পড়া এই পোড়ার লক্ষণ। সর্বশেষ এবং সব থেকে মারাত্মক হয় থার্ড ডিগ্রি। এতে ত্বকের তিনটি স্তর এপিডার্মিস, ডার্মিস এবং হাইপোডার্মিস প্রভাবিত হয়। পোড়ার স্থানের রোমছিদ্র এবং ঘামগ্রন্থি পর্যন্ত নষ্ট হয়ে যায়।
তবে পোড়া যেমনই হোক সবার আগে জানতে হবে দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে কী ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডাঃ অভিনব ঘোষ, জেনারেল ফিজিশিয়ান ও মেডিক্যাল রিসার্চ কনসালট্যান্ট, টাটা মেডিক্যাল সেন্টার, কলকাতা জানালেন, ‘আতসবাজি ফাটাতে গিয়ে হাত, মুখ, কান বা চোখ পুড়ে যাওয়া রোগী প্রায়ই দেখি আমরা। আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, অনেক ক্ষেত্রেই রোগী ঘরোয়া টোটকা হিসেবে মাখন, মধু, টুথপেস্ট এমনকি কেরোসিন লাগিয়ে উপশমের চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। এইসব টোটকা করবেন না। চিকিৎসার অভাবে বা অপচিকিৎসায় পোড়ার ক্ষত থেকে অঙ্গহানি, এমনকি জীবনহানিও হতে পারে!
নিজে নিজে পোড়ার চিকিৎসা করবেন না। পুড়ে যাওয়া জায়গা থেকে পোশাকের টুকরো, আংটি, দুল, হার ইত্যাদি খুলে ফেলুন। যদি পোড়া জায়গায় পোশাক খুব শক্তভাবে আটকে থাকে, তাহলে সেটা নিজে শক্তিপ্রয়োগ করে তোলার চেষ্টা করবেন না বরং তাড়াতাড়ি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান।
সবার আগে আগুন নেভানোর পর, পুড়ে যাওয়া অংশকে অন্তত ২০ মিনিট (যদি অল্প পুড়ে যায়) কলের নিচে ধরে রাখুন। জল পুড়ে যাওয়া ক্ষতস্থানকে ঠান্ডা করবে, প্রদাহ কমাবে এবং পোড়া গভীর হওয়াকে রুখবে। এরপর সঙ্গে-সঙ্গে বার্ন স্পেশালিস্ট এবং প্লাস্টিক সার্জনের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
ঠান্ডা জলের পরিবর্তে যেন বরফ ব্যবহার করবেন না, তাহলে হবে হিতে বিপরীত। ক্ষতস্থান ঠান্ডা করার পর যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ পুড়ে যাওয়া স্থানে ওষুধ লাগিয়ে দ্রুত ব্যান্ডেজ করা জরুরি। এতে ক্ষতের নিরাময় হয় তাড়াতাড়ি। চিকিৎসক দেখানোর আগে কখনোই সেই স্থানে কোনও ওষুধ না লাগানোই ভালো। এতে চিকিৎসক ক্ষতের পরিমাণ বুঝতেই পারবেন না।
ফোস্কা ফাটাবেন না, ওটা শরীরের অন্যতম ডিফেন্স মেকানিজম। চোখ ও কান পোড়ার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা বাঞ্ছনীয়। পোড়া জায়গা ঘষবেন না, ঠান্ডা জলে ধুয়ে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তার আগে চোখ কড়কড় বা জ্বালা করলে, বড় জোর আর্টিফিশিয়াল টিয়ার ড্রপস দেওয়া যেতে পারে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। পোড়াজনিত ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন(ছোটদের জন্য নয়)। এর অতিরিক্ত কোনও চিকিৎসা নিজে নিজে করবেন না, দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আনন্দ করুন, কিন্তু সতর্কভাবে।’
পুড়ে যাওয়ার সাবধানতা নিয়ে ডা. অর্ণব কর জানালেন, ‘অনেক সময় আবার পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসক দেখানো সম্ভব হয় না। পোড়া যদি খুব গভীর না হয়, সেক্ষেত্রে পুড়ে যাওয়া স্থানে সিলভার বেসড কোনও ক্রিম যেমন সিলভারেক্স’, সোফরামাইসিন এবং মেগাহিল জাতীয় ওষুধ বাড়িতে থাকলে- তা লাগিয়ে নিতে পারেন। সিলভার সালফাডায়াজিন গোত্রের মলম বাড়িতে রেখে দিন, পোড়া জায়গায় লাগান।
কিন্তু চোখে, মুখে, বা পেটে যেন না যায়। বাচ্চাদের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে রাখুন এই মলম। পুড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে লিকুইড কম হতে থাকে, তাই রোগীকে বেশি করে লিকুইড পান করানো উচিত।’