• facebook
  • twitter
Saturday, 20 December, 2025

নিরাময়েও মুনাফা

আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের যা আয়, তাতে সংসার চালানোই ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগও দেয় না সরকার।

 

আমাদের দেশের সংখ্যাগুরু গরিব ও মধ্যবিত্ত মানুষের যা আয়, তাতে সংসার চালানোই ক্রমশ দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। আবার সকলকে বিনামূল্যে চিকিৎসার সুযোগও দেয় না সরকার। সরকারি হাসপাতালে কিছু চিকিৎসা পরিষেবা মিললেও তা পর্যাপ্ত নয়। বেশির ভাগ ওষুধই রোগীর পরিবারকে বাইরে থেকে কিনতে হয়। সেসব অবশ্যই আগুন দামে। এরই মধ্যে দুঃসংবাদ— বহু জরুরি ওষুধের দাম এক ধাক্কায়, ৫০ শতাংশ বাড়তে চলেছে। আটটি ওষুধের ১১টি ফর্মুলেশনের সর্বোচ্চ দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধির দাবিতে সিলমোহর দিয়েছে ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি (এনপিপিএ)। এই কেন্দ্রীয় সংস্থা ওষুধের দামবৃদ্ধির অনুমোদন দিয়ে থাকে।

Advertisement

দাম বেড়েছে ওষুধ তৈরির কাঁচামালের। তাই অ্যাজমা, গ্লকোমা, থ্যালাসেমিয়া, যক্ষ্মা ও মানসিক অসুস্থতার ওষুধ সহ আটটি অবশ্য প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম অন্তত ৫০ শতাংশ বা তারও বেশি বৃদ্ধিতে অনুমোদন দিল কেন্দ্র। ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল প্রাইসিং অথরিটি বা এনপিপিএ’র তরফে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, বাজার থেকে যাতে এই ওষুধগুলি উধাও না হয়ে যায়, তাই এই সিদ্ধান্ত।

Advertisement

ওষুধ তৈরির কাঁচামালের দাম অত্যন্ত বৃদ্ধি পাওয়ায় ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি নিয়মিত অনুরোধ জানাচ্ছিল দাম বাড়ানোর। পাশাপাশি বিনিময় মূল্যের বৃদ্ধি (এক্সচেঞ্জ রেট), ওষুধ তৈরির খরচ বৃদ্ধি (প্রোডাকশন কস্ট) সহ বহু কারণও দেখানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। এনপিপিএ’র দাবি, খরচ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় ওষুধগুলি তৈরিতে সমস্যা হচ্ছিল। ওই আটটি ওষুধ যাতে বাজারে সবসময় পাওয়া যায়, সেই বৃহত্তর স্বার্থের কথা ভেবে দাম বাড়ানো হয়েছে। এইভাবে এক ধাক্কায় ৫০ শতাংশ দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের কথা মোদী সরকার ভাবেনি।

প্রসঙ্গত, ওষুধের দাম নিয়ন্ত্রণের জন্য দেশে দু’রকম ওষুধের তালিকা রয়েছে। এগুলি হল প্রয়োজনীয় ওষুধ তথা সিডিউলড ড্রাগস ও নন-সিডিউলড ড্রাগস। সরকার থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম বেঁধে দেওয়া হয় প্রতি বছর। এই ওষুধগুলির দামের অবস্থানে নির্ভর করে মূলত পাইকারি মূল্যের উপর। বর্তমানে প্রয়োজনীয় ওষুধের তালিকায় রয়েছে ৩৮৪টি ওষুধ।

অন্যদিকে, ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলি প্রতি বছর নন-সিডিউলড ড্রাগের দাম বৃদ্ধির জন্য আবেদন করতে পারে। তবে কোনও অবস্থাতেই সেই মূল্য ১০ শতাংশের বেশি বাড়তে পারে না।

এর আগে ২০১৯ ও ২০২১ সালে ৯টি ফর্মুলার ওষুধের দাম ৫০ শতাংশ বেড়েছিল। গত এপ্রিলে, মাত্র ছ’মাস আগেও একসঙ্গে ৮০০টি ওষুধের দাম বৃদ্ধির অনুমতি দিয়েছিল মোদী সরকার। এত কম সময়ের ব্যবধানে নাগরিকদের ওপর এই বিপুল ব্যয়ভার চাপিয়ে দেওয়া কোনও কল্যাণকামী সরকারের কাজ হতে পারে না। সরকারের এই জনবিরোধী ভূমিকার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া প্রয়োজন। শুধু ওষুধ নয়, আরও নানা ক্ষেত্রে এই সরকার একতরফা ও ধারাবাহিকভাবে পুঁজিপতিদের পাশে দাঁড়াচ্ছে। এ দৃষ্টান্ত একেবারে বেনজির। শাসক দলের সাংসদ-বিধায়করা যে এর বিরুদ্ধে মুখ খুলবেন না, এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিও এই বিষয়ে প্রয়োজনমতো কোনও আন্দোলন গড়ে তুলছে না। নানা অজুহাতে ওষুধের মতো জীবনদায়ী জিনিসের দামবৃদ্ধির দাবি কখনওই মেনে নেওয়া উচিত নয়। সরকার যদি ওষুধ কোম্পানিগুলির অন্যায্য দাবিগুলিকে মেনে নিতে থাকে, তাহলে বুঝে নিতে হবে, গরিব-মধ্যবিত্তদের জীবনের দাম সরকারের কাছে তুচ্ছ। মোদী-শাহ সরকার ব্যবসায়ীদের স্বার্থ দেখতেই ব্যস্ত।

Advertisement