আমরা যে শারীরিকভাবে ভালো নেই, এটা বোঝা যাবে কী করে? শরীর কি অগ্রিম কোনও সিগনাল পাঠায়?
হ্যাঁ, শরীর অবশ্যই আগে থেকে ইঙ্গিত দেয়। অনেক সময় দেখবেন হয়তো ভালো করে ঘুম হচ্ছে না বা ডিস্টার্বড স্লিপ হচ্ছে। কাজের প্রেশারে ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া হচ্ছে না, এই করতে করতে খিদে কমে যাচ্ছে, বা পেটে ব্যথা বা অন্য কোনও অসুবিধা হচ্ছে। মাথা ব্যথা করা, দুর্বল লাগা, কাজে এনার্জি না পাওয়া- এরকম কিছু লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই সিগলানগুলো বুঝে পদক্ষেপ না নিলে, আস্তে আস্তে এখান থেকেই কিন্তু জটিলতার দিকে যেতে পারে।
প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে কী করা উচিত?
কিছু কিছু জিনিস আছে যেগুলোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানে রেড ফ্ল্যাগ সাইনস বলে। এগুলো লক্ষ্য করলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার। সেগুলোর মধ্যে খেয়াল রাখুন দ্রুত হারে ওজন কমছে কিনা। দু-সপ্তাহ অন্তর, আর একান্ত সম্ভব না হলে প্রতি মাসে ওজন চেক করুন। একটা ডায়ারি বা চার্ট মেনটেন করুন। মাসে কত শতাংশ ওজন কমছে সেটা জানতে পারাটা কিন্তু জরুরি। যে-কোনো রোগই প্রথমে ওয়েট সিম্পটমস নিয়ে আসে।
সাধারণত কারও ওজন কমতে থাকলে মানুষের ধারণা হয় যে বেশি করে খাওয়া দাওয়া করলেই আবার ওজন বেড়ে যাবে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বেশি খাবার খাওয়াই কি আদৌ সমস্যামুক্ত করতে পারে?
কোনও সময় যদি দেখা যায় ওজন কমছে এবং রোগীর খাওয়াতে অনীহা- সেক্ষেত্রে ওজন কমতে পারে। মাসে এক-দু কিলো ওজন কমাটা দুশ্চিন্তার নয়। ওটা প্রোটিন কন্টেন্ট, যেমন মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া বাড়ালেই ওজন বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু যদি দেখা যায় মাসে ৫ কিলো করে ওজন কমে যাচ্ছে এবং অন্য উপসর্গ আছে, যেমন শরীরে রক্তের পরিমাণ কম থাকা, ভিটামিনের অভাব- সেটা কিন্তু বড়সড়ো অসুখের ইঙ্গিত হতে পারে। যেরকম ক্যান্সার হতে পারে, বা রোগীর হয়তো হাই সুগার আছে যেটা সে জানে না। যদি ওজন অস্বাবিকভাবে কমতে থাকে, তখন টেস্ট করতে হবে।
লাইফস্টাইল ডিজিজ বর্তমান সময়ের একটা থ্রেট। এর থেকে নিষ্ক্রমণের কি কোনও পথ আছে?
ওবিসিটি এই মুহূর্তের সবচেয়ে কমন লাইফস্টইল ডিজিজ। এই ফাস্টফুড খাবার প্রবণতাই এর অন্যতম কারণ। আসলে এক্সারসাইজ করা বা কায়িক পরিশ্রম করা যত কমে যাচ্ছে মানুষের, তত ঘিরে ধরছে মেটাবলিক ডিজিজ।
লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝানো হয়? ঠিক কী ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন হয়?
প্রথমত খাওয়া দাওয়ার দিকে নজর দিতে হবে। ঠিক সময়ে এবং সঠিক পরিমাণে খাওয়া দাওয়া করাটা জরুরি। অতিরিক্ত খাওয়াও যেমন ভুল, তেমনি কম খাওয়াও সঠিক কাজ নয়। খাবার খাওয়ার মধ্যের ব্যবধানটাও কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেস্ক জব করলেও লাঞ্চ টাইমে বা বাড়ি ফেরার সময় হাঁটার অভ্যাস রাখুন। মোটের উপর ফিজিক্যল অ্যক্টিভিটি বাড়াতে হবে।
সাধারণ পরিবারে ডায়েটিশিয়ানের চার্ট ফলো করে খাবার খাওয়ার সুযোগ থাকে না। এক্ষেত্রে কতটা এবং কী খাওয়া আদর্শ বলে পরামর্শ দেবেন?
