বর্তমানে বহু মহিলাই ৩৫ এর আগেই মেনোপজ সমস্যায় পড়েন। যদিও এটি সাধারণত দেখা দেওয়ার কথা ৫০ এর পর। তার আগেই মেনোপজ বা ঋতু চক্র বন্ধ হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। কিন্তু বর্তমানে এই সমস্যা অনেকের ক্ষেত্রেই দেখা দিচ্ছে যা ঘোর বিপদ ডেকে আনছে। এই সমস্যার পর যেমন নেমে আসছে বন্ধ্যাত্ব তেমনই দেখা দিচ্ছে নানান মানসিক এবং শারীরিক সমস্যা।
এই সমস্যার নেপথ্যে রয়েছে নানান কারণ। মেনোপজ যাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় প্রাথমিক ডিম্বাশয়ের ব্যর্থতা (primary ovarian insufficiency বা POI), তখন ঘটে যখন একজন মহিলার ডিম্বাশয় ৪০ বছর বয়সের আগে স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায়। কিন্তু এটি হওয়ার আগে নানান লক্ষণ দেখায়, সতর্কতাও দিতে থাকে। সেই সতর্কতা এবং লক্ষণগুলি যদি না খেয়াল করেন, তাহলে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় পড়তে হবে। কী বলছেন চিকিৎসক একবার দেখে নেওয়া যাক।
মেনোপজের প্রাথমিক সতর্কতা এবং লক্ষণগুলি কী কী?
মেনোপজের বা POI এর প্রথম লক্ষণ হল মাসিক ঋতুচক্র থেমে-থেমে হওয়া বা অনিমিয়ত হওয়া। পরবর্তী লক্ষণগুলি প্রাকৃতিক মেনোপজের মতো হতে পারে:
• অত্যাধিক গরম অনুভব
• রাতের দিকে অতিরিক্ত ঘাম
• সবসময় বিরক্তি
• মনোযোগের অভাব
• যৌন ইচ্ছা হ্রাস
• যৌনমিলনের সময় ব্যথা
• যোনি শুষ্কতা
এ ক্ষেত্রে বন্ধ্যাত্ব ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ঝুঁকি কী ?
যেহেতু POI নির্দিষ্ট হরমোনের ত্রুটির কারণে হয়, সেই হরমোনের অভাবে অন্যান্য স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি দেখা দিতে শুরু করে, যার মধ্যে রয়েছে-
• উদ্বেগ এবং বিষণ্নতা।
• শুষ্ক চোখের অসুখ এবং চোখের পাতায় নানান রোগ । POI আক্রান্ত কিছু মহিলার চোখের এই রোগগুলির মধ্যে একটি অবশ্যই দেখা দেয়। পাশাপাশি দৃষ্টিশক্তি কমতে শুরু করে।
• হৃদরোগ- ইস্ট্রোজেনের ঘাটতি ধমনীর আস্তরণের পেশীগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে এবং ধমনিতে কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে। এই কারণগুলি আপনার এথেরোস্ক্লেরোসিস (ধমনীর শক্ত হয়ে যাওয়া) হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।
• বন্ধ্যাত্ব।
• থাইরয়েডের কার্যকারিতা কম– এই সমস্যাটিকে হাইপোথাইরয়েডিজমও বলা হয়। থাইরয়েড হল একটি গ্রন্থি যা হরমোন তৈরি করে যা আপনার শরীরের বিপাক এবং শক্তির স্তর নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েড হরমোনের নিম্ন স্তর আপনার বিপাককে প্রভাবিত করতে পারে এবং খুব কম শক্তি, মানসিক অলসতা এবং অন্যান্য লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
• অস্টিওপোরোসিস– হরমোন ইস্ট্রোজেন হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে। পর্যাপ্ত ইস্ট্রোজেন ছাড়া, POI আক্রান্ত মহিলাদের প্রায়শই অস্টিওপোরোসিস হয়। এটি একটি হাড়ের রোগ যা দুর্বল, ভঙ্গুর হাড় তৈরি করে যা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব, কীভাবে ?
POI-তে হরমোন থেরাপি খুবই কার্যকর। হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি (হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা এইচআরটি) দ্বারা হরমোনের তারতম্য স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। এইচআরটি হল সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা। এটি শরীরকে ইস্ট্রোজেন এবং অন্যান্য হরমোনের মাত্রা বাড়ায় যা ডিম্বাশয় তৈরি হয়। এইচআরটি যৌন স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং হৃদরোগ এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি কমায়। এটি চিকিৎসা প্রায় ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত করতে পারেন কারণ এই বয়সে সাধারণত মেনোপজ শুরু হয়। তবে এই চিকিৎসা সাধারণত স্তন ক্যান্সার আক্রান্ত এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ।