রোগ নিরাময়ে প্রধান ওষুধ চিকিৎসকের উপর বিশ্বাস

সব্যসাচী চক্রবর্তী 
দ্রুত পাল্টাচ্ছে গোটা পৃথিবী, মানুষ, জীবনযাত্রা৷ উন্নত থেকে উন্নতর হচ্ছে মানুষের জীবনধারণের পদ্ধতি৷ সেই উন্নতির অসাধারণ ছোঁয়া দেখা দিয়েছে স্বাস্থ্যে৷ নিত্য নতুন আবিষ্কার যেকোন মারণ রোগকেও হার মানাতে বাধ্য করছে৷ তবে একথাও অস্বীকার করা যায় না, বিজ্ঞান যত এগোচ্ছে ততই এগোচ্ছে নানান ধরণের অসুখ, সমস্যাও৷ আজ পরিস্থিতি এমন যে এমন মানুষ মেলা ভার যাকে কোন না কোন সমস্যায় মাসে একবার হলেও চিকিৎসকের শরাণাপন্ন হতে হয় না৷ আর তাতেই খরচ হয় একটা মোটা অঙ্ক৷ সেই দিক থেকে দেখলে চিকিৎসা পদ্ধতি এখন অনেকের কাছেই সেবা কম ব্যবসা বেশি৷ তবে একথা অস্বীকার করা যায় না এখনও এমন বহু চিকিৎসক আছেন যাদের কাছে চিকিৎসা মানব সেবাই৷

এরকম চিকিৎসকের কাছে যখন একজন রোগী কোনও চিকিৎসকরে কাছে যান সে তাঁর সমস্যা লঘু হোক বা গুরু, আশ্বাস বা কথাতেই যেন অর্ধেক অসুখ সেরে ওঠে৷ রোগী বিশ্বাস করে এই চিকিৎসকই পারেন তার রোগটি সারাতে৷ আর এইখানেই একজন চিকিৎসকের জয়৷ আজকের লেখায় আমরা এমনই একজন চিকিৎসকের সঙ্গে আলাপচারিতা সারাব যিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ‘রোগ নিরাময়ের প্রধান ওষুধ চিকিৎসকরে ওপর বিশ্বাস’৷ তিনি চিকিৎসক শুভাশিস গাঙ্গুলি (জেনারেল ফিজিসিয়ান, এমডি)৷

সাম্প্রতিক সময়ে আগের থেকে অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সুগারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা৷ পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রেসার, কোলেস্টেরল, থাইরয়েড, হাইপার টেনশনের মতো রোগও৷ অনিয়ন্ত্রিত সুগার ধীরে ধীরে নিজেদের অজান্তেই আমাদের ঠেলে দিচ্ছে মৃতু্য মুখে৷ চোখ থেকে শুরু করে কিডনি, নষ্ট হচ্ছে ক্রমশ৷ যার জন্য মানুষের জীবনযাপনের ধরনকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা৷ বলছেন ভয় নয়, বরং রোগ সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা থাকলেই হাতের মুঠোয় আসবে সুগার, প্রেসারের মতো রোগ৷ চিকিৎসক শুভাশিস গাঙ্গুলি বলছেন, রোগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে খাদ্যাভাসের পাশাপাশি নজর দিতে হবে দৈনন্দিন জীবনযাপনের দিকেও৷ একই সঙ্গে সুগার আক্রান্ত রোগীদের জন্য দিলেন টিপসও—


আহাওয়ার পরিবর্তন ডায়াবেটিকদের জন্য কতটা মারাত্মক?
ব্লাড সুগার বর্তমানে খুবই সাধারণ একটি রোগে পরিণত হয়েছে৷ যাদের ব্লাড সুগার রয়েছে, তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম থাকে৷ তবে যাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকে তাদের খুব একটা সমস্যা হয় না বা হওয়ার কথাও নয়৷ তবে যাদের সুগার নিয়ন্ত্রণে নেই, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা আসতে পারে৷ কারণ বর্তমানে প্রাক বর্ষার বৃষ্টি শুরু হয়েছে৷ তাতে সকালের আবহাওয়া গরম আবার রাতের আবহাওয়া ঠান্ডা৷ এরফলে আমাদের শরীরের ভিতরের নানান রাসায়নিক বিক্রিয়া শুরু হতে শুরু করে৷ যার প্রভাব পড়ে আমাদের শরীরের মধ্যে যে সমস্ত ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াগুলি আছে তাদের ওপর, সেগুলি আক্রমণ করতে শুরু করে৷ সে ক্ষেত্রে শরীরে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন, অ্যালার্জেটিক রিয়্যাকশন হতে পারে৷