খাবারের নির্দিষ্ট পরিমাণ বলে কিছু নেই। যে যেরকম কাজ বা পরিশ্রম করছেন, পরিমাণটা সেটার উপর নির্ভরশীল। যার ফিজিক্যাল অ্যক্টিভিটি বেশি তার ক্ষেত্রে খাবারের পরিমাণটাও বেশি হবে। ভরপেট খাওয়া কখনও উচিত নয়। পেটের ৮০% ভরানোটাই হবে লক্ষ্য।
পুরো পেট ভরে খেলে ক্যালোরি ইনটেক বেশি হয়ে যায়। একবারে বেশি না খেয়ে ৩-৪ ঘন্টার গ্যপে অল্প অল্প করে কিছু না কিছু খেলে ওয়েট গেইন বা ক্যালোরি ইনটেক বেশি হবে না। কী খাচ্ছেন সেটাও বিবেচ্য। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা কার্বোহাইড্রেট বেশি ইনটেক করে ফেলি।
কার্বোহাইড্রেট বেশি ইনটেক না করার উপায় কিছু আছে কি?
একটা গড় হিসেব হল, একটা থালার ( মিল-এর) ৫০% কার্বোহাইড্রেট হবে। বাকি যে-অর্ধেকটা থাকবে, সেটাকে দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি। একটা ভাগে প্রোটিন থাকবে আরেকটা ভাগে শাকসবজি থাকবে। সেটা অ্যানিম্যল প্রোটিন বা প্ল্যান্ট প্রোটিন যে-কোনওটাই হতে পারে।
এছাড়া দৈনিক কিছু ফলও ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। সেটা মিল-এর সঙ্গে না খেলেও ব্রেকফাস্ট আর লাঞ্চের মধ্যবর্তী সময়ে ফল খাওয়া যেতে পারে।
অনেকের দুধ বা দুধের প্রোডাক্ট সহ্য হয় না। তাৎ শরীরে ক্যলসিয়ামের অভাব হওয়া স্বাভাবিক। তখন সে ক্যালসিয়ামের চাহিদা কীভাবে পূরণ করবে ?
তখন তাকে বাদাম জাতীয় খাবার, লেগিউমস অথবা স্প্রাউটস দিয়ে ওই ঘাটতি পূরণ করতে হবে। অথবা প্রোটিন দিয়ে রিপ্লেস করতে হবে।
৪০ পেরোলেই প্রেশার সুগারের সমস্য দেখা যায়। এর জন্য কি আগে থেকে সতর্ক হওয়া সম্ভব?
আগে এই লাইফস্টাইল ডিজিজগুলো ৪০-এর পরই দেখা দিত। কিন্তু ইদানীং অনেক আগে থেকেই মানুষ এই সব রোগের কবলে পড়ছেন। খাবারদাবারের প্যটার্নটাই এর জন্য দায়ী। বাইরের খাবার, ফাস্টফুডের দরুণ কার্বোহাইড্রেট, তেল, নুন সবই শরীরে বেশি পরিমাণে প্রবেশ করছে। কোলেস্টেরল বাড়ছে এবং সেই সঙ্গে প্রেশারও। নুন, তেলের ইনটেক কমাতে হবে।
হেলথ চেকআপে কোন কোন টেস্টগুলো করানো জরুরি?
চল্লিশ পেরোনোর পর থেকেই বছরে একবার করে হেলথ চেকআপ করানো উচিত। কোলেস্টেরল, সুগার আর অবশ্যই হার্টও চেকআপ করা দরকার। মহিলাদের ক্ষেত্রে এই চেকআপগুলো ছাড়াও ক্যন্সার স্ক্রিনিং-এর উপর জোর দিতে হবে। সেক্ষেত্রে ম্যমোগ্রাফি বা ব্রেস্ট ইউএসজি করা উচিত।