নিজস্ব সংবাদদাতা, শিলিগুড়ি, ৩১ মার্চ— সংসারে এতোই অভাব ছিল যে তাঁর বাবার মৃতু্যর পর তাঁর মা-কে ঘুঁটে বিক্রি করতে হয়েছে৷ আর তিনি অষ্টম শ্রেনীতে পড়ার সময়ই অষ্টম শ্রেনীর ছাত্র পড়িয়েছেন৷ আর কাজে বেরিয়ে এর বাড়ি তার বাড়ি গিয়ে রান্নার গ্যাসের পাইপ বিক্রি করতেন৷ সবসময় পরিশ্রম করতে হোত৷ পরিবারে তিনি ছিলেন বড় ভাই৷ উদ্দেশ্য ছিল, পরিবারের অভাব দূর করা৷ মা এর ঘুঁটে বিক্রির কষ্ট লাঘব করা৷ ফলে লড়াই আর লড়াই৷ লড়াই চলতে চলতেই একদিন তিনি লক্ষ্য করেন, এক জায়গায় চিকিৎসা সংক্রান্ত উপকরণ তৈরি হচ্ছে৷ সেই দেখা মাত্র তাঁর মাথায় ঘুরপাক খায়, তিনিও এভাবে চিকিৎসার উপকরণ তৈরি করবেন৷ প্রথম প্রথম বাইরে থেকে চিকিৎসা উপকরণ কিনে এনে বিক্রি করছিলেন৷ আর সেই চলতে চলতেই তিনি একদিন কারখানা খুলে বসেন৷ ২০০৬ সালে যাত্রা শুরু৷ আজ বাংলা থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত, এমনকি বিদেশেও তাঁর এস আই সার্জিক্যাল গ্রুপ অফ কোম্পানিজের শাখা ছড়িয়ে পড়েছে৷ এখন তাদের পাঁচটি বড় শিল্প কারখানা রয়েছে৷ আর চারটে চিকিৎসা উপকরণ এর শো রুম রয়েছে৷ প্রত্যক্ষভাবে ৮০০ জন কর্মী নির্ভর করে রয়েছে এই কোম্পানির ওপর৷
এই এস আই সার্জিক্যাল এখন শিলিগুড়িতে পা রাখছে৷ শীঘ্রই শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ফুলবাড়িতে তাদের চিকিৎসা উপকরণ মল তৈরি হচ্ছে, তার সঙ্গে চিকিৎসা উপকরণ তৈরির কারখানা তৈরি হচ্ছে৷ এসব সম্পূর্ণ হলে তা উত্তর পূর্ব ভারতে এক নতুন পরিবেশ তৈরি করবে৷ পলিসি টাইমসের বিশিষ্ট সাংবাদিক আক্রাম হক এই কোম্পানিকে শিলিগুড়ি নিয়ে আসার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন৷ শিলিগুড়িতে বহু নার্সিং হোম তৈরি হচ্ছে৷ কিন্ত্ত নার্সিং হোমগুলো চলবে কি করে যদি চিকিৎসা উপকরণ শিলিগুড়িতে তৈরি না হয়৷ সেই ভাবনা থেকে প্রতিভাবান বাঙালি শিল্পপতি সঞ্জয় মুখার্জি এস আই সার্জিক্যাল এর কারখানা শিলিগুড়ির পাশে ফুলবাড়িতে শুরু করতে চলেছেন৷ আজ বাংলাতো বটেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরি, মেডিকেল কলেজ তৈরির পরিকাঠামো তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছেন সঞ্জয়বাবু৷ অপারেশন থিয়েটার তৈরি থেকে শুরু করে চিকিৎসা তৈরির বিভিন্ন সামগ্রী যেমন রোগীর বেড, গ্যাস পাইপলাইন, ওটি টেবিল সহ আরও বিভিন্ন চিকিৎসা উপকরণ তৈরি করে আলোড়ন ফেলে দিয়েছেন সঞ্জয়বাবু৷ বহু চিকিৎসক আজ বেসরকারি হাসপাতালের পরিকাঠামো তৈরির জন্য সঞ্জয়বাবুর সাহায্য চাইছেন যা এক বিরাট দৃষ্টান্ত৷
যাঁর মা একসময় ঘুঁটে বিক্রি করে পুত্র সন্তানকে বড় করার জন্য সংগ্রাম করেছেন সেই পুত্র সন্তানের হাতে আজ বড় বড় নার্সিং হোম এবং মেডিকেল কলেজ তৈরি হচ্ছে৷ সেই প্রতিভাবান শিল্প পতি আজ কিন্ত্ত বাংলার শিল্পপতিদের মধ্যে একজন গর্বের শিল্পপতি৷ হাওড়ার ডোমজুড়ে তাঁর কিছু কারখানা রয়েছে৷ তৈরি হচ্ছে আরও কারখানা৷ জন্ম নদীয়ার শান্তিপুরে হলেও তাঁর লেখাপড়া, বড় হয়ে ওঠা সব হাওড়াতে৷ হাওড়াতেই তাঁর কোম্পানির প্রধান কার্যালয়৷