• facebook
  • twitter
Saturday, 23 November, 2024

বিশ্বশ্রেষ্ঠ বৌদ্ধ মন্দির বােরােবােদুর

বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দিরটি রয়েছে মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। সঠিকভাবে বললে জাভার কেন্দ্রস্থল যােগ জাকার্তার বােরােববাদুরে।

বৌদ্ধ মন্দির বােরােবােদুর (Photo: Wikimedia Commons)

বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দিরটি রয়েছে মুসলিম প্রধান দেশ ইন্দোনেশিয়ায়। সঠিকভাবে বললে জাভার কেন্দ্রস্থল যােগ জাকার্তার বােরােববাদুরে। দীর্ঘদিনের ইচ্ছে সেই মন্দির দেখার। তা সেই যােগ-জাকার্তার যাবার সুযােগ এসে গেল একদিন।

ইন্দোনেশিয়ায় এক দ্বীপ তথা শহর থেকে আরেক দ্বীপ যাবার জন্য ছােট ছােট বিমানের সুবিধা রয়েছে। বালি, জাকার্তা, লাবুয়ান বাজো প্রভৃতি শহরের সঙ্গে ভালাে যােগাযােগ রয়েছে। বিমানে বালি থেকে যােগ-জাকার্তা সােয়া এক ঘণ্টার পথ।

যােগ-জাকার্তায় থাকার ব্যবস্থাও ভালাে। আমরা মূল শহরে থেকেই যাব বােরােববাদুর বুদ্ধ মন্দির। প্রায় ঘন্টা খানেকের রাস্তা। এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখি বােরােবােদুরে শুধু যে বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দিরের দর্শন মিলবে তা নয়, দেশ-বিদেশের পর্যটকরা ভিড় করেন এখান থেকে রােমাঞ্চে ভরা সূর্যোদয় দেখতে।

সাধারণত ভাের চারটেতে পর্যটকরা ঢুকে পড়েন বিশাল মন্দির চত্বরে। শুধু মন্দিরের আয়তন ২৫২০ বর্গ মিটার। চারিদিকে গাছগাছালি, বাগিচায় ভরা অত্যন্ত মনােরম এই জায়গা। অবাক হলেও সত্য অষ্টম-নবম শতাব্দীতে তৈরি এই বিশাল মন্দির কয়েক শতাব্দী মানুষের চোখের অন্তরালে ছিল।

পঞ্চদশ শতকের পর এই বিশাল নির্মাণ চলে যায় লােকচক্ষুর আড়ালে। সনামি, ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির দেশ ইন্দোনেশিয়া। সম্ভবত আগ্নেয়গিরির উত্তাপ বা ঝড়ে বা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে মানুষজন সব ছেড়ে চলে আসেন।

বােরােববাদুরে ছিল হিন্দু রাজা শৈলেন্দ্রের শাসন। বােরােবােদব কে উপত্যকায় অবস্থিত। শৈলেন্দ্রের বংশধর পঞ্চম থেকে দশম শতাব্দী পর্যন্ত রাজত্ব করেন। অনেকের মতে তিনি বৌদ্ধধর্মে ধর্মান্তরিত হন। আর সেই সময় তিনি এই বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দিরটি নির্মাণ করেন। সম্ভবত পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত এই মন্দির ব্যবহৃত হয়।

তারপর সেখান থেকে জনপদ সরে এলে অগোচরে থেকে যায় মন্দিরটি এবং তা উনবিংশ শতকে আবার নজরে আসে সবার এবং বিংশ শতাব্দীতে ইউনেস্কোর সহায়তায় সংস্কার করা হয়। পরে প্রেসিডেন্ট সুকর্ণের আমলে মন্দিরটি খুলে দেওয়া হয়।

বােরােববাদুর চত্বরে মােট তিনটি মন্দির রয়েছে। প্রথম ও মুখ্য বিশাল পিরামিড আকৃতির মন্দিরটি। এছাড়া পুর্বে রয়েছে দুটি ছােট মন্দির মেন্দুত ও পবন মন্দির। এই তিনটি মনুমেন্ট বৌদ্ধধর্মে নির্বাণ লাভের তিনটি অবস্থাকে সুচিত করেছে।

