ডা. কুণাল ভট্টাচার্য
হাত নাড়ালে, মাথার উপর হাত তুললে বা পিছন দিকে নিয়ে গেলেই কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা— এরকম উপসর্গ অনেকেরই দেখা যায়৷ ডাক্তারি পরিভাষায় এই রোগকে বলা হয় ‘ফ্রোজেন শোল্ডার’, বাংলায় যার অর্থ করলে দাঁড়ায় ‘জমে যাওয়া কাঁধ’৷ যেহেতু এই রোগে কাঁধের সন্ধির গতি ক্রমশ লোপ পেতে পেতে গতিহীন হয়ে যায়, তাই রোগটির এরকম নাম দেওয়া হয়েছে৷
কাঁধসহ যেকোনও সাইনুভিয়াল সন্ধির হাড়গুলির চারপাশ ঘিরে দু’ধরনের পর্দা থাকে— সাইনুভিয়াল পর্দা ও ক্যাপসুল৷ এরা সাইনুভিয়াল সন্ধির হাড়গুলির মধ্যে গতির সামঞ্জস্য আনতে ও পরস্পরের মধ্যে ঘর্ষণজনিত ক্ষয় রোধ করতে সাহায্য করে৷ ফ্রোজেন শোল্ডারে এই দুটি পর্দার মধ্যে প্রদাহের (Inflammation) জন্য পর্দাগুলি পরস্পরের সঙ্গে জুড়ে যায়৷ ফলে কাঁধের সন্ধির স্বাভাবিক গতি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ব্যথা হয়৷
রোগের কারণ : সাধারণত তিনভাবে রোগটি হয়— (১) ইডিওপ্যাথির যেখানে নির্দিষ্ট কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না, (২) ট্রামাটিক যেখানে কাঁধে আঘাতের ইতিহাস থাকে এবং (৩) সেকেন্ডারি এফেক্ট বা অন্য কোনও রোগের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ফ্লোজেন শোল্ডার হয়, বিশেষত যেখানে কাঁধসহ হাত দীর্ঘদিন অচল অবস্থায় থাকে, যেমন— কাঁধ ও বাহুর হাড় ভেঙে গেলে, স্ট্রোকের পর হাতে পক্ষাঘাত হলে, সারভাইক্যাল স্পন্ডিলাইটিসে, স্তনের ক্যানসার অপারেশনের পর বা হার্টের করোনারি আর্টারির রোগে দীর্ঘদিন শয্যাশায়ী থাকলে ইত্যাদি৷
উপসর্গ : সাধারণত ৪৫-৬০ বছর বয়সে এবং ডায়াবেটিস রোগীদের ফ্রোজেন শোল্ডার বেশি দেখা যায়৷ আবার মহিলারা পুরুষদের তুলনায় এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷ শুরুর দিকে কাঁধের ব্যথা রাত্রিবেলা হয়৷ পাশ ফিরে শুলে বাড়ে এবং চিৎ হয়ে শুয়ে মাথার উপর হাত তুলতে কষ্ট হয়৷ এরপর ক্রমশ কাঁধের সন্ধির গতি লোপ পেতে থাকে৷ মাথার উপর হাত তুলতে, পিঠের দিকে হাত নিয়ে যেতে, চুল অাঁচড়াতে, শিলনোড়া বাটতে কষ্ট হয় ও কাঁধের সন্ধি অচল হয়ে পড়ে৷ এই পর্যায়ে সন্ধিসংলগ্ন পেশিও শুকিয়ে যায়৷
রোগের তৃতীয় পর্যায়ে কাঁধের সন্ধির আড়ষ্টতা ক্রমশ কমতে কমতে সন্ধির স্বাভাবিক গতি ফিরে আসতে পারে৷ উপরোক্ত প্রতিটি পর্যায়ের ভোগ কাল ৪-৮ মাস এবং চিকিৎসা না করালে রোগী প্রায় ২-৩ বছর এই রোগে ভুগতে পারে৷ এক্স-রে করালে কাঁধের সন্ধির উল্লেখযোগ্য কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না৷
চিকিৎসা : ফ্রোজেন শোল্ডারে হোমিওপ্যাথি একটি ফলপ্রদ চিকিৎসা পদ্ধতি৷ লক্ষণ অনুসারে স্যাঙ্গুইনারিয়া, ফেরাম মেট, সিফিলিনাম, সালফার, ম্যাগ কার্ব ইত্যাদি ওষুধ অত্যন্ত অল্প সময়েই রোগীকে সম্পূর্ণ নিরাময় করতে পারে৷ তবে ওষুধের পাশাপাশি প্রয়োজন বোধে তাপপ্রয়োগ ও কিছু এক্সারসাইজ করা যেতে পারে৷ যেমন— দু’হাত টানটান রেখে একটি দেওয়াল ধরে আঙুলের সাহায্যে ধীরে ধীরে হাত যখাসম্ভব ওপরে ওঠানো ও নীচে নামানো, আক্রান্ত হাত পিঠের দিকে ঘুরিয়ে বা কোমরে বেঁধে অন্য ভালো হাতের সাহায্যে অল্প ওপরে তোলা ও নামানো ইত্যাদি৷ তবে চিকিৎসার ব্যাপারে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন৷ কারণ চিকিৎসক তাঁর শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে ওষুধের শক্তি ও মাত্রা নির্ধাণ করেন, যা দ্রুত ও প্রতিক্রিয়াহীন আরোগ্যের জন্য বিশেষ প্রয়োজনীয়৷