ছাপা অক্ষর দেখার সময় বর্ণমালাগুলিতে কি রামধনু রঙের আভাস পাচ্ছেন? চোখে ঝাপসা দেখা, রঙের মাত্রা বা উজ্জ্বলতা কমে যাওয়া, রোদে বা সরাসরি চোখের উপর পড়া আলোতে অসুবিধা হওয়ার মতো পরিস্থিতি হলে বুঝতে হবে- আপনার চোখে ছানি পড়া শুরু হয়েছে। এর ফলে চোখে ক্লান্তি বা মাথা ব্যথাও হতে পারে।
ছানি বা ক্যাটারাক্টের কিন্তু কয়েকটি লক্ষণ আছে। আপনার চোখই আপনাকে অগ্রিম সতর্কতা দেবে। এগুলি অবশ্য কিছুটা বিভ্রান্তিকর লক্ষণ। চশমা ছাড়াই হঠাৎ করে কাছের জিনিস ভালো দেখতে পাবেন। এতদিন বই বা খবরের কাগজ পড়তে যে-চশমাটি ছাড়া চলত না, সেটা আর ব্যবহার করার দরকার-ই হবে না। তখন ভ্রম হবে, চোখ ভালো হয়ে গেল নাকি! চিকিৎসা পরিভাষায় একে বলা হয় সেকেন্ড সাইট। এটা কিন্তু ছানিরই লক্ষণ।
আমাদের চোখের ভিতরে প্রোটিন দিয়ে তৈরি অত্যন্ত স্বচ্ছ একটা প্রাকৃতিক লেন্স থাকে। এটি একটি উন্নত মানের ক্যামেরার মতো। এই লেন্স ঘোলাটে বা অস্বচ্ছ হয়ে গেলে, তাকে ক্যাটারাক্ট বা ছানি বলে। এখন এই ছানি সার্জারি করা হচ্ছে ফেমটো লেজার-এর সাহায্য নিয়ে। কারণ ফেমটো লেজার, একটি অ্যাসিস্টেড ক্যাটারাক্ট সার্জারি যা বেশি নিঁখুত এবং নিরাপদ বলে প্রমাণিত হয়েছে ইতিমধ্যেই।
চক্ষু চিকিৎসকরা বলেন, ছানি পড়ার কোনও বয়স হয় না। যে-কোনও বয়সেই ছানি পড়তে পারে। এমনকী শিশুরাও ক্যাটারাক্ট নিয়ে জন্মাতে পারে। সাধারণত ৪০ বছর বয়সের পর আমাদের চোখের লেন্সের প্রোটিনগুলি ভাঙতে শুরু করে। ৫০-৬০ বছর বয়সে বেশিরভাগ মানুষই একটু ঝাপসা দৃষ্টি অনুভব করেন। তবে লক্ষণগুলি প্রথমে তেমন বোঝা না-ও যেতে পারে।
ক্যাটারাক্ট হওয়ার কোনও নির্দিষ্ট কারণ হয় না। এটা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বয়সজনিত অসুখ বলে বিবেচিত। শরীরে ডায়াবেটিস জাতীয় কোনও মেটাবলিক ডিজিজ থাকলে, কম বয়সেই ক্যাটারাক্ট হতে পারে। এছাড়া স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের ব্যবহারে কিংবা চোখে আঘাত লেগে থাকলে- অনেক আগেই ক্যাটারাক্ট আসতে পারে।
এখন অত্যন্ত আধুনিক প্রযুক্তিতে ফেমটো-লেজারের সাহায্যে ক্যাটারাক্ট সার্জারি করা যায়। চোখের সামনে থাকা একটি ক্যামেরা বা ওসিটি ডিভাইস প্রথমে চোখের সারফেস ম্যাপিং করে এবং চোখের ভিতরের বিভিন্ন টিস্যুর স্ক্যানিং করে। সেখান থেকে একটি কম্পিউটারের মাধ্যমে চোখের নির্দিষ্ট স্থানে, সঠিক আকার, সুনির্দিষ্ট মাপ এবং গভীরতায় লেজার কাটিংয়ের প্রোগ্রামিং করে। এরপর অত্যন্ত নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে, লেজার রশ্মির মাধ্যমে লেন্সের ক্যাপসুলোটমি এবং ক্যাটারাক্টস লেন্সকে টুকরো টুকরো করা হয়। কোনও ধারালো ইন্সট্রুমেন্ট ছাড়াই অর্থাৎ সম্পূর্ণ ব্লেডলেস পদ্ধতিতে পুরো প্রক্রিয়াটা করা হয়, ফেমটো লেজার ফটো- আয়োনাইজেশনের মাধ্যমে এবং লেজার কাট প্রক্রিয়াটি মাত্র ৩০ সেকেন্ডের মধ্যেই সম্পন্ন হয়ে যায়।
ফেমটো সেকেন্ড লেজার একটি ইনফ্রারেড লেজার। এটি খুব দ্রুত গতিতে এবং ফেমটো সেকেন্ড পরিসরে লেজার শক্তি নির্গত করে। যদিও এটি মূলত লাসিক সার্জারিতে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু খুবই নিরাপদ বলে প্রমাণিত হওয়ায় এই লেজারগুলি এখন চোখের বিভিন্ন সার্জারিতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
মনে রাখবেন কোনও পরিচিত ওষুধ, চোখের ড্রপ, ব্যায়াম বা চশমা ব্যবহার করে ক্যাটারাক্ট নিরাময় বা প্রতিরোধ করা যায় না। অপারেশনই একমাত্র চিকিৎসা। ক্যাটারাক্ট সার্জারি একটি ডে কেয়ার প্রসিডিয়োর-এর আওতায় পড়ে। তাই অপারেশনের দিনই রোগীকে ডিসচার্জ করা হয়।