আরজি কর কাণ্ডের জেরে বন্ধ ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান

আরজি করে মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যুর পর সারা দেশ জুড়ে চলছে আন্দোলন প্রতিবাদ। পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে সমাজের বিভিন্ন পেশার মানুষজন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। বর্ধমান হাসপাতালের চিকিৎসকরাও ওই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন। চলছে কর্মবিরতি। কিন্তু একটানা কর্মবিরতিতে রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়েছে। যদিও মুখ ফুটে কেউ এ ব্যাপারে অভিযোগ জানাচ্ছেন না। কিন্তু বিভিন্ন বিভাগে গত কয়েকদিন ধরে রোগীদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। যেখানে সারা রাজ্যের কাছে বর্ধমানের খোসবাগান “ডাক্তার পাড়া” হিসাবে পরিচিত সেই ডাক্তার পাড়াও এখন সুনসান। ওষুধের দোকান, প্যাথলজি সেন্টার, ডাক্তার বাবুদের চেম্বারে রোগীদের আসা যাওয়া এক ধাক্কায় কমেছে বলে সূত্রের খবর। যদিও এই পরিস্থিতিতে বর্ধমানের নার্সিংহোমগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে রোগীদের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা গিয়েছে। এরই মধ্যে গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মতো হাসপাতালে সরকারি ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান বন্ধ। সব নিয়ে গরিব অসহায় পরিবারের রোগীরা সঙ্কটে পড়েছেন।

বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ রাজ্যের প্রায় ৬ – ৭ টি জেলার রোগীরা চিকিৎসার সুযোগ পেয়ে থাকেন। এমনকি ঝাড়খণ্ড, বিহারের মতো রাজ্যগুলো থেকেও রোগীরা এখানে আসেন। ফলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষজন আসেন বর্ধমান হাসপাতালে। কিন্তু আরজি কর হাসপাতালে মহিলা ডাক্তারের নৃশংস মৃত্যুর পর চিকিৎসকরা এখন কর্মবিরতিতে। আন্দোলন চলাকালে ডাক্তারবাবুরা অবশ্য রোগীদের চিকিৎসা পরিষেবা চালাচ্ছেন। কিন্তু রোগীরা সেভাবে হয়তো ভরসা করতে না পেরে হাসপাতাল মুখো হচ্ছেন না। আবার হাসপাতালে আসার পর চিকিৎসকদের আন্দোলন দেখে কী করবেন, কী করবেন না ভাবছেন, তখন সেই সুযোগে অতি সক্রিয় দালালরা। অভিযোগ, তাঁরাই নানাভাবে বুঝিয়ে নার্সিং হোমে নিয়ে যাচ্ছেন রোগীদের। ফলে নার্সিং হোমগুলোতে এই মুহূর্তে রোগীদের ভিড় অনেকটাই বেশি। শুধুমাত্র দালালরাই নয়, এক শ্রেণীর অ্যাম্বুলেন্স চালকও সরাসরি নার্সিংহোমগুলোতে রোগী পৌঁছে দিয়ে মোটা অংকের টাকা পাচ্ছে মালিক পক্ষের কাছে। এই অভিযোগ রোগী এবং তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে। যদিও অ্যাম্বুলেন্স চালকদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নিলেও বর্ধমান হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি।

খোসবাগানের তুলনায় এখন শহরের কলেজমোড় থেকে নবাবহাট বা তারও পরে প্রায় দু কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় শতাধিক নার্সিং হোম গড়ে উঠেছে জাতীয় ও রাজ্য সড়কের ধারে। বিশেষ সূত্রের খবর, আরজি করের ঘটনা এবং চিকিৎসকদের একটানা কর্মবিরতিতে ওই নার্সিংহোমগুলোতে রোগীর সংখ্যা এক ধাক্কায় অনেকটাই বেড়েছে। যার ফলে খোসবাগানে রোগীদের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। জানা গিয়েছে, নবাবহাট এলাকায় নার্সিংহোমগুলোতে রোগীদের নিয়ে যেতে পারলে দালালদের কমিশন বেশি মেলে। ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারিও কম। তবে এই ঘটনার দায় নিতে চাননি নার্সিংহোম মালিকরা। এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করেননি কোনও পক্ষই। এসবের জন্য অবশ্য বড়ো ধরনের সমস্যার মধ্যে গ্রাম থেকে আসা সাধারণ রোগী ও তাঁদের আত্মীয় পরিজনরা। এর মধ্যে আবার ন্যায্যমূল্যের ওষুধের দোকানগুলো বন্ধ। বর্ধমান হাসপাতালে চত্ত্বরে থাকা ওষুধের দোকান বন্ধ থাকায় বেশি দামে ওষুধ কিনতে গিয়ে সংকটে পডছেন এক শ্রেনীর রোগীরা। তবে এরই মধ্যে পরিস্থিতি সামাল দিতে বর্ধমান হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকও হয়েছে। পুলিশ বিষয়টির নজরদারি চালাচ্ছে বলে দাবি।


কর্মরত চিকিৎসকদের আন্দোলনে বর্ধমান হাসপাতালে রোগী ভর্তি নিয়ে কিছুটা হলেও গড়িমসি চলছে। রোগীর আত্মীয়দের অভিযোগ, ভরসা না পেয়ে ধারদেনা করেই নার্সিংহোমে রোগীদের ভর্তি করাতে বাধ্য হচ্ছেন। যদিও অচলাবস্থা যে চলছে, সে কথা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার তাপস ঘোষ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা চাইছি এই পরিস্থিতিতে রোগীদের যাতে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়তে না হয়, তার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। হাসপাতালে কর্মী ও অন্যান্যদের কাজে থাকাকালীন পরিচয়পত্র গলায় ঝুলিয়ে রাখার জন্য বলা হয়েছে। একই সঙ্গে দালাল চক্র বন্ধ করতে সাদা পোশাকের পুলিশ যাতে কড়া নজরদারি রাখে, সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এক ধাপ এগিয়ে নার্সিং হোম মালিকদের সংগঠনের মুখপাত্র সেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, দালালদের সঙ্গে কারও কারও যোগাযোগ থাকতে পারে। তবে লিখিত অভিযোগ না পেলে সংগঠন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারে না।