• facebook
  • twitter
Monday, 30 September, 2024

১১ বছরের নিচে স্মার্ট ফোনে নিষেধাজ্ঞা মোবাইল অপারেটরের

একদিকে চোখের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মস্তিষ্কেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। পাশাপাশি, শিশুদের সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা এবং কল্পনা শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।

মোবাইল ফোনের আগমন বর্তমান প্রজন্মের জীবনধারাকে পুরো পাল্টে দিয়েছে। সেই সঙ্গে স্মার্ট ফোনের আগমন এবং বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের বিস্তৃতি নতুন প্রজন্মের চিন্তাধারা, সংস্কৃতি, সামাজিকতা, সৃজনশীল কাজে অংশগ্রহণের ধরন পুরো পাল্টে গিয়েছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির এই ডিভাইসটি যেন মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে। স্মার্ট ফোনের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে একশ্রেণীর মানুষ যেমন কর্ম জীবন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছেন, তেমনি অল্প বয়সী শিশুদের স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে আসক্তিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। বিশেষতঃ শিশুরা অজান্তে ভয়ানক ক্ষতির শিকার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি ব্রিটেনের একটি মোবাইল অপারেটর ‘ই ই’ শিশুদের স্মার্ট ফোন ব্যবহার থেকে দূরে রাখার সুপারিশ করেছে। তারা  শিশুদের স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি বয়সের সীমারেখা বেঁধে দিয়েছে।

এই সংস্থা জানিয়েছে, ১১ বছরের শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়। তাদেরকে শুধুমাত্র তথ্য আদানপ্রদান এবং যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি সাধারণ কী প্যাড ফোন বা ফিচার ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া যেতে পারে। যার মাধ্যমে তারা টেক্সট বা কল করতে পারবে। এব্যাপারে গুগল ফ্যামিলি লিংক বা অ্যাপল ফ্যামিলি শেয়ারিংয়ের মতো অ্যাপের মাধ্যমে শিশুদের স্মার্ট ফোন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে জানানো হয়েছে।

স্মার্ট ফোন ব্যবহার করলে শিশুমনে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। এবং ১১ থেকে ১৩ বছরের শিশুদের মধ্যে স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি পেরেন্টাল লক বা অভিভাবকদের নিয়ন্ত্রণ থাকা উচিত বলে এই অপারেটরের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এর প্রধান কারণ, এইসব নাবালকদের সামাজিক মাধ্যমের আসক্তি থেকে দূরে রাখা।

এমনিতেই ১৩ বছরের নিচে নাবালক-নাবালিকাদের স্মার্ট ফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তারা কেউ এই নিষেধাজ্ঞা মানে না। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ব্রিটেনে ১১ বছর বয়সী ৯০ শতাংশ শিশু স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। শুধু তাই নয়, ৮ থেকে ১২ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে। যা মূলত তারা কাজের থেকে সামাজিক মাধ্যমে আসক্তি থেকে  ফোন বেশি ব্যবহার করে থাকে। এরফলে তারা সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষতিকারক কন্টেন্টের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। এরফলে শিশুমনে ব্যাপক প্রভাব পড়ছে।

ব্রিটেনের টেলিকম নিয়ন্ত্রক সংস্থা অফিস অব কমিউনিকেশনের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৬০ শতাংশ শিশু সামাজিক মাধ্যমের আপত্তিকর কন্টেন্টের সম্মুখীন হচ্ছে। ইতিমধ্যে ব্রিটেনের শিক্ষা কমিটির সংসদ সদস্যরা ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ওপর কঠোরভাবে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এমনকি স্কুলেও স্মার্ট ফোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এব্যাপারে সরকার যাতে একটি বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেবিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু ভারতের মতো দেশে বিষয়টি নিয়ে এখনও উদাসীন সরকার এবং জনপ্রতিনিধিরা।

প্রসঙ্গত ভারতের মতো দেশে মাত্র দুই বছরের শিশুর হাতেও মোবাইল ফোন দেখা যাচ্ছে। এমনকি শিশুদের খাওয়া ও ঘুমের ক্ষেত্রে প্রাচীনকালের সেই গল্পগাথা শোনানোর বদলে স্মার্ট ফোনে কার্টুন বা চটুল ভিডিও ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে তাদের একদিকে চোখের যেমন ক্ষতি হচ্ছে, তেমনি মস্তিষ্কেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বলে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা আগেই সতর্ক করে দিয়েছেন। পাশাপাশি, শিশুদের সৃজনশীল চিন্তা-ভাবনা এবং কল্পনা শক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। কিন্তু, এখনও আমাদের দেশের একটি বৃহদ অংশের অভিভাবকরা শিশুদের এই ডিভাইসটি ব্যবহারের ক্ষতিকারক দিকগুলি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত। সরকার, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা এবিষয়ে কোনও সচেতনতামূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করেনি।