বর্তমান বিশ্বে মোবাইল মানুষের কাছে সবচেয়ে আপন নির্ভরশীল বস্তুতে পরিণত হয়েছে৷ ৮ থেকে ৮০ এখন মজে মোবাইলের মজায়৷ বাচ্চা খাচ্ছে না, মা পরিশ্রম কমাতে বাচ্চার সামনে তুলে ধরছেন মোবাইল৷ নানা মজা-কৌতূক বা কার্টুন চলছে স্ক্রিনে, সেই নেশায় বুদ সোনামণি টপাটপ খাওয়া সারছে৷ তাতে যে বেশি খেয়ে ফেলছে বা না চিবিয়ে খাচ্ছে তাতে মা বুঝতেও পারছেন না৷
আবার অন্যদিকে, অনেকেই এখন বাড়ি থেকে কাজ করেন৷ তাদের ক্ষেত্রেই মোবাইল সবচেয়ে কাজের জিনিস৷ মোবাইলে অফিসের প্রায় সব কাজ হয়ে যাচ্ছে৷ তাই সারাক্ষণ মোবাইলে তাকিয়ে৷ এখন পরিস্থিতি এমন যে সকালে ঘুম জড়ানো চোখেই মোবাইল হাতে নেওয়ার অভ্যাস রয়েছে বেশিরভাগ মানুষের৷ মিনিট দশ-পনেরো ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে উঁকি না দিলে যেন দিনই শুরু হয় না৷ এমনকি শৌচালয়েও সঙ্গী হয় এই গ্যাজেটটি৷ কাজ থেকে শুরু করে পড়াশোনা সবকিছুই এমন চলছে অনলাইনে৷
বিশেষত করোনার পর ছোট-বড় সবারই স্ক্রিন টাইম আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে৷ মোবাইল, ল্যাপটপ কিংবা ট্যাবের মতো গ্যাজেটের স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকার ফলে কমছে মানুষের দৃষ্টিশক্তি৷ বাড়তি স্ক্রিন টাইমের কারণে অনেকেরই দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হচ্ছে৷ চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে মায়োপিয়া বলে৷ যারা এই সমস্যায় ভোগেন তারা নির্দিষ্ট দূরত্বে থাকা সবকিছু ঝাপসা দেখেন৷
আর এখানেই ভয়ঙ্কর বার্তা দিচ্ছে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের একটি সমীক্ষা৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের অর্ধেক সংখ্যক মানুষ মায়োপিয়ায় আক্রান্ত হবেন৷ এই রোগে আক্রান্ত রোগী কাছের জিনিস দেখতে পেলেও দূরের জিনিস দেখতে সমস্যা হয়৷
বিভিন্ন কারণে মায়োপিয়া হতে পারে৷ তবে চিকিৎসকদের মতে, মায়োপিয়ার অন্যতম বড় কারণ হলো সূর্যের আলোয় কম সময় কাটানো৷ চোখের স্বাস্থ্যের জন্য প্রাকৃতিক আলো ভীষণ জরুরি৷ বিশেষত, শিশুদের ক্ষেত্রে সূর্যের আলোয় বেশিক্ষণ থাকলে রেটিনায় ডোপামিন নামক যৌগের ক্ষরণ বেডে় যায়৷ এই যৌগ দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে এবং মায়োপিয়া প্রতিরোধে সাহায্য করে৷ তাই শিশুদের দিনের আলো থাকতে থাকতে বেশি করে বাডি়র বাইরে সময় কাটানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা৷ এই অভ্যাস চোখ ভালো রাখতে বেশ কার্যকর৷
মায়োপিয়ার বেশ কিছু উপসর্গ রয়েছে৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু হলো—
১. দূরের কোনো জিনিস একেবারে ঝাপসা দেখা
২. দূরের কিছু স্পষ্ট দেখার জন্য চোখের পাতা কুঁচকে কাছাকাছি নিয়ে আসা
৩. সারাক্ষণ মাথাব্যথা করা
৪. চোখে যন্ত্রণা
ঝুঁকি এড়াতে যা ভিষণ জরুরী:
মায়োপিয়ার ঝুঁকি এড়াতে ফোন থেকে দূরে থাকা সবচেয়ে বেশি জরুরি৷ ঘুম থেকে উঠে ফোনের পেছনে সময় ব্যয় না করে ঘরের বাইরে বের হোন৷ হালকা শরীরচর্চা করুন কিংবা হাঁটাহাঁটি করুন৷ শিশুরা স্কুল থেকে ফিরলে অবশ্যই তাদের কিছুসময় বাইরে খেলতে পাঠান৷ এতে চোখে সূর্যের আলো লাগবে৷ অবসর সময়ে ঘরে বসে ভিডিও গেম না খেলে ছুটির দিনে বেশি করে প্রাকৃতিক আলোয় সময় কাটান৷ শিশুকে নিয়ে সূর্যের আলোয় থাকুন৷ এতে চোখের উপকার হবে৷ শরীরও সুস্থ থাকবে৷