সুগার কি জিনগত?
মধুমেহ বা সুগার সাধারণত জিনগত৷ তবে এর প্রকার রয়েছে টাইপ-১ এবং টাইপ-২৷ আমাদের প্রত্যেকের শরীরেই ইনসুলিন হরমোন আছে৷ তবে টাইপ-২ সাধারণত জিনগত৷ ভবিষ্যতে হতেও পারে আবার নাও হতে পারে৷ আবার অনেক সময় একটা প্রজন্ম বাদ দিয়েও হতে পারে৷ এই টাইপ-২ এর ক্ষেত্রে আমাদের দৈনন্দিন জীবন অনেকখানি যুক্ত৷ যদি নিয়ম মেনে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায় তাহলে সুগার নাও হতে পারে৷ অন্যদিকে মানসিক এবং শারীরিক চাপও ব্লাড সুগার হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ৷

সচেতনতা
যে কোনও রোগের মতো সুগার রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রথমেই প্রয়োজন রোগ সম্পর্কে রোগীর একটা সম্মুখ ধারণা৷ বর্তমানে বেশির ভাগ মানুষই গুগল ঘেঁটে নিজের চিকিৎসা নিজেরাই করে নেন৷ যা প্রাণঘাতীও হতে পারে৷ তাই রোগ নিরাময়ে প্রথমেই দরকার রোগ সম্পর্কে উপযুক্ত জ্ঞান৷ একজন চিকিৎসক কতটা ওষুধ দেবেন, রোগীর শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কত, তা একজন চিকিৎসক বুঝেই ওষুধ দেন৷ তাই প্রথমেই চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি৷ একই সঙ্গে চিকিৎসকের উপর ভরসা রাখতে হবে রোগীকে৷

নিয়ন্ত্রণ
সুগার নিয়ন্ত্রণের প্রথম দাওয়াই হল রোগের কারণ খুঁজে বের করা৷ ঠিক কী কারণে সুগার বাসা বেঁধেছে তা আগে জানতে হবে৷ অনেক সময় দেখা যায়, রোগী অনিয়মিত জীবনযাপন করেছে বা অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া-দাওয়া করেছে কিংবা প্রচুর পরিমাণে মিষ্টি খেয়েছে, সে ক্ষেত্রেও সুগার বেড়ে যাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে৷ তাই প্রথমেই রোগীকে কড়া ডোজের ওষুধ দিলে চলবে না৷ তা ছাড়া রোগীকেও নিজের শরীর বুঝে চলতে হবে৷ চিকিৎসকরা বাদে শুধুমাত্র একজন রোগীই বুঝতে পারেন তার শরীর কতখানি প্রতিরোধ করতে পারবে৷

চিকিৎক না দেখিয়ে ওষুধ বন্ধ একদম নয়
ডা. গাঙ্গুলির মতে রোগীকে কতদিন পর্যন্ত ওষুধ খেতে হবে সেটা একমাত্র চিকিৎসকই বুঝবেন৷ যদি রোগ সেরে যায় তাহলে ওষুধ বন্ধ করার একটা পদ্ধতি রয়েছে৷ যেটা শুধু মাত্র চিকিৎসকরাই বুঝবেন৷ তাই চিকিৎসক না দেখিয়ে ওষুধ বন্ধ করে দেওয়া একেবারেই উচিত নয়৷ এতে বিপদ বাড়তে পারে৷

খাওয়ার পরেই বিছানা নয়
অনেক সুগার রোগী বলেন তাদের কোষ্ঠকাঠিণ্যের একটা সমস্যা থাকে৷ যার প্রধান কারণ হল, খাওয়ার পরেই শুয়ে পড়া৷ আমাদের শরীরে যে অন্ত্র রয়েছে তাদের অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, রক্ত সঞ্চালন প্রয়োজন হয়৷ তাই খাওয়ার পরে কিছুক্ষণ বসে থাকতে হবে৷ তবে খাদ্যভাসও এরজন্য অনেকাংশে দায়ী৷ যদি প্রতিদিন বাইরের তৈলাক্ত খাবার খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের ওজন বাড়বে৷ প্রেসার সুগার সবই বাড়তে শুরু করবে৷ ধীরে ধীরে কোষ্ঠকাঠিণ্যের মতো সমস্যা আসবে৷ তবে রোগ হয়েছে বলেই যে সব সময় বাড়ির খাবার খেতে হবে, তা নয়৷ মাঝে মধ্যে বাইরের খাবারও খাওয়া যেতে পারে৷ সেক্ষেত্রে খাবার খেতে হবে হাতে সময় নিয়ে৷