বৃক্ষাসন, যা ট্রি পোজ নামেও পরিচিত, এমনই একটি যোগ আসন যা কেবল শারীরিক শক্তি এবং নমনীয়তা বাড়ায় না, মানসিক শান্তি এবং ভারসাম্যকেও উন্নত করে।
প্রাচীন যোগ ঐতিহ্যের মধ্যে নিহিত, এই সহজ অথচ শক্তিশালী ভঙ্গি, যোগ সূত্রে পতঞ্জলির অন্যতম শিক্ষা। এই আসনে আত্ম-উপলব্ধি, মননশীলতা এবং একাগ্রতার গুরুত্বের উপর জোর দেওয়া হয়।
বৃক্ষাসনের সারমর্ম
‘বৃক্ষাসন’ নামটি সংস্কৃত শব্দ বৃক্ষ বা গাছ এবং আসন বা ভঙ্গি থেকে এসেছে। ভঙ্গিটি গাছের ভঙ্গিমার প্রতিলিপি তৈরি করে, যেখানে একটি পা দৃঢ়ভাবে মাটিতে রাখা হয়, অন্য পাটি ভিতরের উরুর উপর রাখা হয় এবং হাতগুলি মাথার উপরে প্রণামের ভঙ্গিতে তোলা হয়।
বৃক্ষাসন শক্তি, স্থিতিশীলতা এবং প্রকৃতির প্রকোপ সহ্য করে এমন একটি গাছের মতো অনুভূতির প্রতীক।
পতঞ্জলি তাঁর যোগ সূত্রে ব্যাখ্যা করেছেন যে, যোগব্যায়াম শুধুমাত্র কেবল একটি শারীরিক ভঙ্গিমা নয়, কোনও বিক্ষেপ ছাড়াই অভ্যন্তরীণ শান্তি অর্জন করতে তা সহায়ক।
বৃক্ষাসন হল একাগ্রতা এবং ধ্যান -এর শিক্ষা, যা অনুশীলনকারীকে প্রশান্তি অর্জনের জন্য তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস এবং ভারসাম্যের উপর গভীর মনোযোগ দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
বৃক্ষাসনের শারীরিক উপকারিতা
প্রতিদিন বৃক্ষাসন অনুশীলন করলে শরীরের জন্য তা বিভিন্ন উপায়ে অত্যন্ত উপকারী। এটি পায়ের পেশী, থাইয়ের পেশী এবং গোড়ালিকে শক্তিশালী করে এবং অঙ্গবিন্যাস এবং মেরুদণ্ডের শক্তিকে উন্নত করে।
যেহেতু শরীরকে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়, তাই এটি শারীরিক সমন্বয় এবং দেহ সচেতনতা উন্নত করে।
পতঞ্জলি যোগ সূত্র অভ্যাসের (পুনরাবৃত্ত অনুশীলন) উপর জোর দেয়। বৃক্ষাসনের ধারাবাহিক অনুশীলনের ফলে, সময়ের সাথে সাথে একটি গাছ যেমন শক্তিশালী হয়, তেমনই অনুশীলনকারীর ভারসাম্য এবং মনোসংযোগ বজায় রাখার ক্ষমতাও বাড়ে। এই অভ্যাস আরও বেশি শারীরিক এবং মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে।
মানসিক ও আবেগ জনিত উপকারিতা
মানসিক ও আবেগের ক্ষেত্রে, বৃক্ষাসন মননশীলতা এবং শান্তি উৎপাদন করে। এক পায়ে ভারসাম্য বজায় রাখা মনোযোগ বাড়াতে সাহায্য করে, যাতে যোগী বিভ্রান্তি দূর করতে এবং মনকে শান্ত করতে পারেন। শরীর ও শ্বাস-প্রশ্বাসের প্রতি এই মনোযোগ যাতে অনুশীলনকারীর অভ্যন্তরীণ প্রক্রিয়াগুলিকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এই ভঙ্গি স্ট্রেস এবং উদ্বেগ কমাতেও সাহায্য করে। মাটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে এবং ভারসাম্য বজায় রেখে যাতে মানসিক অস্থিরতার মুখে স্থিতিশীলতার অনুভূতি আসে, এই ব্যয়াম সেই পথ প্রশস্ত করে।
পতঞ্জলির শিক্ষাকে দিনন্দিন রুটিনে অন্তর্ভুক্ত করা
বৃক্ষাসন অনুশীলন করার সময়, অবশ্যই পথ নির্দেশনার উৎস হিসাবে যোগ সূত্রে পতঞ্জলির শিক্ষা থেকে শিক্ষা নিতে হবে। তাঁর আটটি অঙ্গের মধ্যে প্রথম, যম (নৈতিক নিয়ম) আমাদের নিজেদের এবং সাধারণভাবে বিশ্বের সাথে ভারসাম্য বজায় রাখার নির্দেশ দেয়। বৃক্ষাসন অনুশীলন আমাদের ধৈর্যশীল ও অধ্যবসায়ী করে তোলে, যা ভারসাম্যপূর্ণ ও নৈতিক জীবনযাপনের সারকথা।উপরন্তু, সমাধি এবং গভীর ধ্যানের দ্বারা নীরবতা এবং মনোনিবেশের মাধ্যমে মানসিক শান্তি অর্জন করা যেতে পারে।