সোডিয়াম কমলে হতে পারে সমস্যা

মানব শরীরের একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় ইলকট্রোলাইটস হল সোডিয়াম। সোডিয়ামের মাত্রা বাড়াও যেমন শরীরের পক্ষে খারাপ; তেমনি এর মাত্রা কমে গেলেও শরীরের নানা রকম ক্ষতি হতে পারে।

সাধারণত যদি দেখেন কোনও রোগী বমি করার পরে ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়ছে, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলছে, এমনকী অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে বুঝতে হবে এগুলি সোডিয়াম কমে যাওয়ারই লক্ষণ। সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে রোগীকে। তখন ইন্ট্রাভেনাস মানে হাতের শিরার মাধ্যমে রোগীকে সোডিয়াম দিলে খানিকক্ষণ পরে রোগী সুস্থ বোধ করেন। এর পরে আবারও ইলেকট্রোলাইটস পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় রোগীর সোডিয়াম স্বাভাবিক মাত্রায় এসেছে, তখন রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

ক্যালসিয়াম,পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামের মতো, সোডিয়ামও মানব শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণ। এটি স্নায়ুর উপরে প্রভাব ফেলে বলে এটি কমে গেলে নানারকমের জটিল সমস্যা হয়।
কেন হয় সোডিয়ামের ঘাটতি ?


একটানা কয়েকদিন ডায়ারিয়া হলে যদি ডিহাইড্রেশনের সমস্যা হয়, তাহলে ইলেকট্রোলাইটস ইমব্যালেন্স হয়ে সোডিয়ামের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

ক্রমাগত বমি করতে থাকলে রোগীর শরীরে সোডিয়ামের ঘাটতি হয়। এছাড়া আগুনে চামড়া পুড়ে যাওয়া থেকেও এই গুরুত্বপূর্ণ খনিজটির ঘাটতি হতে পারে ডাই ইউরেটিক্স জাতীয় ওষুধ, মানসিক সমস্যার ওষুধ থেকেও সোডিয়ামের ঘাটতি হয়।

অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি ঠিকমতো কাজ না কলে তার ফলাফল হয় সোডিয়ামের ঘাটতি। হাইপোথাইরয়েডিজমও অনেক সময়ে এর কারণ হয়। কিডনি, লিভার ও হার্টের জটিলতা অনেকসময়ে সোডিয়ামের ঘাটতির মাধ্যমে প্রকাশ পায়।

অনেকেই ভাবেন জলেই সব রোগের নিরাময়। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত জল পান করলে সোডিয়ামের ঘাটতি হয়। শিরার মাধ্যমে ইলেকট্রোলাইটস ফ্রি স্যালাইন অতিরিক্ত নিলেও সোডিয়াম কমে যাওয়ার সমস্যা হতে পারে।

কোন কোন উপসর্গ দেখে বুঝবেন ?
উপসর্গ নির্ভর করে সোডিয়াম কতক্ষণের মধ্যে কমেছে ও কতটা পরিমাণে কমছে, তার উপর। যদি ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কমে আর সেটা যদি ১২৫ মিলিমোলের নীচে নেমে যায়, তাহলে তার একাধিক জটিল উপসর্গ থাকে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় একে অ্যাকিউট হাইপোন্যাট্রিমিয়া বলে। এক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর অবস্থার অবনতি হতে পারে। ৪৮ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে হলে এটি ক্রনিক। এক্ষেত্রে উপসর্গ না-ও থাকতে পারে।

সোডিয়াম কমে গেলে প্রধান যে-সমস্যা হয়, তা হল জ্ঞানের মাত্রার তারতম্য হওয়া। এছাড়াও রোগীদের যে-সব উপসর্গ থাকে, সেগুলির মধ্যে প্রধান হল বমি বমি ভাব, বমি করে ফেলা, মাথাব্যথা, রোগীর ক্রমশ ঝিমিয়ে পড়া, অসংলগ্ন কথাবার্তা বলা, খিঁচুনি, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, আচমকা হার্ট বন্ধ হয়ে যাওয়া ইত্যাদি।

চিকিৎসা
রোগীর যদি জ্ঞান লোপ পেতে থাকে, তাহলে কালক্ষেপ না করে নিকটবর্তী হাসপাতালের ইমারজেন্সিতে নিয়ে যান। সোডিয়ামের মাত্রা অতিরিক্ত কমে গেলে ইন্ট্রাভেনাস পথে স্যালাইন দিয়ে সেই ঘাটতি মেটানোর চেষ্টা করা হয়। রোগীর আগে থেকে কী কী অসুখ ছিল, কী কী ওষুধ খাচ্ছেন, এক কথায় পুরো মেডিক্যাল হিস্ট্রি চিকিৎসককে জানাতে হবে। ডায়ারিয়া বা বমি হলে স্যালাইন জল খেতে হবে।

কোনও রোগীর যদি বারে বারে সোডিয়ামের ঘাটতি হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে দেখতে হবে, এর পিছনে অন্য কোনও রোগ আছে কি না ।