শীতকাল এলেই কিছু কিছু অসুখের প্রকোপ বাড়ে। ইতিমধ্যেই ঘরে ঘরে সর্দি কাশির প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এই সময় সদ্যোজাত শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যাও বাড়ে। নিউমোনিয়া প্রতিহত করার জন্য এখন নিউমোনিয়া-প্রতিরোধক ভ্যাকসিন পাওয়া যায়। কোভিড পরবর্তী সময়ে মানুষের মধ্যে নিউমোনিয়া-প্রতিরোধক ভ্যাকসিন বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু অনেক সময় ভ্যাকসিন নেওয়া সত্ত্বেও, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন।
বস্তুত নির্দিষ্ট কিছু ব্যাক্টেরিয়ার বিরুদ্ধেই কাজ করে নিউমোনিয়া-প্রতিরোধক ভ্যাকসিন। কিন্তু এমন কিছু ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া বা ছত্রাক থাকে— যেগুলির মাধ্যমেও নিউমোনিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। সঠিক সময়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে, নিউমোনিয়া কিন্তু ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। সেক্ষেত্রে একমাত্র কাজ করে অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য লাইফ সাপোর্ট সিস্টেম।
নিউমোনিয়ার প্রধান লক্ষণগুলি হল— কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, কাশি, কফের সমস্যা এবং বুকে যন্ত্রণা। এছাড়াও বয়স্কদের ক্ষেত্রে আচমকা আচ্ছন্ন বা সজ্ঞাহীন হয়ে পড়াও নিউমোনিয়ার লক্ষণ হতে পারে। আপাতদৃষ্টিতে একে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক বলে মনে হয়। কিন্তু সিটি স্ক্যানে ধরা পড়ে না। এক্ষেত্রে কিন্তু এর কারণ হতে পারে নিউমোনিয়া। এছাড়াও শিশু ও বয়স্করা যাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা তুলনায় কম, তারাও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারেন। যারা দীর্ঘদিন ডায়াবেটিস, সিওপিডি, উচ্চ রক্তচাপ, এইডস, কিডনির অসুখে ভুগছেন- তাদের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা কম থাকে।
নিউমোনিয়ার প্রধান চিকিৎসাই হল অ্যান্টিবায়োটিক। আমাদের দেশে বর্তমানে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বেড়েছে। অনেক সময়ই কোনওরকম সংক্রমণ না হলেও, শুধু অনুমানের ভিত্তিতে অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার করা হয়। যা আদতে রোগীকে সাময়িকভাবে সুস্থ করলেও, এর থেকে ক্ষতি হয় বেশি। এতে জীবাণু সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয় না। পরিবর্তে বারবার বিবর্তন ঘটিয়ে ওই নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা অর্জন করে প্রতিরোধক ক্ষমতা বা রেসিস্ট্যান্স তৈরি করে ওই জীবাণু। তখন ওই নির্দিষ্ট অ্যান্টিবায়োটিক আর মানবদেহে কাজ করে না।
নিউমোনিয়া যেহেতু ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাক সংক্রমণের ফলে হয়, তাই শরীরে এই ধরনের কোনও অসুবিধা থাকলে তা চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করে। পরিস্থিতি জটিল হলে তখন ভেন্টিলেশনের মতো লাইফ সাপোর্ট ব্যবহার করা হয়। তবে ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকের দ্বারা এই সংক্রমণ হলে প্রতি ক্ষেত্রে আলাদা রকমের অ্যান্টিবায়োটিক ব্যাবহার করা হয়। নিউমোনিয়ার ক্ষেত্রে পেনিসিলিন বা একই গোত্রের অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া হয়। ছত্রাক দ্বারা সংক্রমণ হলে অ্যান্টি ফাংগাল ওষুধ দেওয়া হয়।
এই রোগের কবল থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে হলে কিছু সাবধানতা নেওয়া দরকার। শীতকালে মাথায় টুপি, মাফলার বা স্কার্ফ জড়িয়ে বাইরে বেরনো ভালো। ঠান্ডা লাগাবেন না।
এর পাশাপাশি রোগীর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার। রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন। হার্ট, ফুসফুস বা কিডনির সমস্যা থাকলে উপযুক্ত ব্যাবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি রোগীর শরীরে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল রেসিস্ট্যান্স থাকলে দ্রুত তা সনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।