• facebook
  • twitter
Friday, 18 April, 2025

হেলথ রেজলিউশন

নতুন বছর শুরু হলেই আমরা সবাই কোনও না কোনও রেজলিউশন নিই, যাতে জীবন হয় মসৃণ। কিন্তু স্বাস্থ্যই যদি ভালো না থাকে তাহলে ভালো থাকা কী যায়!

নতুন বছর শুরু হলেই আমরা সবাই কোনও না কোনও রেজলিউশন নিই, যাতে জীবন হয় মসৃণ। কিন্তু স্বাস্থ্যই যদি ভালো না থাকে তাহলে ভালো থাকা কী যায়! তাই আসুন না বছরের শুরুতেই আমরা এমন একটা রেজলিউশন নিই, যাতে সুস্থ-সবল থাকতে পারি।

১. হাঁটা
আমরা সবাই অল্পবিস্তর হাঁটি কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে নয়। দৈনিক হাঁটার বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে। এতে মস্তিষ্কে রক্তচলাচল বাড়ে। ফলে মস্তিষ্ক আরও সক্রিয় হয়ে ওঠে।

হাঁঁটার ফলে হার্ট ভালো থাকে। দক্ষিণ আমেরিকার জঙ্গলে সিমানে নামের এক শ্রেণীর মানুষ বসবাস করে, যাঁদের মধ্যে ৮০ বছরের কোনও ব্যক্তির হার্ট, ৫০ বছরের মতো। কারণ এঁরা অধিক সক্রিয় থাকে সারাদিন ধরে।

হাঁটা কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, হজম শক্তি বাড়ায়। এতে সৃজনশীল চিন্তাও বাড়ে। বিপন্নতা কাটাতে সাহায্য করে। হাঁটার ফলে রক্তপ্রবাহ বাড়ে, ফলে বিভিন্ন অংশের ব্যথা কমে। দেখা গেছে রক্তপ্রবহের সমস্যা থেকেও বিষণ্ণতা তৈরি হয়।

২. জল

দিনে তিন থেকে চার লিটার জল খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জলই খাদ্যের পুষ্টিগুণ শরীরে পৌঁছে দেয়। বর্জ্য পদার্থ সমস্ত কোষ থেকে বহন করে রেচন হিসাবে দেহ থেকে বের করে দেয়। অস্থি সন্ধিগুলির লুব্রিক্যান্ট সরবরাহ করে। শরীরের ২/৩ অংশই জল। পানীয় হিসাবে জলের কোনও বিকল্প হয় না।

জলের গুণাগুণগুলি জেনে নেওয়া যাক-
-খাওয়ার আগে জল পান করলে ওজন কমতে তা সাহায্য করে।
-কোষ্ঠ্যকাঠিন্য দূর করে। ত্বককে উজ্জ্বল ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
– কিডনি স্টোন হওয়া আটকায়, ইউটিআই-এর সম্ভাবনা কমায়।
– দেহে সোডিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে।
– ভাইরাল সংক্রমণ হলে ভাইরাসকে দেহ থেকে নির্গত করতে সাহায্য করে

৩. রাতের খাবার

৮-১০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর শরীর পর্যাপ্ত এনার্জি পায়। ভরপেট ব্রেকফাস্ট করলে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রবণতা কমে। ফলে ওজনও কমে। ব্রেকফাস্ট সঠিকভাবে না করলে বা এড়িয়ে গেলে সুগার কমে যায় (Hypoglycemia) ও মাইগ্রেনের সমস্যা বাড়ে।
ডিনার করার সময় ধীরে-সুস্থে ভালোভাবে চিবিয়ে খান। রাতে অল্প খাবেন ও খাবার পর অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন। রাতে পৌষ্টিকতন্ত্রের সক্রিয়তা কম থাকে, ফলে ভারী খাবারে হজমের সমস্যা হয়।

খাবারে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের (জাঙ্ক ফুড, মাংস, মাখন, মার্জারিন কেক, তৈলাক্ত খাবার ইত্যাদি) পরিমাণ কমান। খাদ্য তালিকায় রাখতে হবে অ্যান্টি অক্সিডেন্টের বিভিন্ন উৎস। যেমন—সাইট্রাস ফ্রুটস। কমলালেবু, আমলা এবং বেরিজাতীয় ফল ছাড়াও আমন্ড ইত্যাদি খেতে হবে- এতে ভিটামিন সি থাকে।

