কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসকনের যৌথ উদ্যোগে মানসিক চাপ হ্রাস বিষয়ে আলোচনাচক্র

অঙ্কিতা আচার্য, নদিয়া, ২৭ এপ্রিল— শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ সংক্রান্ত নানান সমস্যা দেখা দিচ্ছে৷ অনেকেই মানসিক চাপ সহ্য না করতে পারে আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে৷ শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষক, আধিকারিক, শিক্ষাকর্মীরাও অনেক ক্ষেত্রেই সীমাহীন মানসিক চাপ সহ্য করতে পারছেন না৷ এর ফলেও কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অঘটন ঘটতে দেখা যাচ্ছে৷ এরকম সামাজিক প্রেক্ষাপটে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় শ্রীধাম মায়াপুরের ইসকনের সহযোগিতায় চলতি সপ্তাহের বুধবার মানসিক চাপ হ্রাস বিষয়ে আলোচনাচক্র অনুষ্ঠিত হলো৷

মূল উদ্যোগ গ্রহণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র ও ইসকন৷ সহযোগিতা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকসংস্কৃতি বিভাগ, শারীরশিক্ষা বিভাগ ও জাতীয় সেবা প্রকল্প৷ আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক অমলেন্দু ভূঁইয়া৷ ইসকনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন তীর্থংগা নিতাই দাস, সোমাপতি গৌরাঙ্গ দাস ও বলাভদ্র গৌর দাস৷ প্রধান বক্তা হিসেবে আলোচ্য বিষয়ে আলোকপাত করেন কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের ক্রিপ্টোলজি এ্যন্ড সিকিউরিটি রিসার্চ ইউনিটের অধ্যাপক ড. গৌতম পাল৷ তিনি দৃষ্টান্ত দিয়ে মানসিক চাপের লক্ষণগুলি বিশ্লেষণ করেন এবং পাশাপাশি চাপ হ্রাসের উপায়গুলির কথাও বলেন৷ প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের অনেক ধরনের সমস্যার কথাও উঠে আসে৷ সেগুলিরও নিরসনের কথা ড. পাল প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করেন৷

অনুষ্ঠানের শুরুতে উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রের যুগ্ম অধিকর্তা ও লোকসংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সুজয়কুমার মণ্ডল বলেন, অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক বিষয়ে আমরা এই আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছি৷ মানসিক চাপ সংক্রান্ত নানান সমস্যা শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা দেখতে পাচ্ছি৷ এর জন্য আগামী দিনে কাউন্সেলিং এরও ব্যবস্থা ব্যবস্থা করা হবে৷ ভবিষ্যতে লাগাতারভাবে শিক্ষার্থীদের উপকারের জন্য এই বিষয়ে কর্মশালা ও প্রশিক্ষণ শিবিরেরও আয়োজন করা হবে৷ উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন, শারীরিক সুস্থতার পাশাপাশি ছাত্র-ছাত্রীদের মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে হবে৷ মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই তারা যথাযথভাবে পঠন-পাঠন ও গবেষণার কাজ করতে পারবে৷ এই বিষয়টিকে নজর রেখেই আমরা এই ধরনের আলোচনা চক্রের আয়োজন করেছি৷


আলোচনা চক্রে শিক্ষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অলোক কুমার ঘোষ, লোকসংস্কৃতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক অসীম আনন্দ গঙ্গোপাধ্যায়, শারীর শিক্ষা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সৈকত চ্যাটার্জী, সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রের আরেকজন যুগ্ম অধিকর্তা ড. দেবলীনা দেবনাথ সহ আরো অনেক শিক্ষক এবং আধিকারিকেরা৷ আলোচনাচক্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের থেকে প্রায় তিনশ জন পড়ুয়া অংশগ্রহণ করে৷ তাদের মধ্য থেকে লোকসংস্কৃতি বিভাগের গবেষিকা শিপ্রা ঘোষ ও কাইনাত খান বলে, এই আলোচনা চক্রের মাধ্যমে আমরা ভীষণভাবে উপকৃত হলাম৷ মানসিক চাপ কমানোর জন্য অনেক সময় কোন উপায় খুঁজে পাই না৷ তাই এ সংক্রান্ত আলোচনা শুনে যা জানতে পারলাম তা আমাদের খুব কাজে লাগবে৷

ইসকনের পক্ষ থেকে প্রভু তীর্থংগা নিতাই দাস জানান, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এই কর্মপ্রয়াস খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে৷ ছাত্র-ছাত্রী ও গবেষক-গবেষিকাদের মধ্যে এ বিষয়ে আগ্রহ দেখতে পেলাম৷ মায়াপুরেও আমাদের এ বিষয় সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ শিবিরের ব্যবস্থা রয়েছে৷ সেখানেও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করতে পারে৷
এদিন ইসকনের পক্ষ থেকে অতিথিদের শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রদান করা হয়৷