মূল মন্দিরটি সাততলা। নীচে চারটি থাক রয়েছে চতুষ্কোণ আকারে। ওপরের তিনটি গােলাকার। মন্দিরে বোদ্ধস্তূপের সংখ্যা বাহাত্তরটি। সবচেয়ে বড় এবং পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্তুপটি রয়েছে শীর্ষে। মন্দিরটি অনেকের মতে হিন্দু মন্দির হিসেবে স্থাপিত হচ্ছিল। রয়েছে গুপ্তযুগের শিল্পকলার ছাপ।

পরে তা বৌদ্ধদের হাতে চলে গেলে বােদ্ধ সংস্কৃতিতে নির্মিত হয় এই মন্দির। প্রতিটি প্যানেলে শিল্পের কাজ দেখে চমকে উঠতে হয়। দুঃখের বিষয় অনেক স্তুপের মাথাটি চুরি হয়ে গিয়েছে দেখলাম। পরে সংরক্ষণের ওপর জোর দেওয়া হয়।

পুরাে চত্বর ঘােরার জন্য রয়েছে ব্যাটারি চালিত গাড়ির ব্যবস্থা। ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণে আসা পর্যটকরা দ্বীপ, সমুদ্রের বেড়ানাের স্বাদ নিলেও বিশাল এই নির্মাণ দেখলে তাদের ইন্দোনেশিয়া ঢুর সম্পূর্ণ হয় না। তাই সাড়ে চার লাখ টাকার (ভারতীয় টাকায় প্রায় আড়াই হাজার) টিকিট কেটে পর্যটকরা ভাের সাড়ে তিনটে থেকে ঢুকে পড়েন মন্দির চত্বরে।

সূর্যোদয় দেখার বাড়তি রােমাঞ্চ লাভ করতে। এছাড়া বােরােবােদুর মন্দির দেখতে এসে যােগ-জাকার্তায় অবশ্যই এখনকার সুলতান বংশধরদের রাজপ্রাসাদ, প্রাবমানান মন্দির ও দুরের সমুদ্র বিচ ঘুরে নেন পর্যটকরা। সেগুলিরও পর্যটন-মূল্য কম নয়।

কীভাবে যাবেন : কলকাতার দমদম বিমানবন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, হংকং, ব্যাংকক হয়ে ডেনপাসার (বালি) বা জাকার্তা বা একটি স্টপেজ সহ যােগ-জাকার্তা। নইলে বালি থেকে বিমানে বা জাকার্তা থেকে ট্রেনে আসুন যােগ-জাকার্তায়। বিমান ভাড়া আসা-যাওয়া মিলে ত্রিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার ভারতীয় টাকা। যােগ-জাকার্তা কেন্দ্রীয় শহর থেকে বােরােবােদুর ঘণ্টাখানেকের পথ গাড়ি করে। 

কোথায় থাকবেন : অসংখ্যা হােটেল শহরে। নামি ট্যুর সংস্থার মাধ্যমে বুক করতেও পারেন। ভারতীয় চার-পাঁচ হাজার টাকায় থাকার উপযােগী হােটেল ভালাে পাওয়া যায়। খাওয়া-দাওয়া বেশির ভাগ হােটেলে পাওয়া যায়। চাল দিয়ে তৈরি মেসি গােরেং জনপ্রিয় খাবার।

কখন যাবেন : সারা বছরই যাওয়া যায়।

কি করবেন না : কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা মাথা গরম। পলি প্লাস্টিক ব্যবহার করবেন না।

সঙ্গে রাখুন : প্রয়ােজনীয় কাগজপত্র (ভিসা, হােটেল কনফার্মেশন বা প্লেনের টিকিট), ওষুধপত্র, ইন্দোনেশিয়ান রুপি অথবা ইউএস ডলার। একশাে ডলার সমান চোদ্দো লাখ ইন্দোনেশিয়ান রুপি।