হোলগ্রেন-যুক্ত শস্য, সামুদ্রিক মাছ যাতে সেলেনিয়াম ও জিঙ্ক-এর মতো অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, এগুলি অনাক্রম্যতাকে বাড়াতে সাহায্য করে। বিভিন্ন শাক যেমন পালং চোখের জন্য উপকারী। হলুদে, কারকিউমিন থাকে যাতে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে।
গ্রিন-টিতে ক্যাটেচিন থাকে যেটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে খুবই সহায়ক। এটি হৃদপিণ্ড ভালো রাখে। ক্যান্সারের সম্ভাবনা কমায়।

৪. ডার্ক চকোলেট

এতে ৭০% এর বেশি Cocoa থাকে যাতে ফ্ল্যাভোনয়েড উপস্থিত থাকে। এটিও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ।

৫. প্রক্রিয়াজাত খাবার

এই ধরনের প্রসেসড ফুড বলতে বোঝায় প্রিজারভেটিভ ও বিভিন্ন ফুড অ্যাডিটিভ যুক্ত খাদ্য। যেগুলি খাবারের স্বাদ ও সেলার লাইফ বাড়ায়।
নানা ধরনের ফ্রোজেন ফুড, চিনিযুক্ত খাদ্য-পানীয়, স্বাদযুক্ত বাদাম, শুকনো প্রসেসড ফল, মাইক্রোওয়েভ পপকর্ন ইত্যাদি এই ধরনের ফুডের মধ্যে পড়ে।

৬. চিনি বর্জন করতে হবে

বিজ্ঞানীরা বলেন, প্রাচীনকালে চিনির কোনও ব্যবহারই ছিল না। বরং আখের গুড়, মধু প্রভৃতি বেশি ব্যবহার করা হতো। অতিরিক্ত চিনি খেলে ডায়াবেটিস,ওজন বাড়া প্রভৃতি সমস্যা হয়। কারণ গ্লুকোজ রক্তে বাড়তে থাকে। অন্যদিকে অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) ফ্যাট উৎপাদন করে দেহের ফ্যাটের পরিমাণ বাড়ায়। সুগার খেলে মুখের মধ্যে ব্যাক্টিরিয়া বৃদ্ধি পায়, যা দাঁতের ক্ষতি করে।

৭. তামাক ও অ্যালকোহল

হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, ওরাল ক্যানসার, গলার ক্যান্সার, অ্যাকিউট মায়লয়েড লিউকেমিয়া প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এছাড়াও সিওপিডি, ফুসফুসের ক্যান্সার, প্রজননক্ষমতা হ্রাস, ডিমেনশিয়া, চর্মরোগ হতে পারে, তামাকজাত দ্রব্য সেবন করলে।

৮. যোগব্যায়াম

যোগ মূলত সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ সমন্বয় সাধন করা। বলা যায় ব্যক্তির মন ও শরীরকে শরীরচর্চার মাধ্যমে একসূত্রে গাঁথা বা যুক্ত করাকেই বলে যোগ।

এতে হজমশক্তি বাড়ে। শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। একাগ্রতা বাড়ে, স্ট্রস কমে, ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ যোগ যেমন মনের শান্তি আনে, তেমনই ফিটনেস বাড়াতেও সাহায্য করে। এর সঙ্গে হালকা ব্যায়ামে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। সুগার, প্রেসার, কোলেস্টরলের মতো সমস্যাও নিয়ন্ত্রত হবে।

৯. পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুম ঠিক না হলে বিপাক, হরমোনের কাজ ইমিউনিটি সিস্টেমের কাজ ব্যাহত হয়। রাতের ঘুম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যা দিনের বেলা ঘুমিয়ে পূরণ করা করা সম্ভব নয়। বিপাক সঠিক না হলে ওজন বৃদ্ধি পায়। রোজ মোটামুটি একই সময়ে ঘুমনোর চেষ্টা করুন। ঘুমোতে যাওয়ার অন্তত ২ ঘণ্টা আগে রাতের খাবার শেষ করুন। মোবাইল, ল্যাপটপ বা টিভি, কখনওই শুতে যাওয়ার সময় দেখা ঠিক নয়। দেখা গেছে ১০ একক night time light বৃদ্ধি পেলে ঘুমের সমস্যা প্রায় ২.২০% বাড়ে। এছাড়াও গবেষণা বলছে দুপুরে ১৫- ২০ মিনিটের একটি ‘পাওয়ার ন্যাপ’ খুব ভালো কাজে দেয়। এতে একাগ্রতা বাড়ে, শরীর ও মন সতেজ থাকে।