দীপাবলির সময়ে বাজির কারণে বাতাসে দূষণ বৃদ্ধি পায়। এই পরিস্থিতিতে শিশুদের কী ধরনের সমস্যা হতে পারে ?
বাজি পোড়ানোর সময় যে ধরনের গ্যাস নির্গত হয়, তা মানুষের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। বাতাসে দূষণের মাত্রা বেশি হলে, স্বাভাবিকভাবেই শিশুদের শ্বাসনালির সমস্যা হতে পারে। কাশি আর নিঃশ্বাসের কষ্ট, মূলত এই সমস্যাগুলোই দেখা যায়। যে-সব শিশুদের ছোট থেকেই অ্যালার্জি বা সংক্রমণজনিত কারণে খুব ঘনঘন শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং কফ জমার সমস্যা থাকে- তাদের দূষণের প্রভাবে খুব তাড়াতাড়ি শ্বাসকষ্ট বা কাশি শুরু হতে পারে। ক্ষেত্রবিশেষে ছোট বাচ্চাদের হয়তো হাসপাতালেও ভর্তি করতে হতে পারে। শ্বাসকষ্টের জন্যই শিশুরা ওই সময় খাওয়াদাওয়া কমিয়ে দেয়। মা-বাবা অনেক সময় এটা না বুঝে জোর করে খাওয়াতে গেলে, বাচ্চা ঘনঘন বমি করে ফেলে। মনে রাখবেন জোর করে খাওয়ালে খাবারটা শ্বাসনালীতে চলে গিয়ে, দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
শিশুদের শ্বাসকষ্ট শুরু হলে, প্রতিকারের জন্য কী জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে ?
এক্ষেত্রে প্রথম যেটা করতে হবে, যে-জায়গায় বাজি পোড়ানো হচ্ছে, শিশুকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। তবে তাকে ঘরে আবদ্ধ রাখা ঠিক হবে না। এমন জায়গায় নিয়ে যান, যেখানে সে কিছুটা বিশুদ্ধ হাওয়া পাবে। খোলা ছাদ বা খোলা মাঠ, যেখানে বাজি পোড়ানো হচ্ছে না তেমন জায়গা হলেই ভালো।
দ্বিতীয় বিষয়টি হল যে-চিকিৎসকের তত্বাবধানে শিশুটি ছোট থেকে আছে, তাঁর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা। শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ১বছরের কম বয়সি শিশুদের ফিডিং বন্ধ রাখবেন, যতক্ষণ না অবধি অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। জোর করে খাওয়ালে শিশুর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
তৃতীয়ত যদি ডাক্তারবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব না হয়, তাহলে আগের প্রেসক্রিপশন দেখে শিশুকে ব্রঙ্কো ডাইলেটার দিন, নিবুলাইজেশন বা ইনহেলার-এর সাহায্যে। আর যদি শিশুটির ক্ষেত্রে এমন কোনও পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকে, তাহলে শিশুকে হাসপাতালে ভর্তি করাই শ্রেয়।
বাজি থেকে ত্বকে অ্যালার্জির সম্ভাবনা থাকে কি ?
অ্যালার্জি হয়তো সবার হয় না কিন্তু বাজির বারুদ বা রাসায়নিক থেকে অনেক সময় কোনও কোনও শিশুর র্যাশ বা চুলকানির সমস্যা দেখা দিতে পারে। বাচ্চার আর্টিকেরিয়া হতে পারে, যাতে ত্বক চাকা চাকা হয়ে ফুলে যায়। এটার নিদান হচ্ছে বাচ্চাকে ওই জায়গা থেকে দ্রুত সরিয়ে নিয়ে যাওয়া এবং গরম জলে কাপড় ভিজিয়ে ভালো ভাবে তার শরীর মুছে দেওয়া।
বাজির ধোঁয়া থেকে বাচ্চাদের চোখে কি কোনও সমস্য়া হতে পারে ?
অনেকক্ষণ ধরে ধোঁয়ার মধ্যে থাকলে শিশুর চোখ লাল হয়ে জল পড়তে পারে, কনজাংটিভাইটিস-এর সমস্যা হতে পারে। খুব বেশি আলো বের হয় এমন বাজি দৃষ্টিশক্তির উপরেও কুপ্রভাব ফেলতে পারে। রেটিনা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তাই খুব বেশিক্ষণ ধরে এই আলোর সামনে ছোটদের না থাকাই ভালো।
বাজি পোড়ানোর সময় কী কী সতর্কতা নেওয়া জরুরি ?
প্রথম কথা হচ্ছে বাজি না পোড়ানোই ভালো। একান্তই যদি শিশু বাজি পোড়ায়, তাহলে তাকে মাস্ক পরানো উচিত। বাচ্চাকে ফুল স্লিভ সুতির জামাকাপড় পরান, বাজি থেকে তার শরীরের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন এবং খোলা জায়গায় বাজি পোড়ান। এছাড়া এখন কিছু পরিবেশ-বান্ধব বাজি পাওয়া যায়, যাতে আলো কম, শব্দ কম, সেগুলিই ব্যবহার করুন।