পারদ ৪১ পার। চাঁদিফাটা রোদ আর গরমে যাদের বাইরে বেরোতে হচ্ছে সে যে কারণেই হোক না কেন তারা যেকোন মুহূর্তে হিট স্ট্রোক কিংবা সান স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারেন। তবে শুধু বাইরে যাতায়াতকারি নন ঘরে বসে থাকা মানুষজনের আছে এ ঝুঁকি। সমস্যা হল হিটস্ট্রোকের কবলে পড়লে অনেকেই দুর্বলতা ভেবে ভুল করে বসেন। কিন্তু হিট স্ট্রোকের কিছু সাধারণ লক্ষণ রয়েছে যা অনেকেই বোঝেন না। হিট স্ট্রোকের এসব লক্ষণ নিয়ে ডাক্তার চন্দনা সেন জানাচ্ছেন, ‘হিট স্ট্রোকের ক্ষেত্রে গরমে দুর্বলতা বা অস্বস্তির কথা ভেবে অনেকে ভুল কিছু করেন। অনেকে কোমল পানীয় এমনকি এখনকার ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক পান করেন। অনেকে স্যালাইন খান। ঠান্ডা জল খান। অনেকে লেবু জল পান করেন। নিজেকে স্বস্তি দেওয়ার এ কাজটি করতে গিয়েই ভুল হয়ে যায়। কোমল পানীয় সাময়িক স্বস্তি দিলেও আমাদের আবার শরীর ডিহাইড্রেট করে। আবার লেবু জল খেলে অনেকের গ্যাস হয় যা আরো সমস্যা বাড়ায়। তাই প্রথমে লক্ষণগুলো দেখে নেওয়া জরুরি। সেগুলো আগে দেখে নেওয়া যাক।
হিট স্ট্রোক হয় যখন আপনার শরীর তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে না। গরমের ক্ষেত্রে এটি হিট স্ট্রোক এবং ঠান্ডার ক্ষেত্রে অনেকাংশে হাইপারথার্মিয়ার মতো। গরমে মাত্র ১০-১৫ মিনিটের ব্যবধানে আপনার শরীর যখন ১০৬ ডিগ্রি ফাহরেনহাইট বা তার বেশি তাপমাত্রায় চলে যায় তখন শরীরে রক্তসঞ্চালন এত তীব্র হয় যে শরীরে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। হিট স্ট্রোকে আপনার শরীরে পক্ষপাত এমনকি মৃত্যুর ঝুঁকিও থাকে। তাই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। গরমে কখন একটু জিরোবেন বাইরে হাঁটলে বা ব্যস্ততায় কিভাবে নিজেকে সামলে চলবেন সে জন্য লক্ষণ জানা চাই।
তীব্র মাথাব্যথা করবে
হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি আসে যখন আপনার তীব্র মাথাব্যথা করবে। শুধু ঠান্ডাতে নয়, প্রচন্ড গরমে মাইগ্রেন ট্রিগার হয়ে যায়। আর গরমে মাথাব্যথা হওয়া মানে স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি বাড়া। মাথাব্যথার সঙ্গে আপনার মধ্যে এক ধরনের কনফিউশন বা দ্বিধা কাজ করবে। অনেকের ক্ষেত্রে মাথাব্যথা না হলেও দৃষ্টি ঝাঁপসা হয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে কথা বলতেও জড়তা কাজ করে। শরীরের তাপমাত্রাও অনেক বেড়ে যাবে। এটুকু আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন। শরীর থেকে ভাপ বেরোবে।
প্রচণ্ড তৃষ্ণা, জলশূন্যতা, ঘাম
হিট স্ট্রোকের ব্যবধান মাত্র ১০-১৫ মিনিটই। কারণ হিট স্ট্রোকের আগে ব্যক্তি চরম তৃষ্ণা অনুভব করতে পারে। শরীরে ভীষণ ঘাম হবে যা অপ্রয়োজনীয় মনে হবে। জবজবে ভিজে যাওয়া শরীর আর হাতে ঘাম জমার পাশাপাশি ত্বকও খসখসে মনে হবে। যদি হিট স্ট্রোক না-ও হয় আপনার রাতে জ্বর ও শরীর ব্যথা হতে পারে। তাই এমন লক্ষণ দেখলেই দ্রুত ছায়াযুক্ত কোনো জায়গায় যান। অন্তত রোদ থেকে একটু দূরে থাকুন। ভিড়বাট্টাও এড়ানোর চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব।
দ্রুত হৃৎস্পন্দন
আপনি বুঝতে পারবেন হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুত হচ্ছে। এটি গরমে হয়। তবে আপনি যদি তাড়ায় থাকেন তাহলে এটিকে পাত্তা না দেওয়ার চেয়ে গরমে পাত্তা দিন। একটু থামুন। নিঃশ্বাস যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা করুন। এ সময় হাইপার ভেন্টিলেশনের সমস্যা হয়। শ্বাসকষ্ট এবং দ্রুত ও ভারী শ্বাস-প্রশ্বাসও হিটস্ট্রোকের লক্ষণ।
বমি বমি ভাব
মাথাব্যথা, দ্রুত হৃৎস্পন্দন ও হাইপারভেন্টিলেশন থেকে অক্সিজেনের অভাব ইত্যাদির কারণে আরেকটি বাজে লক্ষণ থাকতে পারে। সেটি হলো আগে বমি বমি ভাব হতে পারে। এই বমি বমি ভাব হলে প্রথমেই বেশি ঠান্ডা জল পান করবেন না। কোমল পানীয়ও নয়। বরং শরীরকে স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আনার জন্য নরমাল তাপমাত্রায় জল পান করুন।
বিরক্তি ও প্রলাপের লক্ষণ
হিট স্ট্রোকের আগে ব্যক্তি নিজে হয়তো বুঝতে পারেন না তার মধ্যে জড়তা ও মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে। পাশে কেউ থাকলে খেয়াল করবেন ওই ব্যক্তি প্রলাপ বকছেন। রাগ করছেন বা মেজাজ খিচড়ে আছে। আবার অযৌক্তিক কথা বলছেন। তখন আপনি পাশে থাকলে তাকে স্বস্তি দেয়ার চেষ্টা করুন।
দুর্বলতা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
পেশি ব্যথা হিটস্ট্রোকের আরেক লক্ষণ। অনেকে এ ধরনের ব্যথাকে সাধারণ ব্যথা ভেবে মানুষ এটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু শরীরের কোনো জয়েন্ট বা অংশে দুর্বলতা বা ব্যথা থাকলে একটু জিরোন। ক্লান্তি ও দুর্বলতাকে পাত্তা দিন।
ঘাম না হওয়াও সমস্যা
ঘাম না হলেও কিন্তু সমস্যা হচ্ছে। যদি ঘাম না হয় তাহলে বুঝতে হবে শরীরে ঘাম উৎপাদনের মতো পর্যাপ্ত জল আর একেবারেই নেই। শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখার প্রক্রিয়া আর ধরে রাখতে পারছে না। এখন এই গরমে বাড়ির বাইরে কম-বেশি সবাইকেই বের হতে হবে। কিন্তু আতঙ্কের নাম হিট স্ট্রোক এড়াতে সুযোগ পেলেই ছায়ার মধ্যে থাকার চেষ্টা করবেন। জল ও জল জাতীয় খাবারের মাধ্যমে হাইড্রেটেড থাকতে হবে। সবসময় কৃত্রিম চিনিযুক্ত পানীয় থেকে দূরে থাকবেন।