• facebook
  • twitter
Wednesday, 8 January, 2025

শিশুদের ডিপ্রেশন বাড়ছে

অবসাদের কারণ কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে আলাদা হয়। তবে ছোটোদের মুড খুব ঘনঘন বদলায়। ফলে মুড অফ মানেই ডিগ্রেশন না-ও হতে পারে।

শিশু মনেও যে অবসাদ শিকড় ছড়াতে পারে এ ধারণা সচরাচর কারও মনেই আসে না। অবসাদ বলতেই আমাদের বড়োদের কথাই আগে মনে হয়। অথচ জানা দরকার যে, বড়োদের মতো বাচ্চারাও কিন্তু অবসাদের শিকার হতে পারে।

অবসাদের কারণ কিন্তু ক্ষেত্রবিশেষে আলাদা হয়। তবে ছোটোদের মুড খুব ঘনঘন বদলায়। ফলে মুড অফ মানেই ডিগ্রেশন না-ও হতে পারে। বহুদিন ধরে শিশুটির ঝিমিয়ে থাকা বা খিটখিটে হয়ে ওঠার নেপথ্যে অবসাদ না-ও থাকতে পারে। কিন্তু বচ্চা যদি সবসময় উদাস হয়ে থাকে, কারওর সঙ্গে মিশতে বা কথা বলতে না চায়, তার খিদে এবং ঘুমের ওপর এর প্রভাব পড়া শুরু হয়- তাহলে অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে। তাদের নিশ্চিত হতে হবে যে, তাদের সন্তান অবসাদের শিকার হয়ে পড়েনি তো? সন্তানদের ব্যাপারে মা-বাবাকে সচেতন থাকতে হবে এবং জানতে হবে কী কী কারণে ডিপ্রেশন হয়, কী তার লক্ষণ।

অবসাদের কারণ

অনেক বাচ্চা স্কুলে সহপাঠীদের কিংবা বড়োদের পীড়নের শিকার হয়। সেই উৎপীড়ন কখনও কখনও মাত্রাতিরিক্ত হয়ে যেতে পারে শিশুটির ক্ষেত্রে। তখনও তার অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। স্কুলে অথবা যে-কোনও পাবলিক প্লেস-এ বাচ্চা যদি প্রতিনিয়ত বুলি হতে থাকে, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস তলানিতে এসে ঠেকে। তাকে অবসাদ গ্রাস করে। অনেক বাবা-মা অকারণে সব সময় বাচ্চাকে মানসিক চাপ দিতে থাকেন। সেক্ষেত্রেও আশাপূরণ না করতে পেরে বাচ্চার মধ্যে অবসাদ জন্মাতে পারে।

এছাড়াও অবসাদের বংশগত কারণ থাকতে পারে। যে-শিশুর পরিবারে কোনও সদস্যের অবসাদগ্রস্ত হওয়ার ইতিহাস আছে, তাদের তুলনামূলকভাবে রোগের শিকার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে পরিবারে কারও ডিগ্রেশন-এর ইতিহাস না থাকলে, শিশু কোনও দিনই ডিপ্রেশনের শিকার হবে না- এমন ধারণা রাখাও তুল। যদি অভিভাবকের মনে হয় সন্তানের মধ্যে অবসাদের লক্ষণ দেখা দিচ্ছে তাহলে, তার কার্যকলাপ, মানসিকতা এবং ব্যবহারের উপর নজর রাখতে হবে।

বয়স্কদের মতোই বাচ্চরাও চট করে কোনও পরিবর্তন স্বীকার করে নিতে পারে না। নতুন বাড়ি বা নতুন স্কুলে যাওয়া, মা-বাবার মধ্যে ঝগড়া বা বিচ্ছেদ দেখলে, ভাই-বোনের থেকে আলাদা হয়ে পড়লে, দাদু-ঠাকুমার স্নেহছায়া থেকে দূরে যেতে হলে, বাচ্চার মস্তিষ্কে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে।

যদি মনে হয় আপনার সন্তান এর ফলে প্রভাবিত হয়ে পড়ছে, তাহলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই ব্যাপারে আপনাকে ব্যবস্থা নিতে হবে। সন্তানের সঙ্গে কথা বলুন। যদি কোনও দুর্ঘটনার পর বাচ্চার ব্যবহারে কোনও পরিবর্তন লক্ষ্য করেন, তাহলে তৎক্ষণাৎ কোনও মনোবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। সন্তানের মধ্যে অবসাদের লক্ষণগুলি ফুটে উঠছে কিনা সেটা দেখার জন্য কিছুদিন ওকে অবজার্ভেশনে রাখা প্রযোজন। চিকিৎসকের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দিন

কোনও কোনও বাচ্চার শরীরে রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার কারণে, সেই বাচ্চা অবসাদের শিকার হয়ে পড়ে। বাচ্চার বাড়ন্ত বয়সে, হরমোনাল পরিবর্তন খুব স্বাভাবিক ঘটনা। এর কারণেও অনেক সময় রসায়নের ভারসাম্য নষ্ট হয় শরীরে। অপুষ্টি এবং শারীরিক গতিবিধি কম হওয়ার ফলেও এই সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। বাচ্চার সঠিক বিকাশ হচ্ছে কিনা পরীক্ষা করতে, বাচ্চার রেগুলার চেক-আপ করান। এর ফলে অবসাদের হাত থেকে বাচ্চাকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।

অবসাদের লক্ষণ

* খিটখিটে হয়ে ওঠা, কথায় কথায় রেগে যাওয়া

* সবসময় বিষণ্ণ হয়ে থাকা

* বাইরের জগৎ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া

* কথাবার্তা, মেলামেশা বন্ধ করে দেওয়া

* অপরের কাছে স্বীকৃতি না পাওয়ার কারণে গুমরে থাকা

* খিদে, ঘুম অনিয়মিত হয়ে পড়া এবং এগুলির ঘাটতি

* কথায় কথায় কেঁদে ফেলা

* মনোযোগের অভাব

* এনার্জির অভাব এবং ক্লান্তি

* কোনও কারণ ছাড়াই পেটব্যথা এবং মাথাব্যথা

* যে-কোনও কাজ করার অনিচ্ছা প্রকাশ

* মনের মধ্যে অপরাধবোধ জন্ম নেওয়া

* আত্মহত্যার মতো মারাত্মক প্রবণতা তৈরি হওয়া।

বাচ্চার মধ্যে এর যে-কোনও একটি লক্ষণ দেখলেই, দ্রুত অভিভাবকদের সাবধান হতে হবে। ডাক্তারের সঙ্গে তৎক্ষণাৎ পরামর্শ করে নিয়ে, প্রয়োজনীয় চিকিৎসার রাস্তা বেছে নিতে হবে। মনে রাখবেন বাচ্চা যাতে অবসাদের শিকার হয়ে না পড়ে, তার জন্য শিশুকে সময় দেওয়া এবং নানা জিনিসে তাকে যুক্ত রাখার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই নিতে হবে।