নিরাপত্তায় জোর, হাসপাতালে বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালুর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে তৎপর রাজ্য সরকার। বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কাজ কিছুটা এগিয়েছে। কিন্তু বর্তমানে বন্যা বিপর্যস্ত এলাকার কাজে সরকারি আধিকারিকরা ব্যস্ত। তাই কিছুটা দেরি হচ্ছে। হাসপাতালগুলিতে বায়োমেট্রিক সিস্টেম চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ‘রাত্তিরের সাথী’ অ্যাপ চালু করার কথা জানিয়েছেন তিনি। নদিয়ার ১১২ ফুটের দুর্গা প্রসঙ্গে উদ্যোক্তাদের দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে আমেরিকার দূতাবাসের সঙ্গেও মমতা কথা বলেছেন। সোমবার রাজ্য পুলিশের ১২ হাজার নিয়োগের নির্দেশিকা আসতে পারে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী।

বৃহস্পতিবার বিকেলে নবান্নে স্বাস্থ্য বিষয়ক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বৈঠকে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা হয়েছে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মমতা জানান, নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে যে পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়িত করতে কিছুটা সময় লাগবে। ইতিমধ্যে হাসপাতালগুলির নিরাপত্তার জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই টাকা কোন কোন খাতে খরচ হবে সেই নিয়ে এদিন বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। মমতা এদিন জানিয়েছেন, হাসপাতালের অধ্যক্ষরাই এখন রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান।

এদিন মমতা বলেন, ‘জেলায় জেলায় বন্যা পরিস্থিতি। তারমধ্যেও দ্রুত গতিতে রাজ্যের সরকারি হাসপাতালের সুরক্ষা সংক্রান্ত পরিকাঠামো গড়ে তোলার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। বন্যার পরিস্থিতিতে পিডব্লউডি-রও অনেক কাজ। তাই প্রিন্সিপালদেরও বলছি, সুরক্ষার কাজ দ্রুত শেষ করতে যা যা প্রয়োজন করুন।’ এছাড়াও বাইরে থেকে যারা হাসপাতালে কাজ করতে আসেন তাঁদের উপর নজর রাখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্মাণকাজ চললেও বাইরে থেকে প্রচুর লোক হাসপাতালে ঢোকে। তাঁদেরও সম্পূর্ণ ডিটেলস খতিয়ে দেখার নির্দেশ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দেওয়া হয়েছে।


নদিয়ার পুজো নিয়েও এদিন মমতা দায়িত্বশীল হওয়ার পাঠ দিলেন। তাঁর কথায়, ‘১১২ কেন ৪১২ ফুটের দুর্গাও আপনারা তৈরি করতে পারেন। কিন্তু দায়িত্বশীল হতে হবে পুজো কমিটিকে। দেখবেন, এমন কিছু করবেন না যাতে পদপিষ্ট হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে।’ উল্লেখ্য এই পুজো নিয়ে আদালতে মামলা হয়েছে। পাশাপাশি সেমিকন্ডাক্টর নিয়ে আমেরিকার দূতাবাসের সঙ্গে মমতার কথা হয়েছে। সেই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী ছাড়াও ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ এবং মুখ্যমন্ত্রী মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যে প্রচুর মানুষ মেধার ভিত্তিতে চাকরি পাবেন বলে জানান মমতা। তিনি আরও জানান, গত ৩ বছর ধরে এই প্রকল্প নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে বাংলার কথা হচ্ছে। প্রকল্পের জন্য জমিও ঠিক করে ফেলেছে রাজ্য।

উল্লেখ্য, প্রত্যেকটি হাসপাতালের সুরক্ষা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থর নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়া হয়েছিল। সেই কমিটিই হাসপাতালের সুরক্ষার বিষয়টি সুনিশ্চিত করবে। এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, ‘১২ হাজার পুলিশের রিক্রুটমেন্ট আটকে ছিল। সম্ভবত সোমবার এর অর্ডার আসবে। সেক্ষেত্রে হাসপাতালের সুরক্ষায় আরও জোর দেওয়া যাবে।’

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আগেই সমস্ত সরকারি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। এদিনও এই প্রসঙ্গ তাঁর কথায় উঠে আসে। হাসপাতালের অধ্যক্ষদেরই রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান করা হয়। তিনি জানান, অধ্যক্ষ ছাড়াও এই সমিতিতে জুনিয়র ডাক্তার, সিনিয়র ডাক্তার, নার্সের এক প্রতিনিধি এবং জনগণের একজন করে প্রতিনিধি থাকবেন।