অসংখ্য হৃদয়ের জোরে প্রাণ বাঁচল হৃদয়াংশের, বিরল রোগের চিকিৎসায় উঠল কয়েক কোটি টাকা   

জয়পুর, ১৫ মে – একরত্তি প্রাণ, নামটি তার হৃদয়জোড়া। একরত্তির নাম হৃদয়াংশ। বয়স ২২ মাস, মানে ২ বছর পেরোয়নি। বিরল জিনবাহিত রোগে আক্রান্ত হৃদয়াংশ। ছোট্ট প্রাণ, কিন্তু তাকে বাঁচিয়ে তুলতে এগিয়ে এসেছে অসংখ্য মানুষের হৃদয় ভরা ভালোবাসা বা  বলা ভালো ‘অনুভূতি’, যা-ও আবার এযুগে ‘বিরল’ বলা যায়।  তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন কয়েক কোটি টাকা। সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে জানতে পেরে এগিয়ে এসেছেন অভিনেতা সোনু সুদ, ক্রিকেটার দীপক চাহার থেকে শুরু করে সাধারণ রুটিরুজির নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষও। 

রাজস্থান পুলিশের সাব ইন্সপেক্টর নরেশ শর্মার একমাত্র সন্তান হৃদয়াংশ। বিরল  জিনঘটিত রোগে আক্রান্ত সে, যার পোশাকি নাম স্পাইনাল মাসকুলার অ্যাট্রোফি। এই রোগে আক্রান্তের কোমরের নিচের অংশ থেকে অসাড় হয়ে যায়, পেশির উপর কোন নিয়ন্ত্রণ থাকে না। কারণ হল, ব্রেন স্টেম ও স্পাইনাল কর্ডে পেশির কোষ নষ্ট হয়ে যায়। অচল হতে শুরু করে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, শ্বাস প্রশ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। 
 
বহু চিকিৎসকের কাছে ঘুরে নরেশ জানতে পারেন, হৃদয়াংশের প্রয়োজন এক বিশেষ ধরণের জিন থেরাপি, যার একটি ডোজের ইঞ্জেকশনের মূল্য প্রায় ১৭.৫ কোটি টাকা।একবারই দেওয়া যায় এই ইঞ্জেকশন ।  নিয়ম, তা দিতে হবে শিশুর ২ বছর বয়সের মধ্যেই। এরপর এই ইঞ্জেকশন আর দেওয়া যায় না।  
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে রাজস্থান পুলিশের এরফা শুরু হয় ক্রাউডফান্ডিং। তখন হৃদয়াংশের বয়স ২০ মাস। শুরু হয় সমস্ত জায়গা থেকে টাকা তোলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় হৃদয়াংশের কথা নজরে আসে সোনু সুদ ও ক্রিকেটার দীপক চাহারের। তাঁরাও নিজেদের সোশ্যাল হ্যান্ডেল থেকে ক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য পোস্ট করেন। পোস্ট দেখে এগিয়ে আসেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষ। সবজি বিক্রেতা থেকে সোনু সুদ, দীপক চাহার থেকে দোকানি সবার ঐকান্তিক উদ্যোগে তিন মাসেরও কম সময়ে সংগ্রহ হয় ৯ কোটি টাকা।  
 
জয়পুরের জেকে লোন হাসপাতালে এই বিশেষ জোলগেন্সমা নামের ইঞ্জেকশনটি দেওয়া হয়েছে হৃদয়াংশকে। ইঞ্জেকশনের বাকি দাম আগামী এক বছরের মধ্যে তিন কিস্তিতে মিটিয়ে দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে। ছেলের চিকিৎসার আশা যখন ছেড়েই দিয়েছিলেন হৃদয়াংশের মা-বাবা , তখন সহকর্মী ও অনাত্মীয় মানুষদের অকপট সাহায্যের জোরেই আবার নতুন করে ছেলেকে বাঁচানোর স্বপ্ন দেখার সাহস পেতে শুরু করেছেন হৃদয়াংশের মা-বাবা।