বিলম্বিত করুন বার্ধক্য

কথায় বলে ৪০ পেরোলেই চালসে। এরপরই দেখা দিতে থাকে নানান সমস্যা। অল্প পরিশ্রমেই হাঁপিয়ে পড়া, ঝুলে যাওয়া ত্বক, চুলের রং পরিবর্তন, পেটের নানান সমস্যা, চলাফেরায় সমস্যা- সবই বয়স বাড়ার ইঙ্গিত দেয়। যদিও বহু মানুষ আছেন যারা ৫০ পার করেও যৌবন ধরে রাখতে পারেন। তবে বেশিরভাগ মানুষই কিন্তু এই বয়েসের কবল থেকে বেরোতে পারেন না। সেই তত্ত্বেই সিলমোহর দিয়েছে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গবেষণাও। যেখানে দেখা গেছে, মানুষের জীবনে ৪৪ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে বিশেষভাবে বার্ধক্যের ধাক্কা অনুভূত হয়। স্টানফোর্ড ইউনিভার্সিটি এবং নানইয়াং টেকনোলজিকাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীদের দ্বারা পরিচালিত এই গবেষণায়, ১০৮ জন ব্যক্তির আরএনএ, প্রোটিন, এবং মাইক্রোবায়োম পরিবর্তনের বিশ্লেষণ করা হয়।

এই গবেষণার জন্য ২৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সি বিভিন্ন ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। যেখানে নারীদের ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্ন ফলাফল পাওয়া গেছে। বলা হচ্ছে মেনোপজের সঙ্গে বার্ধক্য প্রক্রিয়া জড়িত থাকে, যা সাধারণত ৪৫ থেকে ৫৫ বছর বয়সে ঘটে।

গবেষণায় দেখা যায়, মানুষের বার্ধক্য একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া নয়। বরং ৪৪ বছর এবং ৬০ বছর বয়সে দেহে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ঘটে। বিশেষত, ক্যাফিন এবং অ্যালকোহল হজম করার ক্ষমতা ৪০ বছরের পর থেকে কমতে শুরু করে এবং ৬০ বছর বয়সে তা আরও তীব্র আকার ধারণ করে। এগুলি শরীরে জমা হতে থাকে এবং প্রভাবিত হয় হৃদপিণ্ড, ত্বক, চুল ও হাড়।


গবেষণার সহকারী অধ্যাপক জিয়াওতাও শেন, স্টানফোর্ডের প্রফেসর মাইকেল স্নাইডারের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘এই দুটি বয়সে মাংসপেশি ধরে রাখার প্রোটিনে পরিবর্তন আসে, যা ত্বক, হৃদপিণ্ড, এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপর প্রভাব ফেলে।’

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, ৬০ বছর বয়সের পর থেকে বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে, হৃদরোগ, কিডনি জটিলতা, এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিস। গবেষকরা বলছেন, এসব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রতিরোধ ক্ষমতা চিহ্নিত করা সম্ভব হলে রোগ নির্ণয় ও প্রতিরোধে নতুন পথ উন্মোচিত হবে, যা স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় বিপ্লব ঘটাতে পারে।

এই বিষয়ে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ তথা এমডি ডা. কৌশিক কুমার দাস জানালেন, ‘বয়সের সব থেকে বেশি প্রভাব পড়ে হৃদয়ে। ক্যাফিন, অ্যালকোহল এবং কোলেস্টেরল-যুক্ত খাবার আমাদের হৃদয়ে ধীরে-ধীরে একটা স্তরের মতো আবরণ সৃষ্টি করে- যার ফলে হার্ট ব্লকেজ, মাংসপেশির শিথিলতা ঘটে। তাই ৪০ আসার আগেই খাবারে পরিবর্তন আনুন, ব্যায়াম করুন।’

জীবনধারায় পরিবর্তন এনে বার্ধক্যের এই ধাক্কা কিছুটা কমানো সম্ভব। বিশেষ করে, অ্যালকোহল পরিহার এবং নিয়মিত ব্যায়াম এই প্রক্রিয়ায় সহায়ক হতে পারে।