২০২৪-এ মোদির বৈতরণী পার করাতে যোগীর নয়া অস্ত্র, ৪৩ বছর আগের দাঙ্গার রিপোর্ট

Uttar Pradesh Chief Minister Yogi Adityanath.

লখনউ, ১২ আগস্ট– ভারত ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ হলেও এখানে ধর্ম নিয়ে সব থেকে বেশি হানা-হানি হয়। ধর্ম, জাত-পাতের রাজনীতি করতে পিছপা হননা রাজনৈতিক দলগুলি। বিশেষ করে ভোট আসতেই শুরু হয়ে যায় ধর্মের রাজনীতি। আসন্ন লোকসভা ভোটেও  সেই ধারা বজায় রাখছে দিল্লির শাসক। বর্তমানে বিজেপির কাছে রাম মন্দির ইস্যু তো আছেই, তার সঙ্গেই হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ অস্ত্রে শান দিতে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ আরেক অস্ত্র বের করতে চলেছেন। ৪১ বছর আগের মোরাদাবাদ দাঙ্গার বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করতে চলেছেন তিনি। আগামী মঙ্গলবার এই রিপোর্ট পেশ করার কথা জানাজানি হতেই রাজ্য-রাজনীতি তেঁতে উঠেছে। সমাজবাদী পার্টি সহ একাধিক বিরোধী দলের বক্তব্য, ওই রিপোর্ট প্রকাশ্যে এলে ধর্মীয় বিদ্বেষ আরও প্রবলভাবে মাথাচাড়া দেবে। যদিও রিপোর্টের বক্তব্য নেতাদের মুখে মুখে ঘুরছে।

১৯৮৩ সালে মোরাদাবাদ ইদগা ময়দানের জমায়েতকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল উত্তর প্রদেশের ওই জেলাটিতে। শতাধিক মানুষ নিহত হয়। আহত হয় কয়েক হাজার। অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। রাজ্যে তখন কংগ্রেসের বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহের সরকার ক্ষমতায়। পরবর্তীকালে বিশ্বনাথপ্রতাপ কংগ্রেসের সঙ্গ ছেড়ে অন্য বিরোধী দলগুলির সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী হন। মোরাদাবাদের দাঙ্গা থামাতে মুখ্যমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সেনা তলব করেছিলেন। দাঙ্গার কারণ অনুসন্ধানে এলাহাবাদ হাই কোর্টের বিচারপতি এমপি সাক্সেনার নেতৃত্বে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে সরকার। তিন বছরের মাথায় কমিশন রিপোর্ট পেশ করে। কিন্তু বিগত ৪৩ বছরে পরবর্তী কোনও রাজ্য সরকার রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করেনি।

শুধু কংগ্রেস সরকারই নয়, ঘটনার দশ বছরের মাথায় উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হন বিজেপির কল্যাণ সিং। বেশ কিছুদিন মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহও। এছাড়া মুলায়ম সিং যাদব, মায়াবতী, অখিলেশ সিং যাদব এবং যোদী আদিত্যনাথও তাঁর প্রথম পাঁচ বছরের কার্যকালে ওই রিপোর্ট নিয়ে কোনওরকম উচ্চবাচ্য করেননি।


সম্প্রতি যোগী ঘোষণা করেছেন সরকার আগামী মঙ্গলবার ওই রিপোর্ট বিধানসভায় পেশ করবে। কিন্তু হঠাৎ ৪৩ বছর পর কেন এই রিপোর্ট তাই নিয়ে সরগরম সবকটি রাজনৈতিক দল।

সরকারি মহলের দাবি, কংগ্রেস সরকার দাঙ্গার দায় চাপিয়েছিল আরএসএস, বিজেপি, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের উপর। কিন্তু বিচার বিভাগীয় তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়েছে, দাঙ্গায় এই সংগঠন বা দলের কোনও সম্পর্ক ছিল না। দাঙ্গার জন্য মুসলিম সম্প্রদায় এবং প্রশাসনকে দায়ী করা হয়েছে বলেও পদ্ম শিবিরের দাবি।

বিরোধীদের অভিযোগ, প্রধানমন্ত্রী মোদির মুখ চেয়ে যোগী এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি যদি সত্যিই ন্যায় বিচারের উদ্দেশে রিপোর্টটি প্রকাশ করতে চাইতেন তাহলে প্রথমবার মুখ্যমন্ত্রী হয়েই তা করতেন। আসলে আগামী জানুয়ারিতে অযোধ্যায় নতুন রাম মন্দিরের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । কিন্তু বিজেপি মনে করছে, রাম মন্দিরের রাজনৈতিক ধার-ভার দিয়ে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের বৈতরণী পেরনো সহজ হবে না। তাই নতুন ইস্যু খুঁজছে পদ্ম শিবির। মোরাদাবাদ দাঙ্গার রিপোর্ট প্রকাশ্যে আনা গেলে ধর্মীয় মেরুকরণ সহজ হবে।