বিশ্বব্যাপী লক্ষ লক্ষ মানুষ বর্তমানে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। রক্তে উচ্চমাত্রায় গ্লুকোজ বা শর্করার উপস্থিতি, এই রোগটির ইঙ্গিত দেয়। এটি গুরুতর স্বাস্থ্য-ঝুঁকি বহন করে। এর দরুন সৃষ্টি হওয়া জটিলতাগুলির মধ্যে রয়েছে হৃদরোগ, কিডনি ফেলিয়োর এবং দৃষ্টির সমস্যা।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ব্যায়াম এবং ওষুধের পাশাপাশি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পথ অবলম্বন করতে পারেন। সেটি হল টাইম রেস্ট্রিক্টেড ইটিং।
একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জোর দেওয়া হয়েছে টাইম রেস্ট্রিক্টেড ইটিং অর্থাৎ সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়ার উপর। এর ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রায় প্রভাব পড়তে পারে বলে অভিমত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেখা গেছে, ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শমতো কঠোরভাবে এটি মেনে চলা রোগীরা এর সুফল পেয়েছেন। এই পদ্ধতি মেনে চলা সহজ এবং ফলাফল ইতিবাচক হওয়ায়, মানুষ জীবনশৈলীর এই পরিবর্তনকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত।
সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়া কী?
২০১৫ সালের পর থেকেই ওজন হ্রাসের জন্য জনপ্রিয় হয়ে ওঠে এই সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়া পদ্ধতিটি। গবেষণায় দেখা গেছে যে টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের জন্য এটি একটি কার্যকর উপায়। প্রতিদিন খাওয়ার সময় সীমিত করা জরুরি। এই পদ্ধতি মেনে চললে আপনাকে সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দৈনিক ভোজন সেরে ফেলতে হবে এবং তারপর বাকি সময়ের জন্য উপবাস করতে হবে। এটির ফলে স্বাভাবিকভাবেই কম খাবার খাওয়া বা লো ইনটেক-এর বিষয়টি আপনাকে সাহায্য করবে।
সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়ার প্রক্রিয়া কি সম্ভব?
সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়া অনুসরণ করার প্রধান বাধাগুলি হল সামাজিক অনুষ্ঠান, আপনার কাজের রুটিন, বাড়ির কাজ প্রভৃতি। কিন্তু আপনি একবার এটা অভ্যাস করে ফেলতে পারলে, বুঝবেন এর অনেক উপকারিতা রয়েছে। প্রধানত খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনাই হল এর উদ্দেশ্য। কখন খেতে হবে তার উপর মনোযোগ দিন প্রথমে। তারপর ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শমতো খাদ্যতালিকার নির্দেশিকাগুলি মেনে চলার চেষ্টা করুন। শাকসবজি, ফল, দানা শস্য, চর্বিহীন মাংস এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাটকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।
টাইপ ২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য এই সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়া, তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার প্রধান পদক্ষেপ হিসাবে কাজ করতে পারে। বর্তমানে এই ধরনের রোগীরা ডায়েট এবং অন্যান্য ইতিবাচক পরিবর্তনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এটি পাচনপ্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে এবং সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়তা করতে পারে।
২০১৮ সালে একটি প্রাথমিক গবেষণা হয় যাতে দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা সপ্তাহে গড়ে পাঁচ দিন করে, টানা চার সপ্তাহ ধরে এই খাওয়ার ধরনটি মেনে চলতে পারেন। এভাবে ছয় মাস ধরে, এইচবিএ১সি পরীক্ষা ব্যবহার করে প্রতি দুই মাস অন্তর প্রতিটি অংশগ্রহণকারীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। দেখা যায়, তাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা হ্রাস পেয়েছে। দু’মাস পরে তাদের শর্করার মাত্রায় সবচেয়ে বেশি উন্নতি ঘটেছিল। জটিল খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করার চেয়ে সময়-সীমাবদ্ধ খাওয়া, গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের একটি সহজ প্রাথমিক পদ্ধতি বলে মনে করা হচ্ছে।